দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ কিছুদিন আগে ডানলপে বন্ধ কারখানার মাঠে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, বাংলায় দেড়-দু’কোটি মানুষকে চাকরি দিয়েছে তাঁর সরকার।
মঙ্গলবার পাড়ায় জনসভা ছিল দিদির। সেই সভায় তিনি জানালেন, বাংলায় ক্ষুদ্র শিল্প ও মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে কয়েক কোটি চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। সেই সঙ্গে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে ক্ষুদ্র শিল্পে। তার ফলে বছরে আরও ৫ লক্ষ বেকারের চাকরি হবে। এছাড়া একশো দিনের কাজের পরিধি বাড়াবে তাঁর সরকার। তিনি আরও বলেন, “আমরা ডবল টিচার রিক্র্যুট করব, যাতে আরও অনেক শিক্ষক নিয়োগ হয়। আমরা চিকিৎসক নেব. আমরা প্যারা মেডিক্যাল স্টাফ নেব, নার্স নেব।”
সন্দেহ নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অঙ্গীকার আড়ে-বহরে বেশ বড়। এত বড় ভোট প্রতিশ্রুতি একুশের নির্বাচনের আগে কোনও রাজনৈতিক দলই দেয়নি। বিজেপি কেবল শিল্পায়ন ও আধুনিক পরিকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগের কথা বলেছে। সেই সঙ্গে সরকারি চাকরিতে মহিলাদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাছাড়া বিজেপির ইস্তেহারে এও বলা হয়েছে, বাংলায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগ যে ভূরিভূরি দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে তা নিরাময়ের ব্যবস্থা তারা করবে। সে জন্য কমন এলিজিবিলিটি টেস্ট স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হবে।
বাংলায় শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের অভাব নিয়ে সমাজ জীবনে আলোচনা গত আড়াই দশক ধরে চলছে। এ নিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের খিদে এবং ক্ষোভ দুটিই রয়েছে। বাংলায় শিক্ষিত ও দক্ষ যুবকের কাজের অভাবের কারণে রাজ্যের বাইরে কাজ খুঁজতে যেতে হয়েছে অনেককেই। সেদিক থেকে মমতার ঘোষণার একটা মাহাত্ম্য রয়েছে ঠিকই।
কিন্তু এহেন ঘোষণা মানুষের কাছে কতটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে সেই প্রশ্নটাও অবশ্যই রয়েছে। মমতার এসব দাবি নিয়ে নিরন্তর টিপ্পনি কেটে চলেছে কংগ্রেস, বাম ও বিজেপি। অধীর চৌধুরী-সুজন চক্রবর্তীদের বক্তব্য, তাঁরা হিসাব মেলাতে পারছেন না। বাংলার দশ কোটি জনসংখ্যা। তার মানে হিসাব মতো আড়াই কোটি পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে দেড়-দু’কোটি লোকের চাকরি হয়ে গেছে। মানে দেড়-দু’কোটি পরিবারের অন্তত একজন সদস্য চাকরি করেন। বাকি থাকে পঞ্চাশ লক্ষ পরিবার।
একশো দিনের কাজে ১ কোটির উপর শ্রম দিবস তৈরি হয়ে থাকলে সেখানেও কয়েক লক্ষ লোক কাজ করেছেন। এর পর আরও কয়েক কোটি লোককে চাকরি দিলে প্রতি পরিবারে দু’জন-তিন জন করে চাকরি পাবেন। তা হলে ব্যবসা করবেন কারা। আর একশ দিনের কাজই বা কারা করবে।
অধীর চৌধুরীর কথায়, “বড় প্রশ্ন হল, তা হলে তৃণমূলই বা কারা করবেন! কারণ তৃণমূল তো করে কম্মে খাওয়ার জন্যই বেশিরভাগ লোক করে।”