দেবন্বিতা চক্রবর্তী, দেশের সময়: প্রাচীন দেবদারু গাছের পাতা ছেড়ে না কেউ, বিশ্বাস মা আছেন । কত বছরের পুরনো পুজো, আজ আর তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই কারো কাছেই৷ তবে বহু লোকগাথা, গল্প জড়িয়ে আছে বনগাঁর ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের খলিতপুর গ্রামের নাও ভাঙ্গা নদীর পাশে সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের পুজো ঘিরে৷

সেই মতো নয় নয় করে তিনশ বছরের কম তো নয়-ই। মন্দিরের পুরোহিত অনিল চক্রবর্তী জানালেন সাত পুরুষ আগে তার বংশের একজন এখানে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চালু লোকগাথা, কয়েকশো বছর আগে এলাকায় এসেছিলেন একজন সাধু তার ইচ্ছে হয় কালী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করবেন, কিন্তু দেবী তাকে স্বপ্নে বলেন তুই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করবি না৷ যে করবে, সে এখানে আসবে ৷

পরে সাধুর প্রশ্ন ছিল কিভাবে চিনবেন সেই ব্যক্তি কে! দেবী বলেন সেই লোক নিজেই এসে জানাবেন৷ কিছুদিনের মধ্যেই এক ব্যক্তি এসে স্থানীয় মানুষকে বলেন তিনি এসেছেন যশোহর জেলা থেকে, কালীমাতা তাকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছেন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি ।

ওই বেক্তিই অনিল বাবুর পূর্বপুরুষ। তিনি আসার পর থেকে সাধু কে আর এই এলাকায় দেখা যায়নি৷ ওই ব্যক্তিই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে শুরু করেন কালীপুজো।

স্থানীয় ছয়ঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা পরিতোষ বিশ্বাস জানান ১৩৪০ বঙ্গাব্দের পয়লা কার্তিক মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ৷ জটিল একটি মামলায় জয়ী হলে, মা-কে মন্দির গড়ে দেবেন এই ছিল তার মানসিক৷ আগে ছোট্ট একটা কুঁড়ে ঘরে পূজো পেতেন দেবী।এলাকার বাসিন্দারা জানান, বছর পনেরো আগে মন্দির সংস্কারের কাজ করিয়েছেন।

এলাকার বাসিন্দা গনেশ হালদার জানালেন দেবীর উচ্চতা প্রায় আড়াই হাত প্রতি ৩ বছর অন্তর তা বদলানো হয়৷ তবে আদল একই থাকে ৷পুজোর বৈশিষ্ট্য পুরনো বিগ্রহের মাটি ব্যবহার করা হয় নতুন প্রতিমা গড়ার জন্য। কাঠামো বিসর্জন দেওয়া হয় না স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী৷ পুজোর পুরোহিত একই বংশের। প্রতিমা তৈরীর ক্ষেত্রেও একই পরিবার দায়িত্ব পান।

স্থানীয় বাসিন্দা সন্তোষ দাস বলেন মন্দিরের পিছনে আছে প্রাচীন দেবদারু গাছ কেউ তার পাতা ছেঁড়েন না ৷ ওপার বাংলা থেকেও অনেকে আসেন জাগ্রত দেবী দর্শন করতে৷ প্রচলিত বিশ্বাস- পুজোয় সক্রিয় ভাবে যোগ দিলে জীবনে সাফল্য আসে ৷ এমনই বিশ্বাস আর লোকগাথার মিশ্রণে ছয়ঘরিয়া সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের দেবীমূর্তি কে ঘিরে আজও মানুষের ঢল নামে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here