দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এক প্রতিবন্ধী যুবককে রেলপুলিশের হেফাজতে ও পরে জেলে পিটিয়ে মারার অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠল হাড়োয়ার লেবুতলা। সকাল থেকে দফায় দফায় চলে রেল অবরোধ। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এই শাখার ট্রেন চলাচল।
শুক্রবার বিকেলে সুপার সাইক্লোন ফণি আছড়ে পড়ার খবরে যখন সবাই তটস্থ, সে সময় খাতা বই বিক্রি সেরে ব্যারাকপুরের নীলগঞ্জ থেকে বাড়ির পথ ধরেছিলেন দেগঙ্গার বাসিন্দা গৌতম মণ্ডল (২৭)। বারাসত স্টেশনে তখন ট্রেন বাতিলের জেরে চলছে অবরোধ। অবরোধ উঠতেই এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে ট্রেন ধরতে যাচ্ছিলেন গৌতম। অভিযোগ তখনই রেলপুলিশ তাঁকে ধরে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়। পরে জেলে পাঠানো হয় তাঁকে। মঙ্গলবার রাতে জেলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন গৌতম। আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত্যু হয় তাঁর। বারাসত থানা থেকে সেই খবর পাঠানো হয় গৌতমের বাড়িতে। গৌতমের স্ত্রী ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানা গেছে।

গৌতমের মায়ের অভিযোগ, তাঁর ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবে সুস্থ ছিল। কাজকর্ম করে সংসার চালাতো। তিনি বলেন, “ওকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে শুনে ছুটে থানায় যাই। টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শোনেনি কেউ। খুব মারধর করা হচ্ছিল ওকে। এরপরেই ওখান থেকে দমদম জেলে নিয়ে যায়। সেখানে আমার ছেলে মারা গেছে। যারা ওকে পিটিয়ে মারল সবার শাস্তি চাই।”

এই ঘটনার জেরে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা এলাকা। এখনও তাঁর দেহ ময়নাতদন্ত না করেই আরজিকর হাসপাতালে রেখে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দ্রুত দেহের ময়নাতদন্ত করে দেহ ফেরত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে আজ সকাল থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আজ সকালে হাড়োয়ার লেবুতলা স্টেশনে সাড়ে সাতটার ডাউন শিয়ালদা ইছামতি লোকাল আটকে রেখে অবরোধ শুরু করে। তখনকার মতো পুলিশ তাঁদের হটিয়ে দিলেও সকাল ৯ টা থেকে ফের রেল অবরোধ শুরু হয় হাসনাবাদ শাখার লেবুতলা স্টেশনে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় আপ ও ডাউনলাইনের ট্রেন চলাচল। বিপাকে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। ঘটনাস্থলে দেগঙ্গার বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌছায়৷

বুধবার বিকেলে গৌতম এর পরিবারের লোক বারাসাতে এসপি অফিসে এসে সেন্ট্রাল জেলের সুপারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। ওই অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ দিকে জেল সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই বন্দিকে যে জেলে কোনও অত্যাচার করা হয়নি তার সমস্ত প্রমাণ ও সিসিটিভি ফুটেজ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

গৌতমের স্ত্রী সপ্তমী বলেন, ‘‘বারাসতের রেল পুলিশ আটকে রেখেছে জানতে পেরে পর দিনই সকলে গিয়ে পুলিশকে জানায়, ও প্রতিবন্ধী। ভাঙচুর করার ক্ষমতাই ওর নেই। ছেড়ে দিন। কিন্তু পুলিশ শোনেনি।’’ গৌতমের মা আরতিও ঘটনার প্রতিবাদ করেন।ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় মানুষ৷ ছবি- সৌভিক দাস৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here