দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পুলওয়ামা বিস্ফোরণে সক্রিয় ভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে জইশ-ই-মহম্মদের এক জঙ্গিকে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। জানা গিয়েছে, ওই জঙ্গির নাম শাকির বসির মাজরে।
বছর ২২-এর এই যুবক দীর্ঘদিন ধরেই পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন জইশের সঙ্গে যুক্ত। পুলওয়ামা হামলায় ব্যবহৃত আইইডি বিস্ফোরণ বানাতে জইশের আরও দুই জঙ্গি আদিল আহমেদ দার এবং মহম্মদ উমর ফারুখকে সাহায্য করেছিল এই শাকির বসির। শুধু তাই নয়, বিস্ফোরক তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম অনলাইনে অর্ডার দিয়ে আনানো হয়েছিল। শুক্রবার এনআইএ-র হাতে ধরা পড়ার পর জেরায় এমনটাই জানিয়েছে জইশের অন্যতম সক্রিয় সদস্য শাকির বসির মাজরে।
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলের দিকে আচমকাই বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা। জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ের উপর হামলা হয়েছিল সিআরপিএফ-এর কনভয়ে। নিহত হয়েছিলেন ৪০জন জওয়ান। পরে তদন্তে জানা গিয়েছিল, এই বিস্ফোরণে ব্যবহার হয়েছিল প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কেজি বিস্ফোরক। একটি গাড়িতে বিস্ফোরক বোঝাই করে হাজির হয়েছিল জইশের আত্মঘাতী জঙ্গি আদিল আহমেদ দার।
তারপর নিমেষেই লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে গোটা এলাকা। শুক্রবার ধরা পড়ার পর জেরায় শাকির বসির জানিয়েছে,সেদিনের হামলায় বিস্ফোরকের মধ্যে ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, নাইট্রো-গ্লিসারিন এবং আরডিএক্স। আদিল আহমেদ দার এবং মহম্মদ উমর ফারুখের সঙ্গে হাত লাগিয়ে ওই নির্দিষ্ট গাড়িতে বিস্ফোরক বোঝাই করেছিল শাকির বসিরও।
২০১৮ সালের শেষ থেকেই শাকিরের বাড়িতে ঘাঁটি গেড়েছিল জইশের বাকি দুই জঙ্গি। এলাকা রেইকি করার পাশাপাশি তারা হামলার ব্লু-প্রিন্ট ছকেছিল শাকিরের বাড়িতে বসেই। দক্ষিণ কাশ্মীরেই লেথপোরার কাছে একটি আসবাবের দোকান রয়েছে শাকির বসিরের। সেখান থেকে পুলওয়ামা হামলার ঘটনাস্থল ছিল কাছেই। দিনের পর দিন দোকানে বসে সিআরপিএফ জওয়ানদের গতিবিধির উপর নজর রাখত শাকির বসির।
তারপর যথা সময়ে সবকিছুর নিখুঁত বর্ণণা দিয়েছিল বাকি দুই সঙ্গীকে। এনআইএ-র তদন্তকারী আধিকারিকরা জানিয়েছেন, হামলার দিন আদিলের সঙ্গে বিস্ফোরক বোঝাই আগড়িতে ছিল শাকিরও। তবে ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূরে গাড়ি থেকে নেমে যায় সে।
এরপর বিস্ফোরক বোঝাই আগড়ি নিয়ে একাই এগিয়ে যায় জইশের আত্মঘাতী জঙ্গি আদিল। সটান ধাক্কা মারে সিআরিপিএফ-এর একটি কনভয়ে। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠা গোটা চত্বর।
নিজে হাতে বিস্ফোরক বানানো, নির্দিষ্ট গাড়িতে সেটা লাগানো ছাড়াও পুলওয়ামা হামলায় জইশের বাকি জঙ্গিদের টাকাপয়সা এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়েও সাহায্য করেছিল এই শাকির বসির মাজরে। এর আগে পুলওয়ামা হামলায় জড়িত অভিযোগে যাদের নামই প্রকাশ্যে এসেছিল তাদের কাউকে জীবিত ধরা যায়নি। ঘটনার সময়েই খতম হয় আদিল আহমেদ দার। পরে একটি এনকাউন্টারে মারা যায় মহম্মদ উপর ফারুখ।
এছাড়াও মুদ্দাসির আহমেদ খান (দক্ষিণ কাশ্মীরে জইশের সক্রিয় কম্যান্ডার), কারি ইয়াসির (কাশ্মীর ডিভিশনে জইশের কম্যান্ডার), সাজ্জাদ আহমেদ ভাট (পুলওয়ামা হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ির মালিক) এবং আইইডি এক্সপার্ড কামরান—–গত এক বছরে বিভিন্ন এনকাউন্টারে মারা গিয়েছে এদের সকলেই। তাই পুলওয়ামা হামলায় সক্রিয় ভাবে জড়িত থাকা শাকির বসির মাজরেওকে গ্রেফতারের পর আশাবাদী এনআইএ।
খুব তাড়াতাড়ি তদন্তকারী আধিকারিকদের হাতে সেদিনের হামলার আরও খুঁটিনাটি আসবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার এনআইএ-র বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়েছিল শাকির বসিরকে। এবং বিশদে জেরা করার জন্য তাকে ১৫ দিনের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আবেদনও জানিয়েছে এনআইএ। পরবর্তী জেরায় আরও অনেক তথ্য সামনে আসবে বলে মত তদন্তকারী আধিকারিকদের।