বিশেষ প্রতিবেদনঃ–পুলওামায় যে ভাবে ভারতীয় জাওয়ানদের শহিদ হতে হয়েছে,তাতে বিজেপির দায়কে কোন ভাবেই ছাড় দিতে রাজি নন মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়।শহিদ সেনা জাওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েও,এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন কেন নিরাপত্তা নিয়ে ব্যর্থতার দায় কেন্দ্রীয় সরকার নেবে না,কেন তারা স্বীকার করবে না যে নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাজে যথেষ্ট ফাঁক ছিল?

বলা বাহুল্য এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সবার আগেই এই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন,আর এই সূত্রে তিনি দেশের অন্য সব বিরোধী নেতাদের থেকে নিজেকে একটু আলাদা বলেই প্রমাণ করতে পেরেছেন।মমতা যখন সেনা জাওয়ানের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর পরই এ সব প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন তখন কেউ কেউ বলতে থাকেন,এত বড় একটা দেশীয় বিপর্যয়ের পরে এ সব প্রশ্ন তুলে মমতা নিজের ভাবমূর্তির ক্ষতি করছেন দেশের মানুষের কাছে।কিন্তু ঘটনার কয়েকদিন কাটতেই বেঝা গেল মমতাই সবচেয়ে আগে দরকারি প্রশ্নটা তুলে দিয়েছেন।

বিজেপি নেতারা যে ভাবে সেনা জাওয়ানদের মৃত্যুর ঘটনাকে সামনে রেখে উগ্র জাতীয়তাবাদের ধ্বজা তুলে নির্বাচনি ফায়দা তুলতে আসরে নেমে গেলেন,তাতে মমতার অবস্থানই যে সঠিক তা মানতে বাধ্য হচ্ছেন বিরোধী শিবিরের সব নেতারাই।বিজেপি যে এই ঘটনাকে ব্যবহার করে গোটা দেশ জুড়ে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ আবহ তৈরি করবে,এবং তার মাধ্যমে দেশের অন্য সব সমস্যাকে পেছনে ফেলে দেবার চেষ্টা করবে তা সবার আগে ধরে ফেলেছিলেন মমতাই,আর সেই জন্য এই মর্মান্তিক ঘটনায় বিজেপিকে কাঠগড়ায় তোলার কৌশল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নিয়েছিলেন।

ঘটনার গতি প্রকৃতি প্রমাণ করছে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সঠিক আশঙ্কাই করেছিলেন।প্রধানমন্ত্রী থেকে অমিত শাহ সকলেই নেমে পড়েছেন পুলওয়ামার ঘটনাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে।আর সেই জন্য গোটা দেশ জুড়ে পাকিস্তান বিরোধী জিগির তোলার চেষ্টা।মমতা যথার্থই বলেছেন,পাঁচ বছর কেটে যাওয়ার পর,সরকারের মেয়াদ যখন প্রায় শেষ তখন আচমকা কেন পাকিস্থানকে শবক শেখাবার এমন মরিয়া চেষ্টা!আচ্ছেদিনের সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পুরণ হল তা বুজতে না দিয়ে এই যুদ্ধ জিগির তুলে ভোটে ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি,মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায় তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বুদ্ধিতে এই সার সত্যটা সবার আগে ধরে ফেলেছেন।প্রথম থেকেই মমতার অবস্থান পরিষ্কার,দেশপ্রেম মানে কোনভাবেই বিজেপিকে ছাড় দেওয়া নয়,জাওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতেই হবে,দশের শত্রুদের প্রতিহত করতে হবে,কিন্তু তার মানে এই নয় যে বিজেপির ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী খুব দাপটের সঙ্গে্ ঘোষণা করেছেন,’আমরা দেশ প্রেম বিজেপি বা আরএসএসের কাছ থেকে শিখব না,আমরা আমাদের জাওয়ানদের ভালবাসি বলেই জানতে চাই কেন এতগুলো সেনা জাওয়ানকে আকাশ পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করে তাদের এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হল?’দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডাভালের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা।

মমতা যে কথা আগে বলেছেন সে কথা এখন অন্যান্য বিরোধী নেতারাও বলতে শুরু করেছেন।তাই মমতা বিজেপিকে চাপে রাখার যে কৌশল প্রথম থেকে চালিয়ে যাচ্ছেন তাতে অন্য বিরোধীরাও এখন একজোট হতে শুরু করেছে,এটা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বড় পাওনাই বলতে হবে।বিজেপিকে প্রতিহত করতে মমতা যে কৌশল নিয়েছেন তা যে বিজেপির বিরুদ্ধে সব বিরোধী দলকেই নিতে হবে তা পরিষ্কার করে দিয়ে মমতা বুঝিয়ে দিলেন আগামী দিনে ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি অবশ্যই মধ্যমণি হয়েই বিরাজ করবেন।

সমস্ত বোঝাপড়া শিকেয় তুলে এ রাজ্যে বিজেপিকে যে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না মমতা,তা এতদিনে বিজেপি নেতারা বুঝে গেছেন।বিজেপির বিরুদ্ধে অবশেষে মমতার এই নাছোড় মনোভাব তাঁকে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও বিজেপি বিরোধীতার অন্যতম প্রধান মুখ হিসেবেই তুলে ধরতে চলেছে।বিজেপিকে পুলওয়ামার ঘটনার দায় নিয়ে চাপে রাখার কৌশল মমতা তাই চালিয়েই যাবেন বলে মনে করা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here