দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ ফুলে ফুলে ঢেকেছে শহিদ মিনার। দেওয়া হয়েছে আলপনা। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা পার হতেই বেজে উঠল গানের সুর, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী/ আমি কি ভুলিতে পারি”।

২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করলেন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মাতৃভাষার জন্য শহিদ হওয়া সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারদের স্মরণ করলো বাংলাদেশ। রাত্রি ১২টা ০১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আবদুল হামিদ শহিদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। তারপরেই শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পুস্পস্তবক অর্পণের পর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় ভাষা আন্দোলনের শহিদদের। প্রধানমন্ত্রীর পর পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তারপর বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামী লিগের কেন্দ্রীয় নেতারাও শ্রদ্ধা জানান শহিদ মিনারেএর আগে বুধবার বিকেলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত একুশে পদক ২০১৯ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন হাসিনা। সেখানে নিজের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলবে, কারণ একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করা।

একুশ আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করা যায়। কীভাবে নিজের মাতৃভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সবকিছুকেই রক্ষা করা যায়।”প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের ভাষার অধিকার, আমাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি রক্ষার চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের কর্তব্য।আমরা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেটা অর্জন করেছি, তার সুফলটা যেন আগামী প্রজন্ম ভোগ করতে পারে। তারা যেন একটা সুন্দর জীবন পায় সেটাই আমরা চাই।”

একুশের প্রহরে শহিদ মিনার চত্বরে ছিল চার স্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন ছিল ছ’হাজার পুলিশ। ঢাকা শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও ১০ হাজার পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছিল। শহরের বেশ কিছু রাস্তা বুধবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকার থেকে ঘোষণা করে দেওয়া হয়, চানখাঁরপুল, বকশীবাজার, নীলক্ষেত, পলাশী, শাহবাগ, হাইকোর্ট ক্রসিং, রোমানা চত্বরএলাকা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার ছাড়া কোনও গাড়ি ঢুকতে পারবে না। আগত মানুষদের দেহ ও ব্যাগ তল্লাশি করা হয় হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে।প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সালে আজকের দিনেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলন দমন করতে জারি হওয়া ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন ছাত্ররা। ছাত্রদের মিছিলে গুলি চলে। শহিদ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সালাম,

শহিদ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সালাম, রফিক, বরকত ও জব্বার। মাতৃভাষার দাবিতে শহিদ হওয়া এই ছাত্রদের স্মরণেই প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি সেজে ওঠে শহিদ মিনার। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুলে ঢেকে যায় শহিদ বেদি। প্রত্যেক বাঙালির মন গেয়ে ওঠে, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী/ আমি কি ভুলিতে পারি”

ভারতের সীমান্ত শহর বনগাঁ, মোমবাতি হাতে অসংখ্য মানুষ হেঁটে চলেছেন যশোর রোড ধরে। তাঁদের কন্ঠে তখন শুধু, ‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’’ তাঁদের হাতে ভাষা আন্দোলনের শহিদ রফিক সালাম, বরকত শফিউর জব্বারদের ছবি। একুশের আগের সন্ধ্যায় ভাষা শহিদদের স্মরণে এ ভাবেই পথে নেমেছিল বনগাঁ শহরের সাহিত্যিক নাট্যকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষক অধ্যাপক, স্কুল পড়ুয়া, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অসংখ্য সাধারন মানুষ।

এ দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় নীলদর্পণ অডিটোরিয়ামের সামনে থেকে ভাষা শহিদদের স্মরণে পদযাত্রা বের হয়। শহর পরিক্রমা করে মিছিল শেষ হয়, স্থানীয় বিএসএফ ক্যাম্প মোড়ে। সেখানে রয়েছে ভাষা শহিদদের স্মরণে স্থায়ী বেদি। মানুষ রাত জেগে সেখানে ফুল দিয়েছেন। মোমবাতিও জ্বালিয়েছেন ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান-কবিতা আলোচনায় ভাষা শহিদদের স্মরণ করা হয়। শহিদ বেদিতে মালা দেন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য। তিনি বলেন, ‘‘ঢাকার আদলে আমরাও কয়েক বছর ধরে একুশের আগের রাত থেকে ভাষা শহিদদের স্মরণে অনুষ্ঠান করেথাকি৷ একুশের আগের সন্ধ্যা থেকেই বনগাঁ শহরে ভাষা

শহিদদের স্মরণে অনুষ্ঠান করে আসছি এখানে এবং পেট্রাপোল সীমান্তে৷ দু’দেশের সীমান্তের মানুষ এদিন ভালবাসা বিনিময় করেন৷ একুশের আগের সন্ধ্যা থেকেই বনগাঁ শহরে ভাষা শহিদ স্মরণে ,এপিডিআর বনগাঁ শাখার তরফে স্থানীয় উজ্জ্বল সঙ্ঘে গান আলোচনা কবিতায় সালাম বরকতদের শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে৷ র পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলনের উপর একটি পত্রিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রবীণরা তাতে স্মৃতিচারণ করেছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে দু’দেশের মানুষ একত্রে স্মরণ করলেন আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস।
দু’দেশের মানুষ আবেগ ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার হলো একুশের সকালে। দু’দেশের মানুষ একত্রে রক্তদান শিবিরেও আয়োজন করেছেন।


উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এ দেশের মানুষের রক্ত দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের ব্লাডব্যাঙ্কে। ওদের রক্ত নেওয়া হয়েছে এ দেশের ব্লাডব্যাঙ্কে। সঙ্গীত পরিবেশন করতে আসেন দুই বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী মইনুর হাসান নোবেল। নো ম্যানস ল্যান্ডের করা যৌথ মঞ্চ হল অনুষ্ঠান। সেখানে দু’দেশের শিল্পীরা অনুষ্ঠান করেন।

হাবড়াতেও এ দিন পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। স্টেশন চত্বরে ভাষা শহিদদের স্মরণে অস্থায়ী বেদি তৈরি করা হয়েছিল। অনেক রাত পর্যন্ত সাধারণ মানুষ সেখানে ফুল দিয়ে তাঁদের শ্রদ্ধা জানান। প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস জানান, হাবড়াতে বহু উদ্বাস্তু মানুষের বসবাস। অধুনা বাংলাদেশ থেকে তাঁরা সর্বস্ব হারিয়ে এ দিন এখানে ছুটে এসেছিলেন। ওই মানুষের আবেগের সঙ্গে মিশে আছে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস।

একুশের সকালে… -দেশের সময়৷

সেই মানুষকে পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে দিতে ও বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় যাঁরা আত্মবলিদান দিলেন তাদের স্মরণ করতেই হাবড়ার এই আয়োজন।একুশ এর সকালে পেট্রাপোল সীমান্তের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের খাদ্য মন্ত্রী জোতিপ্রিয় মল্লিক সহ প্রশাসনের আধিকারিকরা৷ ভাষার টানে জনজোয়ারে ভাসল দু’দেশ ৷

ছবি তুলেছেন -দেবানন্দ পাইন৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here