দেশের সময়, বাগদা: মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনা নদিয়ায়। সৎকার করতে যাওয়া শ্মশানযাত্রীদের ম্যাটাডোর পিছন থেকে ধাক্কা মারে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা পাথরবোঝাই লরিতে। যার জেরে এখনও অবধি ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বেশ কয়েক জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তাঁরা।

এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে টুইট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দুর্ঘটনার কথা জানতেপেরেই রবিবার সকালেই বাগদার গ্রামে ছুটে যান বিধায়ক বিশ্বজ্যিৎ দাস,তিনি জানান কোন ভাষানেই যে সে ভাষায় বোঝাব মৃতের পরিবারের মানুষদের কে , বিধায়ক হিসাবে সরকারের প্রতিটি শুবিধা যাতে এই সমস্ত দুর্ঘট গ্রস্থ পরিবার সমস্তরকম সুযোগ সুবিধা সঠিকভাবে পায় সেই ব্যবস্থা করব৷

টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, নদিয়ার পথ দুর্ঘটনার কথা শুনে আমি মর্মাহত। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। ঈশ্বর তাঁদের এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার শক্তি দিন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার দুর্ঘটনা কবলিতদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। যা দরকার, সরকার তাই করবে। দুঃখের সময় সরকার তাঁদের পাশে আছে। তবে কোনও ক্ষতিপূরণের অঙ্ক জানাননি মুখ্যমন্ত্রী।

মাঝরাতের দুর্ঘটনা কেড়ে নিল একই পরিবারের ১০ জন সদস্যের প্রাণ। মৃতের তালিকায় রয়েছেন প্রতিবেশীদেরও কয়েক জন। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আক্ষরিক অর্থেই শোকে আকুল উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার পারমাদনের বাসিন্দারা।

নদিয়ার পথ দুর্ঘটনায় মৃতের পরিবারকে অনুদানের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধামন্ত্রী । মৃতের পরিবাররে প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ‘দুর্ঘটনায় আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক’, বলে টুইট করেছেন মোদী।

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের নিকট-আত্মীয়কে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে এককালীন ২ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হবে। দুর্ঘটনায় আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।’ ভয়াবহ এই সড় দুর্গটনায় আগেই তিনি শোকপ্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত। মৃতের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দুর্ঘটনায় আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক বলে বার্তা মোদীর। 

শনিবার মৃত্যু হয়েছিল পারমাদনের মুহুরি পরিবারের নবতিপর সদস্য শিবানী মুহুরির (৯২)। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁর দেহ নিয়ে নবদ্বীপে শেষকৃত্যের উদ্দেশে রওনা দেন মুহুরি পরিবারের অনেকেই। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশীদের কয়েক জন। সব মিলিয়ে শবযাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪০। কিন্তু ওই রাতেই নদিয়ার হাঁসখালির ফুলবাড়ি মাঠের কাছে রাজ্য সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পাথরবোঝাই লরিতে ধাক্কা মারে শববাহী লরিটি। তার জেরে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে।

শবযাত্রীদের ওই দলটির সঙ্গে আলাদা গাড়িতে ছিলেন পিন্টু হালদার নামে পারমাদন এলাকার এক বাসিন্দা। দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পিন্টু বলছেন, ‘‘দেহ এখান থেকে নবদ্বীপ শ্মশানের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। চিত্রশালী এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারে গাড়ি। ওখানে ১৪-১৫ জন মারা যান। হাসপাতালেও ৪-৫ জন মারা যান। ওই বাড়ির ১০ জন মারা গিয়েছেন। তার মধ্যে এক শিশুও রয়েছে।’’

শবযাত্রীদের ওই দলটিতে থাকা মুহুরি পরিবারের অন্তত ১০ জন মারা গিয়েছেন। নিহত হয়েছেন প্রয়াত শিবানীর মেজ ছেলে বৃন্দাবন মুহুরি (৬০), তাঁর দুই মেয়ে, ভাইয়ের স্ত্রী জয়ন্তী মুহুরি (৫০), পুত্রবধূ অনিতা মুহুরি (২২), মেয়ে মুনমুন মুহুরি (২১), নাতনি খুশি (৪) এবং আরও কয়েক জন আত্মীয়। এ ছাড়া বিজয় মণ্ডল (৬৫), হাজারি বিশ্বাস (৮৫), সুকুমার বিশ্বাস (৫২), গোপাল সরকার (৬৩), অমর বিশ্বাস (৫০) ও অমলেন্দু বিশ্বাস (৪৭) নামে দুই ভাই, শ্যাম বিশ্বাস (৫৫)-সহ কয়েক জন প্রতিবেশীরও মৃত্যু হয়েছে ওই দুর্ঘটনায়।

মূলত চাষাবাদই পেশা মুহুরি পরিবারের। তবে কর্মসূত্রে ওই পরিবারের কয়েক জন বিদেশেও থাকেন। এলাকায় অভিজাত পরিবার হিসাবেই পরিচিতি। দুর্ঘটনার খবর আসতেই ভিড় জমতে শুরু করে মুহুরি বাড়ির সামনে। একসঙ্গে এত জনের মৃত্যু খবরে গোটা পাড়া এখন থমথমে। শনিবার রাতের ঘটনার জেরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পারমাদন এলাকায়।

জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থেকে শ্মশানযাত্রীদের দলটি শনিবার গভীর রাতে আসছিল নবদ্বীপে। পথে নদিয়ার হাঁসখালির ফুলবাড়ি মাঠের কাছে রাজ্য সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পাথরবোঝাই লরিতে ধাক্কা মারে শববাহী লরিটি। এর জেরেই শনিবার ভোররাতে ঘটেছে দুর্ঘটনা।

শববাহী লরিতে প্রায় ৩৫-৪০ জন ছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। দুর্ঘটনার পর শ্রাবণী মুহুরির দেহ-সহ দুর্ঘটনায় আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে কৃষ্ণনগরের কাছে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। সেখানেই ১৮ জনকে মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকরা। বেশ কয়েক জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তাঁদের কলকাতা বা কল্যাণীও নিয়ে যাওয়া হতে পারে।

আহত এক যাত্রী বলেছেন, ‘‘রাস্তা খারাপ ছিল। কুয়াশাও ছিল। তার মধ্যেই জোরে গাড়ি চলছিল। হাঁসখালির কাছে এসে পাথরবোঝাই লরিতে ধাক্কা মারে আমাদের গাড়ি।’’ দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগও তুলেছেন মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের লোকেরা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে হাঁসখালি থানার পুলিশ।

এদিকে, শোকজ্ঞাপন করে মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে রাজ্যপাল ট্যুইটে লেখেন, মৃত ও আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি পথ নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা দরকার। 

নদিয়ার ঘটনা নিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অমিত শাহ ট্যুইটে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ায় পথ দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো মানুষদের প্রতি সমবেদনা রইল। এই কঠিন পরিস্থিতিতে ঈশ্বর ওঁদের সহায় হোন। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।

হাঁসখালি দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেও আক্রমণ শুভেন্দু অধিকারীর। বিরোধী দলনেতা ট্যুইটে লেখেন, কলকাতা পুরসভার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত পরিবহণমন্ত্রী। প্রশ্ন হল, কত দুর্ঘটনা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘুম ভাঙাবে? কত দুর্ঘটনা হলে তিনি বুঝবেন যে জেলার পরিবহণ দফতরে কর্মীর সংখ্যা কম, কাজ চালাচ্ছে প্রশিক্ষণহীন সিভিক পুলিশ। যাদের প্রথম কাজ, রাস্তায় গাড়ি থেকে টাকা তোলা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here