দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অভূতপূর্ব সাফল্যের পরও এ ব্যাপারে কোনও টুঁ শব্দ করলেন না দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর বিকেলে বারাণসীর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরভোটের সাফল্যের জন্য দলের কর্মীদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তাঁদের বৃহত্তর দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এদিন রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি অভিষেক। পুরভোটের ফলাফল নিয়ে কোনও টুইটও করেননি।

এক সময়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুকুল রায়। ভোটের ফল ঘোষণার দিন তাঁর ব্যস্ততা থাকত চোখে পড়ার মতো। স্বাভাবিক ভাবেই পদাধিকার বলে ফলাফল নিয়ে প্রতিক্রিয়াও জানাতেন তিনি। সেই নিরিখে দেখলে অভিষেকের এ হেন নীরবতা ব্যতিক্রমী বইকি।

দিদি নির্দলদের নেবেন? কী বললেন মমতা
দলের এক প্রবীণ নেতার মতে, এর থেকে বার্তা যাচ্ছে যে, সংগঠনের মধ্যে টানাপোড়েন এখনও রয়েছে। কলকাতা পুরভোটে প্রার্থী বাছাই নিয়ে এই টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল। দেখা যাবে কলকাতা পুরভোটের প্রচারে অভিষেক সক্রিয় থাকলেও ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর সেদিনও রা কাড়েননি।

তার পর গোটা রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার প্রার্থী বাছাই নিয়েও তাঁর সঙ্গে দলের একাংশের মতান্তর বা মনান্তর প্রকট হয়ে পড়ে। এমনকি অভিষেক প্রকাশ্যে এই অভিযোগও করেন যে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সীরা যে প্রার্থী তালিকা তৈরি করেছেন, তাতে মৃত ব্যক্তিকেও প্রার্থী করা হয়েছে। আবার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ঠারেঠোরে ইঙ্গিত করতে থাকেন যে, অভিষেকের প্রশ্রয়ে অনেকেই নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন।

সার্বিক এই পরিস্থিতিতে বুধবার ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্যও তাৎপর্যপূর্ণ। জয়ী নির্দল প্রার্থী (পড়ুন বিক্ষুব্ধদের) দলে ফেরানো হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে ববি বলেছেন, এখনই ফেরানো ঠিক হবে না।

তৃণমূলের একাংশের মতে, অভিষেক যে চুপ রয়েছেন তা হতে পারে ঝড়ের পূর্বাভাস। ৮ তারিখ নজরুল মঞ্চে দলের নেতাদের বৈঠকে ডেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকে দাবি করছেন, ওই বৈঠকে দলের নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। যে কমিটিতে এবার অভ্যন্তরীণ সমীকরণ বদলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। ফলে বুধবার পুরভোটের ফলাফল ঘোষণার পর আসন্ন ওই বৈঠক নিয়েই এখন কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছে।

জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা হয়ে গেছে। নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে জাতীয় স্তরের কমিটি। এবার শীঘ্রই নতুন রাজ্য কমিটি গড়ে দেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়।আগেই জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে এই বিষয় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন দলের নেতাদের।

প্রসঙ্গত, দোল উৎসবের আগেই এই রাজ্য কমিটি ঘোষণা হয়ে যাবে বলে তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে খবর।

জাতীয় স্তরের কমিটিতে সহ সভাপতির সংখ্যা তিন থেকে বাড়িয়ে চার করেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। নতুন সহ সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে৷ ধাপে ধাপে রাজ্য স্তরেও বাকি কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন যে শাখা সংগঠনগুলি রয়েছে সেগুলিকেও খোলনলচে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে সূত্রের খবর।

তৃণমূল সূত্রে খবর, জাতীয় স্তরের কমিটিতে যেমন সিনিয়র-জুনিয়র ভারসাম্য বজায় রেখে চলা হচ্ছে। তেমনি রাজ্য কমিটিতে সিনিয়র-জুনিয়র ভারসাম্য বজায় রেখেই গড়ে দেওয়া হবে।

দলীয় সূত্রে খবর, মমতা বন্দোপাধ্যায় জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে বলেছিলেন, নবীনরা স্বাগত, তবে,ওল্ড ইজ অলওয়েজ গোল্ড। ফলে ধরে নেওয়া হচ্ছে রাজ্য কমিটিতেও সেই ছাপ থাকবে। ফলে ধরে নেওয়া হচ্ছে সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়েই দলকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে চান তিনি। আর সে কারণেই শীঘ্রই দলের রাজ্য কমিটি ঘোষণা করে দিতে পারেন তিনি৷ ধাপে ধাপে সেই প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।

তৃণমূলের মূল লক্ষ্য তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, শুধু সংগঠন গড়ে তোলাই নয়। একেবারে তৃণমূল স্তর অবধি দলের আদর্শ পৌছে দিতে হবে। এই দল সকলের। কাউকে দূরে সরিয়ে রাখা নয়। সকলকে আপন করে নিতে হবে। এই বার্তা সকল স্তরেই দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।দলীয় সূত্রে খবর, এই কাজ সমাপ্ত হলে ধাপে ধাপে জেলা ও ব্লক কমিটিও সাজিয়ে ফেলা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here