দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নেতাজি ইনডোরে জনজাগরণ সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার পরই রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে মঙ্গলবার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ (এনআরসি) ও নাগরিকত্ব সংশোধন বিল (সিএবি) সংক্রান্ত একাধিক সাংগঠনিক নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তার মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ এই যে, বাংলার নেতাদের উদ্দেশে বিজেপি সভাপতির স্পষ্ট নির্দেশ, এই রাজ্য থেকে একই বয়ানে দেড় কোটি চিঠি পাঠাতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঠিকানায়।
বিজেপি সূত্রে খবর, শাহ বলেছেন, বাংলায় এনআরসি কার্যকর করা এবং নাগরিকত্ব সংশোধন বিল সংসদের দুই কক্ষে পাশ করানোর দাবি জানিয়ে এ রাজ্য থেকে দেড় কোটি চিঠি যাতে নয়াদিল্লির প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাফ নির্দেশ, পুজো মিটলেই এই কর্মসূচি নিয়ে কোমর বেঁধে নামতে হবে।
অমিত শাহের নির্দেশ অনুযায়ী, ওই চিঠিগুলি পাঠাতে হবে পোস্টকার্ডে লিখে। আগামী ডিসেম্বর মাসে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে শেষ করে ফেলতে হবে এই কর্মসূচি। রাজ্যের সমস্ত জেলা থেকে একই বয়ানের চিঠি যাতে য়ায়, তার উদ্যোগ সংগঠনের সমস্ত স্তরে নিতে হবে। এই ইস্যুতে কোনও ঢিলেঢালা ভাব বরদাস্ত করা হবে না বলেও বার্তা দিয়েছেন শাহ।
এনআরসি নিয়ে মানুষের মধ্যে যে একটা আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে তা ভালো মতোই টের পেয়েছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। তাই দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে মঙ্গলবারের সভার আয়োজন করেছিল রাজ্য বিজেপি। সেখানে অমিত শাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কোনও হিন্দু শরণার্থীর ভয় নেই। তাঁদের ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অধিকার দেবে সরকার। একই সঙ্গে অমিত শাহ বলেছেন, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন এবং খ্রিষ্টানদেরও ভয় নেই। তাঁদেরও এ দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে না। তাঁদের নাগরিকত্ব দেবে কেন্দ্র। কিন্তু হুঁশিয়ারির সুরে বিজেপি সভাপতি বলেছেন, কোনও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের থাকতে দেওয়া হবে না ভারতে। বার করে দেওয়া হবে। শুধু মুসলমান শব্দটা উচ্চারণ করেননি তিনি।
দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে শাহের বার্তা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ কথা বলতে হবে। কিন্তু বিজেপি-র মতো ক্যাডার ভিত্তিক দলে শুধু মঞ্চ থেকে এ কথা বলে দিলে যে হবে না, তা ভাল মতো জানেন জনসঙ্ঘ করে ওঠো অমিত শাহ। এটা বাস্তবায়িত করতে গেলে সাংঠনিক কাঠামোকে ব্যবহার করেই তা করতে হবে। তাই দলীয় নেতাদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের অনেকে।
তাঁদের মতে, অমিত শাহ বক্তৃতা দিতে গিয়েই বলেছেন, লোকসভা ভোটে বাংলার আড়াই কোটি মানুষ ভোট দিয়েছেন বিজেপি-কে। সেটা মাথায় রেখেই দেড় কোটির লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, এর উদ্দেশ্য দুটো। এক, একুশের লক্ষ্যে সাংগঠনিক ওয়ার্মআপ শুরু করিয়ে দেওয়া। এবং দুই, সংসদে বিল পেশ করার সময় যাতে বলা য়ায়, এই তো বাংলা থেকে এই দাবিতে দেড় কোটি লোক চিঠি দিয়েছে।