দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ : বাংলায় সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে তৃণমূলের মজবুত জনভিত্তি রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। সোমবার কোচবিহারে সভা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করলেন, সেই ধারণাও এবার ভ্রান্ত প্রমাণিত হতে চলেছে। তাঁর দাবি, সংখ্যালঘু ভোটও হাত ছাড়া হতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

এদিন কোচবিহারের রাস ময়দানে মোদীর সভায় তিল ধারনেরও জায়গা ছিল না। উনিশের ভোটে যেমন ভিড় হয়েছিল, এই জমায়েত ছিল আড়ে বহরে তার থেকেও বেশি। সেই সভাতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কদিন আগে দিদিকে বলতে শুনেছি, মুসলমানরা সবাই এক জোট হও, বিজেপিকে আটকাতে হবে। আরে দিদিদি মুসলিম ভোটও আপনার হাত থেকে বেরিয়ে গেছে। আপনি হারছেন”। এ কথা বলেই-

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আচ্ছা আমি যদি বলতাম, সমস্ত হিন্দু একজোট হও। তা হলে কী হত? নির্বাচন কমিশন সাত দশদিনের জন্য আমার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করত। আমাকে প্রচারে যেতে দিত না। আমার দলের সভাপতিকে নোটিস পাঠাত। সব খবরের কাগজের প্রথম পাতায় খবর বেরোত আর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও হইচই শুরু করত। আমার চুল ছিঁড়ে নিত।”


প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জানি না নির্বাচন কমিশন আপনাকে নোটিস দিয়েছে কিনা। কিন্তু সবাই দেখতে পাচ্ছেন আপনি বলছেন, মুসলমান এক জোট হও। বাঁচাও আমাকে বাঁচাও। এর মানে হল, আপনি হারছেন।”

বাম জমানায় বাংলায় সামগ্রিক ভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতির পরিবেশ ছিল বলেই অনেকে মনে করেন। তাঁদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে গত দশ বছরে সংখ্যাগুরু আবেগ আহত হয়েছে। এবং তা হয়েছে শাসক দল ও সরকারের নীতির কারণেই। আব্বাস সিদ্দিকির মতো সংখ্যালঘু নেতারাও সে কথা পষ্টাপষ্টি বলছেন। তাঁরও সাফ বক্তব্য হল, ঘোমটা দিয়ে নমাজ পড়ে, ইমামদের ভাতা দিয়ে বা মহরমের দিন বিসর্জণ বন্ধ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে মুসলমানদের ভাল কিছু করেননি। বরং সমাজে বিভাজন তৈরি করেছেন।

হিন্দু ভাইদের কাছে এই বার্তা গেছে যে মুসলমানরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। অথচ সেই মুসলমানরাই শিক্ষায় পিছিয়ে পড়েছে, কর্মসংস্থানে পিছিয়ে পড়েছে।

পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন সংখ্যালঘু ভোটের মেরুকরণের চেষ্টা করছেন। তেমনই তাঁর এই রাজনীতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে মোদী হিন্দু ভোটের মেরুকরণের চেষ্টা করছেন। আসলে এদিন প্রধানমন্ত্রী যা করেছেন, তা হল পাল্টা চাল। প্রধানমন্ত্রী হিন্দুদের বলেই দিলেন যে তোমরাও একজোট হও।

নন্দীগ্রামের বুথে যে খেলা দেখিয়েছেন দিদি, তাতেই গোটা বাংলা বুঝে গিয়েছিল যে তিনি হেরে গিয়েছেন। তৃতীয় দফার ভোটের দিন কোচবিহারে নির্বাচনী সভায় এসে এমনটাই মন্তব্য করলেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘দিদি কিনারায় দাঁড়িয়ে আছেন। তৃণমূল বাংলা থেকে সাফ হয়ে গিয়েছে। তাই তাঁর পার্টির সদস্যরাই বলছেন বাংলার বাইরে গিয়ে ভোটে লড়বেন দিদি।’

এদিন কোচবিহারের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিদি বলছেন বিজেপি ভগবান নাকি, প্রথম দুটি দফায় বড় জয় পেতে চলেছে বলে আগে থেকেই বুঝে যাচ্ছে? আমি ভগবান নই, আমি মানুষ। ভগবানের আশীর্বাদে দেশের সেবায় নিয়োজিত।’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘ময়দান ছেড়ে দিয়েছেন মমতা। যে ইভিএম. বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। সেই ইভিএম-কে দোষারোপ করছেন। নির্বাচন কমিশনে এত নালিশ করছেন। এর থেকেই প্রমানিত দিদি আপনি হেরে গিয়েছেন।’

নিজের শাসন কালের কথা স্মরণ করিয়ে নমো এদিন বলেন, ‘আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ ভোট হলে আশ্বস্ত হতাম যে আমদের জয় নিশ্চিত। এদিকে, এত শতাংশ ভোট পড়েছে তাও দিদি অভিযোগ করছেন।’

বিজেপি-র প্রকাশ করা অডিয়ো টেপ নিয়েও এদিন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘ওই অডিয়ো টেপে অনেক কিছু আছে। ১০ বছরের অনেক কিছু রয়েছে। বাংলায় নতুন ট্যাক্স চালু করেছেন এই ১০ বছরে। ভাইপো সার্ভিস ট্যাক্স। ৩৫-৪০ কোটি টাকা এক মাসে আসছে।’ এদিনের সভা থেকে ‘চলো পালটাই’ আওয়াজ তোলেন নমো। বলেন, ‘কাটমানির খেলা বিদায় দাও।’

অন্যদিকে, এদিন তৃণমূল সরকারের আমলে উত্তরবঙ্গের কোনও উন্নয়ন হয়নি বলেও সরব হন মোদী। তাঁর কথায়, ‘আমি শুনছি দিদি নাকি আজকাল হুমকি দিচ্ছেন। তাঁকে না জানালে সব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। আপনারা বিশ্বাস করেন? এটা মিথ্যা। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা সফল হবে না। কিছুই বন্ধ হবে না। আপনারা লিখে নিন, বিজেপি সরকার সবার জন্য সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা, খাদ্য, মা-বোন ও কৃষকদের আর্থিক সুবিধা দিতে থাকবে। টাকার পরিমাণ বাড়বে। থাকবে না কাটমানি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, দুর্নীতি, রাজনৈতিক বঞ্চনা। এছাড়াও প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে পিএম কিষান সম্মান নিধিকে অনুমোদন দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। সব কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৮ হাজার টাকা করে সরাসরি পাঠানো হবে। চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার বিশেষ যোজনার কথাও বলেন মোদী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here