দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মনে পড়ে, শুভেন্দু অধিকারী দল ছাড়ার দিন পনেরো আগের কথা ?
তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে কুণাল ঘোষ, ব্রাত্য বসু, কাকলি ঘোষ দস্তিদাররা রোজ প্রায় ভাঙা রেকর্ডের মতো বাজাতেন, শুভেন্দু দলের বিশিষ্ট নেতা, দলের নীতি নির্ধারন কমিটির সদস্য এবং মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
তারপর তিনি মন্ত্রিসভা ও দল ছাড়তেই তাঁকে বিশ্বাসঘাতক, মির্জাফর, ঘুষখোর—কিছুই প্রায় বলতে বাকি রাখেননি শাসকদলের নেতারা।

দীনেশ ত্রিবেদী রাজ্যসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন ২৪ ঘণ্টা হয়েছে। এর মধ্যেই নাম না করে প্রাক্তন রেলমন্ত্রীকে তীব্র কটাক্ষ করলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন কুলপির সভা থেকে অভিষেক বলেন, “এখন বলছে তৃণমূলে কাজ করতে গিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে। তাই বিজেপির আইসিইউতে ভর্তি হয়েছে। দম তো মানুষ বন্ধ করবে আগামী দিনে।” অভিষেক আরও বলেন, “যারা বাংলার মানুষের আবেগ, অহঙ্কার নিয়ে নয়-ছয় করছে, দিল্লির বুকে বিক্রি করছে তাদের জবাব দেবে মানুষই।”

দীনেশ ত্রিবেদী গতকাল কার্যত বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন রাজ্যসভায়। ছোট বক্তৃতায় অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দেওয়ার কথা বলে ইস্তফার কথা জানানোর পর, সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যারা রাজনীতির অ-আ-ক-খ জানে না তারা এখন তৃণমূলের নেতা। তবে কারও নাম করেননি তিনি। সেইসঙ্গে পরামর্শ নেওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে এজেন্সি ভাড়া করা নিয়েও তোপ দেগেছিলেন দিদির একদম প্রথম দিনের সঙ্গী।

পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলেছিলেন, দীনেশবাবু নাম না বললেও তিনি কার দিকে ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন, দলের কোন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগের স্তূপ তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তারপর এদিন অভিষেকের এই আক্রমণ শুনে অনেকেই দুইয়ে দুইয়ে চার করতে চেয়েছেন।
গতকাল থেকেই তৃণমূল নেতারা দীনেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানোর ওয়ার্ম আপ শুরু করে দিয়েছিলেন। মন্ত্রী তাপস রায় বলেছিলেন, “সবাই জানেন উনি একজন মধ্যসত্ত্বভোগী।” বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেছিলেন, “ওখানে বোধহয় দেনা-পাওনা বেশি পেয়েছেন তাই এসব বলছেন।” এদিন প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর দিকে আক্রমণ ধেয়ে গেল দলের সর্বোচ্চ স্তর থেকে।


রাজনীতিতে কখন কী হয় বলা যায় না। এই দীনেশ ত্রিবেদীর প্রচারে গিয়েই অভিষেক লোকসভা ভোটে চ্যালেঞ্জ করে এসেছিলেন, “দীনেশ ত্রিবেদীকে ব্যারাকপুর থেকে দু’লক্ষ ভোটে জেতাব। একটা ভোট কম হম হলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।” সেই ভোটে দীনেশের প্রতিপক্ষ ছিলেন অর্জুন সিং। আর দীনেশ রাজ্য সভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর অর্জুন তাঁকে বিজেপিতে স্বাগত জানিয়েছেন। বলেছেন, “দীনেশদা আমার দাদার মতো। সজ্জন মানুষ।” আর অভিষেক নাম না করে বললেন, মানুষ আগামী দিনে দম বন্ধ করে দেবে।

এদিন,একুশের ভোটের মুখে বিজেপি-কে ফের চ্যালেঞ্জ জানালেন তৃণমূল যুব সভাপতি তথা ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । শনিবার কুলপির সভায় অভিষেক বিজেপি-র দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘২৫০-এর বেশি আসন পেয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা । আগামী ৫০ বছর পর্যন্ত বাংলার মাটিতে তৃণমূল থাকবে। চ্যালেঞ্জ করছি। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৩১ শে ৩১ হবেই। বিজেপি যতই চেষ্টা করুক না, মানুষের হদয় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাতে পারবে না’। ‘বলছে বাংলার জনতা, নবান্নে আবার মমতা’ স্লোগান তোলেন অভিষেক।

বিজেপি-কে নিশানা করে এদিন অভিষেক আরও বলেছেন, ‘বলছে, সোনার বাংলা গড়বে। ঠিকমতো উচ্চারণই করতে পারেন না। আগে সোনার মধ্যপ্রদেশ, সোনার উত্তরপ্রদেশ বানাও তারপরে সোনার বাংলা গড়বে। মহিলাদের অসম্মান করছেন আপনারা। দিলীপ ঘোষ মা দুর্গাকে অপমান করেছেন। যাঁরা মহিলাদের অসম্মান করেছেন, তাঁদের যোগ্য জবাব দেবেন মানুষ। উন্নয়নের নিরিখে নির্বাচনে লড়ার হিম্মত রয়েছে বিজেপি-র? টাকা দিয়ে ভালোবাসা হয় না।’

পদ্মবাহিনীকে আক্রমণ করে তৃণমূল সাংসদ এদিন বলেন, ‘বলছে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার গড়বে। ৫ ফুট দু ইঞ্চির মহিলাকে মোকাবিলা করতে দেশের সব জায়গা থেকে নেতা আনছে। কেন রাজ্য ও কেন্দ্রে একই সরকারের প্রয়োজন? চুরি করে যাবে চোর ধরা পড়বে না, সেজন্য? উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানায় যেমন চোর ধরা পড়ে না। নির্লজ্জ’। মীরজাফর অ্যান্ড কোম্পানির জামানত বাজেয়াপ্ত হবে বলেও এদিন মন্তব্য করেন অভিষেক। ভোট শেষ হওয়ার আগে বিজেপি-কে জয় সিয়ারাম বলতে হবে বলেও এদিন সোচ্চার হন সাংসদ।

অমিত শাহকে নিশানা করে অভিষেক বলেছেন,’অমিত শাহ কী করে তৃণমূলকে উপড়ে ফেলবেন? তৃণমূল কি হোর্ডিং নাকি? মানুষের মন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাবেন কীভাবে? মমতা মানুষের মনে রয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমার নাম নিচ্ছেন না। নাম নিতে ভয় পাচ্ছেন কেন? আপনি আমার নাম নিয়ে কথা বলতে পারছেন না কেন? আপনার এই ভয় ভালো লাগছে। আমি তো নাম নিয়ে বলছি অমিত শাহ বহিরাগত, কৈলাস বিজয়বর্গীয় বহিরাগত, রাজনাথ সিং বহিরাগত, দিলীপ ঘোষ গুণ্ডা’। অভিষেক এদিন আরও বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যদি এতটুকু কোনও প্রমাণ থাকে তোমাদের কাছে, তাহলে ইডি- সিবিআই দিয়ে চমকাতে হবে না। একটা ফাঁসির মঞ্চ করবেন, আমি মৃত্যুবরণ করব’। অন্যদিকে, এদিন অভিষেকের সভায় গরহাজির থেকে জল্পনা বাড়িয়েছেন রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী রায়।

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1108177519626197&id=514874341860035

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here