দেশের সময়ঃ বৃহ:স্পতি বার সকালেও আকাশের মুখ ভার। কখনও ইলশেগুঁড়ি, কখনও মাঝারি থেকে ভারী নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ব্যাহত হচ্ছে পুজোর প্রস্তুতি। কেনাকাটাই হোক বা প্রতিমা তৈরি, মণ্ডপ নির্মাণই হোক বা চাঁদা তোলা, ঘূর্ণিঝড় তিতলির দাপটে ছন্দ কেটেছে সর্বত্র। কপালে ভাজ পড়েছে পোশাক বিক্রেতাদের। বৃষ্টিতে কলকাতা থেকে উওর ও দক্ষিণ ২৪পরগনা৷দিঘা থেকে হলদিয়া তমলুক৷কাঁথি থেকে এগরা,রানীশ্বর থেকে ঝাড়খন্ড প্রায় সবর্ত্রই শেষ মুহূর্তে পুজো প্রস্তুতি থমকে। যে–‌সব কাজ ইতিমধ্যে হয়েছে, তা–ও বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে। ফলে, মাথায় হাত পুজো কর্তাদের। সবার মুখে এখন একটাই প্রশ্ন, ঠিক কবে আকাশ ঝলমলে হবে?

আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবার ওডিশার দিক থেকে বাঁক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মূল ভূখণ্ডের দিকে এগোনোর সঙ্গে শক্তি হারাবে ঝড়। তখনও এর জেরে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টি হবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। ১৩ তারিখ পর্যন্ত দাপট দেখাবে তিতলি। এদিকে, বুধবার দিনভর প্রবল বৃষ্টির জেরে বেশ কিছু জায়গায় জল জমে গিয়েছে । ফলে, সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। পুজোর আর ৪ দিন বাকি। এর মধ্যেই সারতে হবে সব কিছু। তাই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। একটা সময়ে পুজো উদ্যোক্তারা চিন্তায় ছিলেন বাজেট নিয়ে। বাজেট কম হলে যদি জাঁকজমক কমে যায়। তখন অন্য পুজোগুলো জৌলুসে এগিয়ে যাবে! আর তা হলে তো ষোলো আনাই লোকসান।
পুজোয় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা শুনে প্রায় সব পুজো উদ্যোক্তার মুখে মুখে ঘুরছে, বৃষ্টিতে এবার পুজোর আনন্দটাই না মাটি হয়ে যায়! বনগাঁ অভিযান সংঘের ক্লাব সম্পাদক তুহীন ঘোষ বলেন, ‘‌বৃষ্টিতে মণ্ডপের আশপাশের পরিবেশ সাজানো–গোছানোর কাজ তো সেভাবে করাই যাচ্ছে না।’‌ বনগাঁ মহকুমা শহর ছাড়াও বারাসত,হাবড়া,অশোকনগরে বেশ কিছু বিগ বাজেটের পুজো হয়। পুজো কমিটিগুলি নানা থিম তুলেছে এবারও সকলেই চায় একে অপরকে টক্কর দিতে। কিন্তু, এখন কে কাকে ছাপিয়ে গেল, তা দেখার আগে নিজেদের মণ্ডপের কাজ শেষ করতেই ব্যস্ত পুজো উদ্যোক্তারা। যে–‌সব পুজো কমিটি থিম তৈরি করছে, এই দুর্যোগে সমস্যা বেশি তাদেরই। কারণ, বৃষ্টিতে বিভিন্ন কারুকার্য নষ্ট হচ্ছে। তাই দুর্যোগে মুখ ভার পুজোর কর্তাদের। বনগাঁ মতিগঞ্জ ১৫ পল্লীর ক্লাব সদস্য বিশ্বজীৎ কুন্ডু বলেন, ‘এভাবে বৃষ্টি চললে চিন্তা বাড়ছে,ইছামতীর জল বাড়বে ,আর সেই জলে বন্যার আশঙ্কা থেকে যায় । কাজ করতেও সমস্যা হচ্ছে। দুর্গাপুজো বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব। আর সেই পুজোর আকাশেই কি না দুর্যোগের মেঘ।’‌
বৃষ্টির কারণে প্রস্তুতিতে যে বিঘ্ন ঘটছে, তা মেনে নিয়েছেন বনগাঁ আয়রন গেট ক্লাবের সম্পাদক শঙ্কর আঢ্য। একই রকম সমস্যায় পড়েছেন শহরের বাকি পুজো উদ্যোক্তারাও। বনগাঁ৩নং টালিখোলা এগিয়েচল সংঘের কর্ণধার বিশ্বজীৎ দাস বলেন শিশুদের মুখের দিকে তাকালে বেশি মন খারাপ লাগছে,পুজোর মন্ডপের সামনে ওরা ছোটা ছুটি,খেলা ধূলা করতে পারছেনা,মনে হচ্ছে পুজোই আসেনি এখনও,যেন ঘোর বর্ষা৷পুজো উদ্যোক্তাদের মতো ঘূর্ণিঝড় তিতলির ওপর বেজায় ক্ষিপ্ত পোশাক বিক্রেতারাও। পুজোর আগে এমন বৃষ্টি তাঁদের হতাশ করেছে। প্রত্যেকেরই একই আক্ষেপ, সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত শুধু বসে বসে বৃষ্টি দেখতে হচ্ছে। একই অবস্থা ঝাড়খন্ডের বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তাদেরও। অনেক পুজো কমিটি এখনও প্রতিমা ও মণ্ডপের কাজ শেষ করে উঠতে পারেনি। ঝড় বৃষ্টির জেরে দুর্ঘটনা এড়াতে ঝুঁকি নিয়ে ডেকোরেটর কর্মীদের কাজ করতে নিষেধ করেছেন কর্মকর্তারা। কিছু ঘটলে তাঁদের দায় নিতে হবে।
পুলিসের পক্ষ থেকে পুজো কমিটিগুলিকে জানানো হয়েছে রাস্তায় তোরণ থাকলে বৃষ্টির মধ্যে তার ওপর কিছু লাগানো যাবে না। ভেঙে পড়তে পারে। ঝড়ে কাত হয়ে গেলে সেই তোরণ খুলে ফেলতে হবে। বনগাঁ শান্তী সংঘের সম্পাদক জানান, শক্তিরূপিনী মা’‌য়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি,মন্ডপের পুরো কাজটাই খোলা আকাশের নিচে। ঝড়–বৃষ্টির জন্য কাজ থমকে গেছে।বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ জানান বিগত দিনে ২০০০সালের বন্যার দুর্যোগ অতিক্রম করেছেন বনগাঁর মানুষ৷’তিতলি “র জন্য সমস্ত রকম প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাস’ন।এই দুর্যোগ কাটিয়ে,দূর্গা পুজোর অানন্দে মাতবেন সাধারন মানুষ,এই আশা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here