বিশেষ প্রতিবেদন
দেশের সময়ঃ-এদেশে ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৬সাল থেকে ৭৭ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন,তারপর ১৯৮০ থেকে ৮৪ সালে মৃত্যুকালীন সময়েও তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদেই ছিলেন,অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবার চুতুর্থবারের জন্য শপথ নিতে যাচ্ছেন।সেদিক থেকে দুদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস দুই মহিলার রাজনৈতিক প্রতিপত্তি দীর্ঘায়িত হওয়ারই স্বাক্ষ্য দিচ্ছে।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে ইন্দিরা গান্ধীর অবদানের কথা শেখ হাসিনার পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়,ভোলেন নি তিনি,বার বার সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।আর শেখ হাসিনার সেই কৃতজ্ঞতার বাঁধনে বাঁধা পড়ে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন একেবারেই আত্মীয়তার।সেই কারণেই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে শেখ হাসিনার অভাবনিয় সাফল্যে খুশি ভারতবাসীও,শেখ হাসিনার নৌকার এই তরতরিয়ে এগিয়ে চলা ভারতবাসীর মনেও খুশির দোলা দিয়ে যাচ্ছে।আর এই বঙ্গের মানুষ,তারা তো মনে মনে বিশ্বাস করেন কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা বাংলাদেশ অন্য রাষ্ট্র হলেও,ওদেশের সঙ্গে আমাদের নাড়ির যোগ,ওদেশের রাস্তায়-এলাকা এলাকায় এখানকার কতমানুষের কত স্মৃতী এখনও জড়িয়ে আছে তার কোন হিসেব কেউ জানে না।বাংলাদেশ আর বাঙালিকে কোনভাবেই আলাদা করা যায় না।রাষ্ট্রীয় কোন নিয়ম কানুন বা রীতি নীতি দিয়েও বাঙালির মন থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়।শেখ হাসিনাকে বাঙালি বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের উত্তরাধিকার বহনের সূত্রেই নিঃশর্ত সমর্থনের আশ্বাস দিয়ে বসে আছে।বাঙালি তাই খুশি,আল্লাদিত নৌকার বিজয় অভিযান সম্পূর্ণ হওয়ায়।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের উপর দিয়ে অনেক ঝড়-ঝাপটা গেছে,নতুন করে আবার সম্প্রদায়িক শক্তি মাথা তুলতে চেয়েছে,বিভাজনের রাজনীতির স্বার্থে উসকে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে,ধর্মীয় মৌলবাদকে।যুক্তিবাদী-বিজ্ঞানমনস্ক মানুষজন বার বার আক্রান্ত হয়েছেন,খুন হয়েছেন।আর এসবই হাসিনার সরকারের ব্যর্থতা বলে চিহ্নিত হতে শুরু করেছিল।এপার বাংলায় বসে আমাদেরও মনে হচ্ছিল তবে কী হাসিনার সরকার তার উদার গণতান্ত্রীক বোধ ভাবনাকে পরিহার করে এবার সেই মৌলবাদী,সংস্কারাচ্ছন্ন মতকেই বেছে নেবে?তবে কী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-নীতি থেকে সরে যাবেন তাঁর আত্মজা?শেষ পর্যন্ত অবশ্য আবার শেখ হাসিনাকে আমরা সেই সংবেদনশীল চেহারাতেই দেখলাম,দেখলাম আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে,রাজনীতির উর্দ্ধে মানবিকতার পক্ষ নিতে।দেশের অর্থনীতিতে চাপ পড়বে জেনেও তিনি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াবার প্রতিশ্রুতি দেন।ভরসা ও বিশ্বাস আবার ফিরে আসে আমাদের,নানা সমস্যা থাকলেও শেখ হাসিনার হাতেই নিরাপদ বাংলাদেশ।
এবারের নির্বাচন নিয়ে অবশ্য উদ্বেগ ছিল,কারণ হাসিনার বিরোধীরা একজোট হয়েছিল,সেই জোটে এমনকী বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা বিরোধীরাও সামিল হয়েছিল।যাদের হাতে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত লেগে তারা যখন গণতন্ত্রের দরবারে ভোটের প্রত্যাশী হতে এগিয়ে আসে তখন ভয় হয় বইকী!তবে শেষ পর্যন্ত কোন প্রভাব ফেলতে পারে নি তারা,বাংলাদেশের মানুষ ভোটে তাদের ধরাশায়ী করেছেন,অভাবনীয় জয় এনে দিয়েছেন শেখ হাসিনাকে।হাসিনার এই জয়কে ঐতিহাসিক জয়ই বলা যায়,কারণ বাংলাদেশকে নানা ভাবে উত্তপ্ত করার নানা প্রযাস সত্ত্বেও যেভাবে শেখ হাসিনা ও তাঁর সহয়োগীদের সমর্থন উজাড় করে দিযেছেন সাধারণ মানুষ তাতে এই রাযকে ঐতিহাসিক বলা যায় নিশ্চযই।এবার দায়িত্ব আর বাড়ল শেখ হাসিনার,তাকে প্রমাণ করতে হবে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী।শক্তহাতে মৌলবাদকে দমন করতে হবে,দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ খুঁজতে হবে।আন্তর্জাতিক স্তরে সম্পর্ককে আর দৃঢ় করতে হবে।রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা চালাতে হবে,আর্ত-পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।আমরা বিশ্বাস করি তিনি পারবেন,কারণ তিনি তো বঙ্গবন্ধু মুজিবরের উত্তরাধিকার বহন করছেন,যে রাজনীতির মুল কথা ছিল মানবিকতা,স্বকীয় আত্মমর্যাদা,আর সততা।আজকের পঙ্কিল রাজনীতির মধ্যেও হাসিনাকে তাঁর উত্তরাধিকার ভুলে গেলে চলবে না,তা হলে তা হবে আত্মহননের সামিল।মানুষ হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছেন দুহাত ভরে তাই তিনি তাঁর দৃঢ় অবস্থান নেবেন আশা করা যায়।নির্বাচনে যে হিংসা-হানাহানি হয়েছে তা কাঙ্কিত ছিল না,নতুন সরকার তার দায় নিক,তদন্ত করুক সেটাই প্রত্যাশা।ক্ষমতা দায়িত্ব বাড়ায়,রাজনীতির এই গোড়ার কথাটা মনে রাখবেন হাসিনা আশা করা যায়।এপার বাংলা হাসিনার আর আর সাফল্য দেখার উপেক্ষা করছে।ইন্দিরা গান্ধী এ দেশের রাজনীতিতে যে অপার প্রভাব বিস্তার করেছিলেন একসময়,ঠিক একই রকমভাবে আমাদেরই পাশের রাষ্ট্রেও এক মহিলার অপার রাজনৈতিক প্রভাব তৈরি হতে যাচ্ছে,ভারতবাসী তার সাক্ষী হতে উদগ্রীব হয়ে আছে তা বলাই বাহুল্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here