দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা পৌঁছলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৷ তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ বুধবার সকালে ১১টা নাগাদ রাজধানী ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে ভারতের রাষ্ট্রপতির বিশেষ বিমান।

ঠিক তার আগে অর্থাৎ মঙ্গলবার গভীর রাতে ফের সে দেশের বেনাপোল স্থল বন্দর এলাকায় ভারতীয় ট্রাক চালকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন সূত্রে৷

পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ এ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘ওপার বাংলার বেনাপোল একটি সুসংহত পোর্ট। অথচ সেখানে কোন রকম নিরাপত্তা নেই বললেও কম বলা হবে৷ চলতি ডিসেম্বর মাসের ৪ তারিখ কটন সামগ্রী বোঝাই একটি ট্রাক নিয়ে বাংলাদেশের বেনাপোলে যায় ভারতীয় ট্রাক। ৯ ডিসেম্বর রাতে সেই ট্রাকের পন্য ছিনতাই করার চেষ্টা করে বাংলাদেশের দুষ্কৃতিকারীরা। তাতে বাধা দিতে গেলে ওই ট্রাকের চালক উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা হৃষিকেশ যাদবের উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।

সেই হামলায় পিঠে গুরুতর আঘাত পান ওই চালক। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে তাঁকে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরে তাঁকে ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তাঁর পিঠে ১৯ টি সেলাই পরে ৷ হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভও দেখান ট্রাকচালকেরা পেট্রাপোল বন্দরেএলাকায়৷ সেই ঘটনার জের কাটতে না কাটতেই ফের বেনাপেল বন্দর এলাকায় মঙ্গলবার গভীর রাতে অন্তত ১০থেকে ১২ জন ভারতীয় ট্রাক চালকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন এ দেশের ট্রাক চালক ও হেলপারেরা।এটা খুবই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দু’দেশের সীমান্ত বাণিজ্যে৷ বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনএ বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করছেনা বলেই ধারণা সীমান্ত বাণিজ্য মহলে ’‌ ৷

এই ঘটনায় ট্রাক চালকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাক চালকদের কথায়, এমন ঘটনা প্রথম নয়, এর আগেও কখনও স্প্রে করে অজ্ঞান করে, আবার কখনও সরাসরি হামলা চালিয়ে বেনাপোল বন্দর এলাকা থেকেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তায় ঘেরা সেদেশের বন্দর এলাকার মধ্যে বার বার এই ধরনের ঘটনা ঘটলেও সেদেশের বন্দর কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

এব্যাপারে জনপথ পরিবহন মজদুর ইউনিয়নের সম্পাদক আনন্দ বিশ্বাস বলেন,

বেনাপোল সীমান্তে(Benapole border) ক্রমেই বাড়ছে ছিনতাইবাজদের দৌরাত্ম্য। ভারত-বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনে(Transport of goods between India and Bangladesh) করোনাকালীন বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর থেকে এই এলাকায় নতুন করে খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, ডাকাতির পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। প্রতি সপ্তাহেই ট্রাক চালকদের ভয় দেখিয়ে টাকা ছিনতাইয়ের খবর সামনে আসছে। বুধবারও ঘটল এমনই এক ঘটনা। বেনাপোলে ছিনতাইবাজদের(Snatcher in Benapole) হাতে আবার আক্রান্ত হলেন ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার(Indian truck driver)। মঙ্গলবার গভীর রাতে বেনাপোলে কয়েকজন ড্রাইভারকে মারধর করে লক্ষাধিক টাকা ও মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগ সামনে এসেছে। এদিকে লাগাতার এই ধরণের ঘটনা ঘটতে থাকায় স্বভাবতই উদ্বেগ বাড়ছে ট্রাক চালকদের মধ্যে।


সেই সমস্ত দুদষ্কৃতিদের মুখোমুখি হয়ে প্রতিবাদ করলেই গলায় ছুরি ধরে করা হচ্ছে মারধর। বেনাপোলের সরকারি কর্তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ ট্রাক চালকদের। এদিনের ঘটনা ঘটতেই নতুন করে ক্ষোভের আগুন ছড়ায় ট্রাক চালকদের মধ্যে। বুধবার সকাল হতেই ভারতীয় ট্রাক চালকরা পেট্রাপোল মুখ্য ভবনে অভিযোগ জানিয়েছেন । অতি দ্রুত সমস্যা সমাধানের আর্জি জানিয়েছেন তারা। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে তারা কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের বেনাপোলে পণ্য খালাস করতে গিয়ে ছুরিকাহত হয়েছিল এক ভারতীয় ট্রাক চালক। তাঁর কাছ থেকে জিনিসপত্র নিয়ে পালায় ওই ছিনতাইকারীরা। সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পেট্রাপোল আইসিপি গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল ট্রাক চালকরা। পেট্রাপোল বন্দরের ৩ নম্বর গেটের সামনে চলে বিক্ষোভ। ফের নতুন করে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় স্বভাবতই ক্ষোভ বাড়তে থাকে সকলের মধ্যে।

তিনি আরও এর আগে বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু তারা এব্যাপারে কর্ণপাত করছে না। যার কারণে এদিন ফের হামলার ঘটনা ঘটলো।‌ ‌আধিকারিকদের গাফিলতি, অলসতার কারণেই এমন হামলার ঘটনা বার বার ঘটছে। আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা বন্ধ না হলেবৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে আমাদের শ্রমিকেরা।’ আগামী দিনে এমন ঘটনা বন্ধ না হলে ট্রাক চালকদের বৃহত্তর আন্দোলনকে ক্লিয়ারিং এজেন্টরাও সমর্থন জানাবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

অন্যদিকে, বাংলাদেশের বিজয় দিবসের (১৬ ডিসেম্বর) সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিব বর্ষের সমাপনী দিবস উদযাপন ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর করছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আবদুল হামিদ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। কোবিন্দকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। তাঁর সঙ্গে ভারতের ফার্স্ট লেডি, রাষ্ট্রপতির কন্যা, ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, দু’জন সংসদ সদস্য এবং ভারতের বিদেশ সচিব-সহ ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা রয়েছেন।

এদিন ঠাসা কর্মসূচী রয়েছে রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের। এদিন ঢাকার অদূরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করার পর দুপুরে ধানমন্ডি ৩২-এ অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন তিনি।

বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিদেশমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সাক্ষাতে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। ভারতের রাষ্ট্রপতি ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে অংশ নেবেন।

একই দিন বিকেলে রামনাথ কোবিন্দ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক মুহূর্তে জাতির জনকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, রক্তস্নাত বিজয়ের আবেগ ও আনন্দ উদ্‌যাপনের জন্য আয়োজিত ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। করোনা মহামারি শুরুর পর এটাই ভারতের রাষ্ট্রপতির প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। সফরের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ঢাকার রমনায় কালী মন্দিরের সদ্য সংস্কার করা অংশের উদ্বোধন করবেন এবং মন্দিরটি পরিদর্শন করবেন। এদিন দুপুরে তিনি দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।

রাষ্ট্রপতির এই সফর নিয়ে বিদেশমন্ত্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ‘‌অতিমারি পর্বের পর এই প্রথম রাষ্ট্রপতির বিদেশ যাত্রা। এর থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

সীমান্ত ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যবসায়ী প্রদীপ দে বলেন ,গত মার্চেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকা গিয়েছিলেন। এর মধ্যে বিদেশমন্ত্রীও বাংলাদেশ সফর করেছেন। দু’দেশের নেতাদের মধ্যে এমন অসামান্য সংযোগ খুব কম দেশের মধ্যেই রয়েছে, পাশাপাশি দু’দেশের বাণিজ্যে প্রধান সড়ক পথ ও স্থল বন্দরের ঘটনায় দিনদিন গতি হারাচ্ছে সীমান্তবাণিজ্য , ট্রাক চালক ও ট্রাক মালিক সহ সমস্ত ব্যাবসায়ীদের কাছে এখন আতঙ্কের আরেক নাম বেনাপোল ’‌ ৷

প্রকৃত ভাবে এই প্রশ্রই উঠছে বেনাপোল বন্দরে ভারতীয় ট্রাক চালকদের উপর লাগাতার দুষ্কৃতিকারীদের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে৷ দু’দেশের সীমান্ত বাণিজ্যে তার প্রভাবও পড়েছে তা স্পষ্ট সীমান্তের বাবসায়ীদের কথায়৷ এখন দেখার দু’দেশের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here