দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদে দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ফিরোজ কামাল গাজি ওরফে বাবু মাস্টারও দলের বিরুদ্ধে বেঁকে বসেছিলেন। শুক্রবার তিনিও জেলা পরিষদের সভাধিপতির কার্যালয় নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর আগে খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ রতন ঘোষও পদত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন৷

বাবু মাস্টারের অভিযোগ, তৃণমূলের জেলা পরিষদে জনৈক প্রভাবশালী নেতার অঙ্গুলিহেলনে সবকিছু চলছে। জেলা পরিষদে দমবন্ধ করা পরিবেশ। সম্মানের সঙ্গে কাজ করা যাচ্ছিল না। তবে, বিজেপিতে যোগ দেবেন কি না, সে উত্তর তিনি দেননি। বলেন, ‘সময় আসুক সব দেখতে পাবেন।

বাবু মাস্টারের তৃণমূল থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত তাত্‍পর্যপূর্ণ। মমতার দলের জন্য বড় ধাক্কাও। কারণ, বাবু মাস্টার হাসনাবাদ বসিরহাট মহকুমা বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভোট মেশিনারি নিয়ন্ত্রণ করেন।

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেই তাঁর অনুগামীরা যে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন, তা নেতৃত্বের জানাই ছিল। শুভেন্দু নিজেও ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেন, ১০ বিধায়ক তাঁর সঙ্গেই তৃণমূল ছাড়বে। দলে শুভেন্দুর এই অনুগামীদেরই ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েক ঘণ্টায় একাধিক নেতা পদত্যাগ করেন। ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত ছাড়াও শুক্রবার দল ছাড়লেন শুভেন্দু অনুগামী হিসেবে পরিচিত পুরুলিয়ায় দুই তৃণমূল নেতা।

আরও এক বিধায়ক তৃণমূল ছাড়লেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে দল ছাড়ার কথা জানিয়ে দিলেন কাঁথি উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বনশ্রী মাইতি।

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যখন তৃণমূলের দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছে, শুভেন্দু যখন একের পর এক অরাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন তখন বনশ্রীকে দেখা গিয়েছিল শুভেন্দুর মঞ্চে তখনই গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। সেটাই সত্যি হল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।
শুভেন্দু অধিকারী বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেই যেন লকগেট খুলে গেছে। একের পর এক বিধায়ক, নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী তৃণমূল ছাড়ছেন।

কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী, জিতেন্দ্র তিওয়ারি, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ডানকুনির প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশিস মুখোপাধ্যায়– সব মিলিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতি সরগরম, তখনই কাঁথি উত্তরের বিধায়িকার ইমেল গেল কালীঘাটে।


শুভেন্দু শিবিরের দাবি, শনিবার মেদিনীপুর কলেজিয়েট ময়দানে দাদার সঙ্গে আরও অনেক বিধায়ক অমিত শাহের সভায় বিজেপিতে যোগ দেবেন। বনশ্রী মাইতি তাঁদের মধ্যে অন্যতম হতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিন ইস্তফা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন রঘুনাথপুর প‌ুরসভার প্রাক্তন প্রধান, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ভবেশ চট্টোপাধ্যায়। এই দিনই জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতর ছেলে সুদীপ মাহাতও তৃণমূল ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন। বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুদীপ তৃণমূলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি পদেও ছিলেন। সূত্রের খবর, শুক্রবার দু’জনেই দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ও জেলা সভাপতি গুরুপদ টুডুর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। তবে, গুরুপদ এমন কোনও চিঠি পাওয়ার কথা অস্বীকার করেন।

একই দিনে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বর্ষীয়ান নেতা প্রণব বসু। শুভেন্দুর সঙ্গে তিনিও বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন বলে খবর। শনিবার অমিত শাহের সভায় তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন বলে প্রণব বসু নিজেই জানিয়েছেন।

ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘কারাগারে বন্দির মতো থাকতে হচ্ছিল। এই দলে কাজ করা যাচ্ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে দল করেছিলাম। এখন সেটা কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। তাই থাকা সম্ভব হল না।’ অর্থাত্‍‌ প্রশান্ত কিশোরের টিমকেই টার্গেট করেছেন ভবেশ।

দল ছাড়ার কারণ হিসেবে সুদীপ মাহাত বলেন, ‘তৃণমূল নেতাদের একাংশের অহংকার ও ঔদ্ধত্যের জন্য আমি দল ছাড়লাম। যাঁরা এখন ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছেন তাঁরা তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে দলে এসেছেন।’ তাঁরা কি বিজেপিতেই যোগ দিতে চলেছেন? সরাসরি সে উত্তর এই দুই নেতা দেননি। তবে, জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী যে পথে হাঁটবেন সেই পথই তাঁরা অনুসরণ করবেন। অর্থাত্‍‌ এই দুই নেতাও বিজেপিতে যাচ্ছেন। বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী এদিন বলেন, ‘তৃণমূলে থেকে কাজ করতে না-পারায় অনেকেই যোগাযোগ করছেন। সেই তালিকা অনেক লম্বা। সকলকেই স্বাগত জানাতে তৈরি আমরা৷

আর এক শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ প্রণব বসু দীর্ঘ দিন ধরে মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। পুরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাঁকেই পুরসভার প্রশাসক পদে বসায় তৃণমূল। কিন্তু, শুভেন্দু অধিকারী বেসুরো হতেই গত ১৮ নভেম্বর তাঁকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেয় দল। তার পরই দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ে। ১ ডিসেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মেন্টর পদ থেকেও পদত্যাগ করেন প্রণব। তার পর থেকেই প্রণবকে নিয়ে জল্পনা ছিল। শুভেন্দু দলত্যাগ করার অপেক্ষাতেই ছিলেন মেদিনীপুরের এই নেতা। শুক্রবার তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। টিএমসির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাপতি অজিত মাইতিকে চিঠি লিখে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন বর্ষীয়ান প্রণব। সরাসরি মমতা ও অভিষেকের বিরুদ্ধে তোপ দেগে প্রণব বলেন, ‘তৃণমূলে পিসি-ভাইপো যে ভাবে কাজকর্ম চালাচ্ছেন, তাতে তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারা যাচ্ছে না। তাই দম বন্ধ হয়ে আসছিল। সে কারণেই তৃণমূল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

অনেকের মতে, সবাই যেন শুভেন্দুর দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। কবে নন্দীগ্রামের বিধায়ক ইস্তফা দেন বা দল ছাড়েন। সে সব সম্পন্ন হতেই যেন ভেঙে গিয়েছে। এখন নজর শনিবাসরীয় দুপুরে মেদিনীপুর কলেজিয়েট ময়দানে অমিত শাহের সভায়। কে কে যান সেটাই দেখার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here