দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ জুলাই মাসে বদল হয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতি। তারপর থেকেই এই পরিবর্তিত নীতি নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা শুরু করেছে বিরোধী দলগুলি। এরমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করলেন, কোনও দল বা সরকার নয়, দেশের ভালর জন্য এই জাতীয় শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন করা হয়েছে। তাই এই শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ ন্যূনতম হওয়া উচিত বলেই দাবি জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে গভর্নর্স কনফারেন্সে এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এই কনফারেন্সে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী, বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অন্যান্য সরকারি আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। কনফারেন্সের শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “দেশের স্বপ্ন সত্যি করার মাধ্যম হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষানীতি। কেন্দ্র, রাজ্য সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, সবাই এই শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এটা ঠিক যে এই শিক্ষানীতিতে সরকারের হস্তক্ষেপ ন্যূনতম হওয়া উচিত। যেমন দেশের বিদেশনীতি, প্রতিরক্ষানীতি হয় দেশের জন্য, কোনও সরকারের জন্য নয়, তেমনই শিক্ষানীতিও।
এটা ভারতের নাগরিকদের জন্যই। তাই সরকার বদল হতেই পারে। সব সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যেন কোনও আপোষ না করা হয়।”
মোদী নিজের বক্তব্যে আরও বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এই শিক্ষানীতিতে এই প্রথমবার ছাত্র-ছাত্রীদের উপর থেকে কোনও নির্দিষ্ট শাখা নেওয়ার চাপ কমানো হয়েছে। এই শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য হল জানা। পড়া নয়। বিষয়কে আত্মস্থ করে সেটা নিয়ে চিন্তা করার শিক্ষা দেওয়া হবে। ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশ্ন করবে, তবেই তো তারা আরও অনেক বেশি জানতে পারবে। সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের চিন্তার মাধ্যমকে উন্নত করার লক্ষ্য নিয়েছে বলেই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভারতবর্ষকে শিক্ষার প্রাচুর্য্যের এক কেন্দ্রস্থলে হিসেবে গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা নিয়েছে সরকার, এমনটাই এদিন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা ভারতের অর্থনীতিকে শিক্ষার সঙ্গে যোগ করতে চাই। মানুষের চিন্তা যাতে থেমে না যায়, তার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরের শিক্ষা দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। একদম গরিব ঘরের ছেলে-মেয়েরাও যাতে সমান শিক্ষা পায়, তার চেষ্টা করছে সরকার৷
তবে যাতে এই চেষ্টা বাস্তবায়িত হয় তার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। যত বেশি শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীরা এই শিক্ষানীতির সঙ্গে যুক্ত হবেন, তত এই নীতির কার্যকারিতা বাড়বে।”
জুলাই মাসে বদল হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতির আওতায় আনা হয়েছে ৩ থেকে ১৮ বছরের পড়ুয়াদের। দশম বা দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার গুরুত্ব কমানো হয়েছে। প্রতি বছর পরীক্ষার বদলে তৃতীয়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। মুখস্থ বিদ্যার বদলে হাতেকলমে শিক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে।
দশম শ্রেণির পর কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের তফাৎ উঠে যাচ্ছে। অর্থাৎ পড়ুয়ারা ইচ্ছেমতো বিষয় নিয়ে পড়তে পারে। এছাড়া পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষা ও আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বলা হয়েছে কারও উপর জোর করে কোনও ভাষা চাপিয়ে দেওয়া চলবে না। এই নতুন শিক্ষানীতি নিয়ে অবশ্য ইতিমধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে একাধিক রাজ্য।