দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের চমক দিলেন। বুধবার সাতসকালে টুইট করে প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির উদ্দেশ্যে বড় খবর তিনি দেবেন। সেটা দেশের মানুষের কাছে বড় ঘোষণা। এই টুইট নিয়ে সকাল থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। মজা করে অনেকে বলতে শুরু করেন, মোদী নাকি এবার নির্বাচনে বারাণসী থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না ঘোষণা করতে চলেছেন। পারদ যখন তুঙ্গে উঠেছে তখন তিনি জাতির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল দিয়ে মহাকাশে ভারত কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করেছে। আর এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উৎসাহের পারদ শূন্যে নেমে যায়।
এক নজরে দেখে নিন নিজের ভাষণে আর কী কী বললেন প্রধানমন্ত্রী।
• আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের কাছে এত দিন এই প্রযুক্তি ছিল।
• লো-আর্থ অরবিটের একটি কাজে না লাগা কৃত্রিম উপগ্রহকে ধ্বংস করে অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইলের কার্যকারিতা সফল ভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে।
• মাত্র তিন মিনিটেই এই অপারেশন শেষ হয়েছে।
• দেশের ১৩০ কোটি মানুষের নিরাপত্তার জন্যই আমাদের এই মহাকাশ অপারেশন।
• নতুন শক্তিশালী ভারত কারও বিরুদ্ধে নয়।
এদিন জাতির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ভারত বিশ্বের চতুর্থ দেশ যারা মহাকাশে অন্যতম শক্তি। কারণ ভারতের কাছে আছে অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল। এই মিসাইল আর মাত্র তিনটি দেশের কাছে আছে। আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীন। তিন মিনিটে এই অপারেশন চালিয়ে তা ধ্বংস করা হয়েছে। এই অপারেশনের নাম ছিল মিশন শক্তি।
অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল দিয়ে কক্ষপথে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহকে ধ্বংস করা হয়েছে।’ এই ঘোষণাকে রাজনৈতিক চমক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কারণ মঙ্গলবারই বিজেপি নেতার বেআইনি টাকা নোট বাতিলের পর সময়সীমা অতিক্রম করে পাল্টানোর ভিডিও প্রকাশ করে মহাজোট বাহিনী। সেখান থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই এই চমক দেওয়ার চেষ্টা বলে মনে করছেন অনেকে।
তিনি এদিন দেশের মানুষকে কাছে টানারও চেষ্টা করেছেন। কৌশল অবলম্বন করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘আমরা যে ক্ষমতা অর্জন করেছি তা কারও বিরুদ্ধে প্রয়োগের জন্য নয়। দেশের ১৩০ কোটি জনগণের সুরক্ষার জন্যই এটা তৈরি করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এটা অনেক চেষ্টা করে তৈরি করেছেন। তার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। অত্যন্ত জটিল এই প্রক্রিয়া সফলভাবে শেষ হয়েছে।
আমি এমন ভারতের পরিকল্পনা করি যারা দু’পা এগিয়ে ভাবতে পারে। আর নিজেদের ক্ষমতায় সব ঝড়–ঝাপটা প্রতিরোধ করতে পারে।’ বালাকোটে বিমান হানার পর এভাবেই নিজের কৃতিত্ব জাহির করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যা নিয়ে অনেক সংশয়, প্রশ্ন থেকে গিয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে আর একটা চমক না দিলে ভোটবাক্স ফাঁকা পড়ে থাকবে। এই চিন্তা করেই এমন ঘোষণা করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এই ঘোষণা নির্বাচনী আদর্শ আচরণ বিধির পরিপন্থী কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এদিন একই ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চারচারটি টুইট করেন তিনি।
জাতিকে বেশ কিচ্ছুক্ষণ সাসপেন্সে রেখে মাটি থেকে মহাকাশে উঠে গেলেন মোদী। আর কালক্ষেপ না করে দিদি বললেন, নাটক নাটক, মাত্রাছাড়া নাটক। জাহাজ যে ডুবছে টের পাচ্ছে। বাঁচাতে হবে তো!
এদিনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চারচারটি টুইট করেন ।
প্রথম টুইটে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “ভারতের মিশন কর্মকাণ্ড বছরের পর বছর ধরে বিশ্বমানের। আমরা সবসময় আমাদের বিজ্ঞানীদের নিয়ে গর্বিত।”
এরপরই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি তোপ দাগেন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। লেখেন, “মহাকাশ গবেষণা এবং তার উন্নতি একটা চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু মোদী যা করেন, ঠিক সব কৃতিত্ব নিজে নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এই কৃতিত্ব আসলে আমাদের মহাকাশ বিজ্ঞানী ও গবেষকদের।” এখানেই থামেননি মমতা। তৃতীয় টুইটে মোদীর বিরুদ্ধে নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে এই ঘোষণাকে ভোটের আগে ফায়দা তোলার লাগামহীন নাটক বলে কটাক্ষ করেন মমতা।
সিরিজ টুইটের শেষে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হলে জানান। সেই সঙ্গে বলেন, “এই সরকারের এক্সপায়ারি ডেট ফুরিয়ে গিয়েছে। তাই বিজেপির ডুবন্ত জাহাজকে অক্সিজেন দিতেই এ দিন এই সমস্ত বলেছেন প্রধানমন্ত্রী৷