দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গত চার বছর মেয়ের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। তাই প্রজ্ঞা যে এখন মোহনা, জানা ছিল না তা। তেমনই জানা ছিল না জঙ্গি দল জেএমবিতে নাম লিখিয়েছেন তাঁদের মেয়ে। শনিবার প্রতিবেশীরা সংবাদমাধ্যমে জেনে মেয়ের গ্রেফতারের খবর দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন ধনিয়াখালির বাসিন্দা গীতা দেবনাথ ও তাঁর স্বামী প্রদীপ দেবনাথ। মেয়ে দোষ করে থাকলে শাস্তি হোক, বললেন এ কথাও।

২০১৬ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বর সকালে কলকাতায় কাজ আছে বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন প্রজ্ঞা দেবনাথ। তারপর আর আর বাড়ি ফেরেননি। অনেক চেষ্টা করেও মেয়ের খোঁজ পাননি গীতা ও প্রদীপ। হঠাৎ কিছুদিন পর মাকে ফোন করে প্রজ্ঞা জানিয়েছিলেন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং বাংলাদেশের ঢাকায় রয়েছেন।

মেয়েকে অনেক বুঝিয়েছিলেন মা। বাড়ি ফিরে আসার জন্য কাতর আবেদনও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও কথা শোনেননি মেয়ে।

প্রজ্ঞার বাবা প্রদীপ দেবনাথ দিনমজুর। কখনও কাজ থাকে, কখনও নয়। সেলাই করে সংসারের চাকাটা সচল রাখেন গীতা। এই অভাবের সংসারেও এক ছেলে ও এক মেয়ের পড়াশোনা যাতে কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে ছিল কড়া নজর। গীতা জানান, প্রজ্ঞা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দুটো পরীক্ষাই সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করেন। এরপর ধনিয়াখালি কলেজে সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু তৃতীয় বর্ষের পড়া সম্পূর্ণ না করেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পড়াশোনা চলাকালীনই কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে প্রজ্ঞা যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানতে পেরেছিলেন পড়শিরা। তাঁরা জানান,  বাড়িতে ও পাড়ায় বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ছিল। রাতের দিকে বাইরের লোকজনের আনাগোনায় দুয়েকবার আপত্তিও জানিয়েছেন কেউ কেউ। অনেক রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে থেকে ফোনে কথা বলতে দেখা যেত তাঁকে। কিন্তু কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়তে পারে পাড়ার চুপচাপ শান্ত স্বভাবের মেয়েটা, ভাবতে পারেননি কেউ।

শুক্রবার ঢাকার সদরঘাট থেকে আয়েশা জান্নাত মোহনাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপরেই তাঁকে জেরা করে বাংলাদেশের পুলিশকর্তারা জানতে পারেন, জেএমবির নারী বাহিনীর এই সদস্য আদতে ভারতীয় এবং হিন্দু। যা অবাক করেছে সে দেশের পুলিশ কর্তাদের। তাঁরা জানতে পারেন পশ্চিমবঙ্গে নিয়মিত যাতায়াত ছিল মোহনার। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সংগঠনের জন্য চাঁদাও সংগ্রহ করতেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here