দেশের সময়: –রাজ্য জুড়ে তুমুল আলোড়ন তৈরি হয়েছে কাটমানি ইস্যুকে কেন্দ্র করে।জায়গায় জায়গায় তৃণমূল নেতাদের বাড়ি গিয়ে অথবা তাদের রাস্তায় ধরে কাটমানি ফেরত চাইছেন সাধারণ মানুষজন।তৃণমূলের অন্দরেও বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোড়ন,অনেকেই মনে করছেন এটা কী ঠিক করলেন দলনেত্রী?

যে ভাবে প্রকাশ্যে তিনি হুমকী দিয়ে বললেন যে বা যারা নানা লরকারি প্রকল্প থেকে বা সরকারি সুযোগ করে দেওয়ার নামে কাটমানি খেয়েছেন তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে,তাতে দলের মধ্যেই যে একটা সমস্যা তৈরি হবে,সাধারণ মানুষজনের রাগ ও ক্ষোভ যে কিছু হলেও দলের নেতাদের দিকে ধেয়ে আসবে তা কী জানতেন না দলনেত্রী?তবে কেন দলের মধ্যে এরকম একটা সমস্যার বিষয়কে উসকে দিলেন তিনি?

বলা বাহুল্য এ প্রশ্ন শুধু তৃণমূলের এক শ্রেণীর নেতাদেরই নয় এ প্রশ্ন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও,সমস্যা দলের মধ্যেও হতে পারে জেনেও কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ভাবে কাটমানি নিয়ে সোচ্চার হলেন,কেন তিনি বলছেন কাটমানি ফেরাতে তাঁর সরকার কঠোর হবেই?সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তৃণমূলের বিভিন্ন ছোট বড় নেতারা যে নানা ভাবে কাটমানি নেন তা তো বিলক্ষণ জানতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,তাহলে কেন আচমকা রাজনীতির মঞ্চ থেকে কাটমানি নিয়ে দলের একাংশ নেতাদের বিরুদ্ধে এরকম সরব হলেন মমতা,কেন বলছেন কাটমানি ফেরত দিতেই হবে?

এখানেই মুল বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে,আসল বিষয়টা হল এবার লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝে গেছেন তাঁর দলের ভাবমূর্তি সাধারণ মানুষের কাছে নষ্ট হয়ে গেছে,যে ইস্যুকে সামনে রেখে তিনি ভোটে লড়াইতে নেমেছিলেন সেই উন্নয়ন মানুষ গ্রহণ করে নি,উল্টে উন্নয়নের নামে যে এক শ্রেণীর নেতারা টাকা খেয়েছেন তা মানুষ বুঝে গিয়ে মোটের উপর মমতার সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার একটা আগাম বার্তা দিয়ে দিয়েছে।

ভোটের পরেই তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডেকে পাঠান ভোট ম্যানেজমেন্টের দক্ষ এক বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত ভূষণকে,তিনি নবান্নে বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রীকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন,তাঁর পর্যবেক্ষণ হচ্ছে,এ রাজ্যে পুরনো ইস্যুকে সামনে রেখে ভোটে জেতা মমতার পক্ষে সম্ভব নয় দরকার নতুন ইস্যু,এবং সেই ইস্যু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিকেও নতুন করে গড়বে।এ রাজ্যের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার আন্দোলনের ভাবমূর্তিকে জানে ও চেনে,রাজ্যের মানুষ জানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবিরাম ছুটে বেড়াতে পারেন,অর্থাত্ তাঁর মানুষের কাছে যাওয়ার ভাবমূর্তিও পরিচিত।

মমতা বল্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়ন করতে চান,সেই ভাবমূর্তিও ক্রমাগত প্রচারের দৌলতে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।তবে এ সব ভাবমূর্তি সত্ত্বেও এবার এ রাজ্যের লোকসভার ভোটের ফল বলছে মমতার এইসব কোন ভাবমূর্তিই সাধারণ মানুষ আর গ্রহণ করেনি,মানে এইসব ভাবমূর্তির কারণে মমতা ও তাঁর দলকে ঢেলে ভোট দেওয়া যায় বলে মানুষ আর মনে করেনি।

এখান থেকেই মমতার নতুন ভাবমূর্তি তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন ভোট বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত,সূত্র বলছে তিনি মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এমন একটা ভাবমুর্তি তৈরি করতে হবে যেটা আগে কেউ দেখেন নি,আর সেই কৌশল হিসেবেই মমতাকে কড়া দুর্নিতী বিরোধী বলে তৈরি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।মমতা দুষ্কর্ম ও আর্থিক কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে এতটাই সোচ্চার যে নিজের দলের কাউকেও ছাড়বেন না।মমতা মানে সরাকারি অর্থ সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দিতে বদ্ধপরিকর,তাঁর দলের কেউ যদি তাতে বাঁধা দেয় তাহলে তিনি দলের নেতাকেও জেলে পাঠাতে পারেন,মমতার এই ভাবমূর্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যেই কাটমানি ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে।

মমতা যেভাবে বলছেন নবান্নে কাটমানির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিশেষ সেল খোলা হবে তাতে পরিষ্কার খুব ভেবে চিন্তেই ইস্যুটাকে সামনে আনা হয়েছে।এর সঙ্গে আর কিছু কৌশল কাজ করবে তা হল,তৃণমূলের পুরোন কর্মীদের আবার চাঙ্গা করা ও যারা তৃণমূলে কোণঠাসা হয়ে বিজেপিতে চলে যাবে ভাবছিল তাদের ফিরিয়ে আনা।নব্য তৃণমূলিদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া পুরনো কর্মীরা বসে গেছিল,এবার যদি দেখা যায় কাটমানি ইস্যুতে আবার নতুন সেই দূর্নিতী গ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে দলনেত্রী ব্যবস্থা নিচ্ছেন তাহলে আবার সেই পুরনো কর্মীরা মমতার প্রতি আস্থা ফিরে পাবেন,তারা বলবেন যাক এতদিন পর নেত্রী ভুল লোকদের চিনতে পেরেছেন।

সবটাই একেবারে অংক কষে করা,সাধারণ মানুষ থেকে দলের কর্মীদের কাছে মমতার নিজস্ব ও দলের ভাবমূর্তিকে নতুন করে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে এই কাটমানি ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে।এই ইস্যুটাকে সামনে রেখেই মমতা এখন নিজের ও দলের ভাবমূর্তি নতুন করে তৈরি করতে মরিয়া।তবে সমস্যা একটা আছে এটাকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে বিষয়টা ব্যুমেরাং হয়ে যাবে নাতো,এই আশঙ্কা থাকছেই,কেননা যে ভাবে কাটমানি খাওয়া নেতাদের উপর মানুষের রোষ বাড়ছে,তাতে আক্রান্ত নেতারা চুপ থাকবেন কি,তাঁরাও যদি বলেন আসলে কাটমানির একটা অংশ দলের উপর তলায় গেছে তখন?সব হিসেব ঠিকঠাক তো নাও মিলতে পারে।

যেমন ইতিমধ্যেই তো মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজন ডাক্তার শান্তনু সেনের বিরুদ্ধেই এক প্রমোটার কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ প্রকাশ্যে করে দিয়েছেন,মমতা পারবেন তো শান্তনুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বা অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের দায়িত্ব গ্রহণ করতে?তাই যে কৌশলে তিনি ভোট বৈতরণি পার করবেন ভাবছেন সেই কৌশলই না শেষ পর্যন্ত তাঁর কাল হয়ে দাঁড়ায়,সেটাও কিন্তু ভাবার বিষয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here