দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পদযাত্রা শেষ করে ধর্মতলার সভা মঞ্চ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে মহিলা সংরক্ষণ নিয়ে বলতে শোনা গেছিল নেত্রীর কন্ঠে। মঙ্গলবার লোকসভার প্রার্থী ঘোষণার পর দেখা গেল, ৪২টি আসনের মধ্যে ১৭ জন মহিলা। তৃণমূলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তালিকা হাতে নিয়ে বললেন, “আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। প্রায় ৪১ শতাংশ মহিলা।”

১৮টি কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করেছেন মমতা। যার মধ্যে ১৭ জন নতুন মুখ। নতুন মুখের মধ্যেও ভারসাম্য রেখেছেন তিনি। সেখানে যেমন আছেন গতবার কংগ্রেসের টিকিটে জেতা মৌসম বেনজির নুর, আবার তালিকাতে রয়েছেন টলিউডের দুই নায়িকা মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান। ঝাড়গ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার প্রার্থী বদলেছেন।

আদিবাসী অধ্যুষিত এই লোকসভা কেন্দ্রে উমা সরেনের পরিবর্তে এ বার দিদির প্রার্থী বীরবাহা সরেন। সন্ধ্যা রায়কে এ বার প্রার্থী করেননি মমতা। সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, তাঁর সাংসদ হিসেবে পারফরম্যান্স অত্যন্ত ভাল। কিন্তু তিনি জানিয়েছেন, এত দৌড়ঝাঁপ করে তাঁর কাজ করতে অসুবিধে হচ্ছে। মমতা বলেছেন, তাঁকে অন্য কাজে ব্যবহার করা হবে।
মুনমুন সেনের কেন্দ্র বদল করেছেন তৃণমূল নেত্রী। বাঁকুড়া থেকে সুচিত্রা-কন্যাকে এ বার দাঁড় করানো হয়েছে আসানসোল আসনে। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই মমতা বলেছেন, এ বারের ভোট চ্যালেঞ্জের। পর্যবেক্ষকদের মতে, মুনমুনের কাজটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের। কারণ, তাঁকে এমন একটি আসনে দাঁড় করানো হয়েছে যা গতবার বিজেপি-র জেতা। এ বারেও গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী সম্ভবত বাবুলই।

মুনমুনের নাম আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা হওয়ার পরই টুইট করেছেন সেখানকার বিজেপি সাংসদ। স্বভাবসিদ্ধ বুদ্ধিদীপ্ততায় কহো না পেয়ার হ্যায়-এর টাইটেল ট্র্যাকের গায়ক লিখেছেন, “মমতাজি আমায় সব সবসময় সেন-সেশনাল প্রতিপক্ষ উপহার দেন। গত বার দোলা সেন। এ বার মুনমুন সেন।”

থেকে জিতেছিলেন সুলতান আহমেদ এবং বনগাঁ থেকে জিতেছিলেন কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। মাঝে দুই সাংসদের মৃত্যুর পর দুই কেন্দ্রেই প্রয়াত সাংসদদের স্ত্রীদের প্রার্থী করেছিলেন মমতা। বনগাঁতে মমতাবালা ঠাকুর এবং উলুবেড়িয়ায় সাজদা আহমেদ। এ বারও তাঁদের প্রার্থী করেছে তৃণমূল।

দীর্ঘদিন দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ ছিলেন মমতা। ওই কেন্দ্র তৃণমূলের গড় বলেই পরিচিত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ওই আসনে মমতা দাঁড় করান দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে। এ বার সেই আসনে বদল করে মহিলা মুখ এনেছেন নেত্রী। প্রার্থী করা হয়েছে কলকাতা কর্পোরেশনের দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর মালা রায়কে।

হুগলিতে রত্না দে নাগ, আরামবাগে অপরূপা পোদ্দার, বারাসতে কাকলি ঘোষ দস্তিদার, জয়নগরে প্রতিমা মণ্ডল এবং বালুরঘাটে নাট্য ব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষকে ফের প্রার্থী করেছে তৃণমূল।

নদিয়ার দুটি কেন্দ্রেই এ বার মহিলা প্রার্থী করেছেন দিদি। কৃষ্ণনগরে তাপস পাল যে দাঁড়াবেন না তা অনেক আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। এ বার সেখানে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বিধায়ক মহুয়া মৈত্র। রাণাঘাট আসনে এ বার তৃণমূল প্রার্থী গতমাসে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী রূপালী বিশ্বাস। প্রার্থী ঘোষণা করার সময় মমতা জানান, রূপালীর এখনও ২৫ বছর বয়স হয়নি। তবে ভোটের নোটিফিকেশন ঘোষণা করার আগে তা হয়ে যাবে। ফলে রূপালীই তৃণমূলের কনিষ্ঠতম প্রার্থী।

এমনিতে ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণের নিয়ম। দিদি প্রায়ই বলেন, এ ব্যাপারে তাঁর দল সবার থেকে অনেক এগিয়ে। এ দিনও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে আরও একবার তার প্রমাণ দিলেন তৃণমূলনেত্রী। পর্যবেক্ষকদের মতে, দলের নেতাদের কোন্দলকে সামাল দিতেই মহিলা প্রার্থী বাছতে হয়েছে মমতাকে।

কারণ বার বার বারণ করেও দলের নেতাদের তুই বড় না মুই বড় রোগ ছাড়াতে পারেননি মমতা। স্থানীয় স্তরে দলের সাংসদ-বিধায়কদের নিয়ে যে ক্ষোভ তা মহিলাদের ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম। এই ‘চ্যালেঞ্জিং ভোটের’ আগে দিদি তাই ঝুঁকি নিলেন না বলেই মনে করছেন অনেকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here