দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুধু কথা বলা নয়, সেই কথা বলে, খুবই দক্ষতার সঙ্গে মানুষকে হাসাতেও পারেন। তাঁর শব্দেরা বহু সময়ে বহু মানুষের বাঁচার সম্বল হয়েছে। তাঁর অনুপ্রেরণায় বহু মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন জীবনে। বহু মানুষ হেসে উঠেছেন তাঁরই কথা শুনে। কিন্তু কে জানত, সেই মানুষটিই সকলের অলক্ষে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন! তা-ও আবার চার-চার বার, গত দু’বছরের মধ্যে নিজের মুখে এ কথা স্বীকার করেছেন মীর।

মীর আফসার আলি, এই মুহূর্তে বাংলা গণমাধ্যম ও বিনোদনের জগতের এক উজ্জ্বলতম নাম! তাঁর এই স্বীকারোক্তির পরেই ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। দিন কয়েক আগেই ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। সকাল থেকেই নির্দিষ্ট রেডিও স্টেশনে আরজে হিসেবে কথা বলছিলেন মীর। বাজাচ্ছিলেন গান। এমন সময়ে, আচমকাই অন এয়ার শেয়ার করেন, নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা।

রেডিও চ্যানেলে যখন স্পষ্ট উচ্চারণে, কাটা-কাটা শব্দে বলছিলেন মীর কথাগুলো, তখন তাঁর শ্রোতা-দর্শক-অনুগামীদের কাছে যেন মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিল জগতটা।

মীর অবশ্য থামেননি। বলে যান, ২০১৭ থেকে আজ অবধি, চার বার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন তিনি। শেষ বার নিজের বাড়িতে, ৮৭টি ঘুমের ওষুধ খেয়ে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অন্যান্য বারের মতোই। সেই বার হয়তো আর ফেরা হতো না, চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা তাঁকে ফিরিয়ে আনে।

বাংলার জনপ্রিয়তম আরজে, ব্যান্ডের গায়ক, অভিনেতা, সঞ্চালক, কমেডিয়ান– এই সব ক’টি ভূমিকায় অন্যতম সফল এক জন মানুষ হিসেবে খ্যাতি, প্রতিপত্তি অর্জন করার পরে এমন কী কারণ থাকতে পারে আত্মহত্যার! একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পরে মীর জানিয়েছেন, সব পাওয়ার পরেও, অদ্ভুত এক চাপ কাজ করে অনেক সময়ে। মানুষের প্রত্যাশার চাপ। নিজের সেরাটা উপস্থাপন করার চাপ। এই চাপই এক সময়ে বাকি দুনিয়া থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় বলে জানান তিনি। তাই একটা বারের জন্যও মানুষ নিজেকে আটকাতে পারে না।

তাঁর সঙ্গেও এমনটাই হয়েছিল। তবে এমন কাজ করে ফেললেও, তার জন্য যথেষ্ট লজ্জিত মীর। সে জন্যই হয়তো চান না, অন্য কোনও মানুষ যেন এই পথে পা না বাড়ান। সেই জন্যই নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন মীর। হতাশ মানুষদের বার্তা দিতে চেয়েছেন, তাঁরা একা নন। তাঁরা বিচ্ছিন্ন নন। অবসাদ, মৃত্যুচিন্তা– যে কোনও মানুষকে যে কোনও সময় গ্রাস করতে পারে।

মীর জানান, এই রকম অনুভূতি জন্মালে কাছের মানুষকে এই চিন্তার কথা বলে দেওয়া জরুরি। কাছের মানুষকে কাছে না পেলে তাঁকে ফোন করে জানানো জরুরি। এমন কোনও মানুষকে, যিনি ওই পরিস্থিতিতে কোনও রকম বিচার করবেন না, বকাবকি করবেন না। কেবল পাশে থাকবেন।

এই স্বীকারোক্তির পরে তাঁকে কুর্নিশ জানাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। অনেকেই বলছেন, খ্যাতির আড়ালে হতাশা অনেকেরই থাকে। কিন্তু তা এমন উন্মুক্ত করে মেলে ধরতে সকলে পারে না। এ জন্য অনেক বেশি সাহস দরকার,দরকার অনেক বেশি স্বচ্ছতা। হাজার হাজার মানুষের সামনে নিজের অন্ধকারের কথা বলা এক জন শিল্পীর পক্ষে মোটেই সহজ কাজ নয়, মানছেন সকলেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here