দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের অষ্টম দফার ভোটগ্রহণ বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা সেই নির্বাচন শেষ হতে না হতেই বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশ হতে শুরু করেছে।

আপাতত সি-ভোটারের সমীক্ষার ফলাফল জানা গিয়েছে। তাদের সমীক্ষার মতে, পশ্চিমবঙ্গে ফের সরকার গড়তে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সি-ভোটারের সমীক্ষকদের পূর্বানুমান হল, ৪২ শতাংশ ভোট নিয়ে তৃণমূল পেতে পারে ১৫২ থেকে ১৬৪টি আসন। ৩৯ শতাংশ ভোট নিয়ে বিজেপি পেতে পারে ১০৯ থেকে ১২১টি আসন। আর সংযুক্ত মোর্চা পেতে পারে ১৪ থেকে ২৬টি আসন।

বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল যে বেদবাক্য নয় তা প্রমাণিত। কারণ, অতীতে বহুবার দেখা গিয়েছে তা প্রকৃত ফলাফলের সঙ্গে মেলেনি। আবার এও ঠিক যে বহুবার বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল প্রকৃত ফলাফলের সঙ্গে মিলে যাওয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে। অনেকের মতে, আসলে বুথ ফেরত সমীক্ষা থেকে জনমতের একটা ধারণা পাওয়া। এটুকু ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে হাওয়া কোনদিকে। তবে সেই ভোট শতাংশের হিসাব থেকে আসন সংখ্যার হিসাব বের করার প্রক্রিয়াটি জটিল। এবং সে ক্ষেত্রে ত্রুটির ঝুঁকি থাকে বইকি।

চাণক্য
চাণক্যের সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলায় ফের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়তে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাদের হিসাবে তৃণমূল পেতে পারে কমবেশি ১৮০টি আসন। তুলনায় বিজেপি জিততে পারে অনেক কম আসনে। চাণক্যর সমীক্ষায় অনুযায়ী বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে পেতে পারে ১০৮ (+/-১১)টি আসন। চাণক্যর সমীক্ষকদের অনুমান, এবার নির্বাচনে ৪৬ শতাংশ ভোট পেতে পারে তৃণমূল। তাদের থেকে ভোট শতাংশে অনেকটাই পিছিয়ে থাকতে পারে বিজেপি। লোকসভা ভোটে বাংলায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। এবার তা কমে গিয়ে হতে পারে ৩৯ শতাংশ। তবে চাণক্যরও মত হল, এই ভোটে বাংলায় বিজেপি-তৃণমূল মেরুকরণ ছিল ষোল আনা। তাই বাম-কংগ্রেসের ভোট আরও কমে গিয়েছে। তারা পেতে পারে মাত্র ৯ শতাংশ ভোট। বড় জোর ৪টি আসনে জিততে পারে তারা।


রিপাবলিক টিভি-সিএনএক্স:


রিপাবলিক টিভি সিএনএক্সের সমীক্ষা অনুযায়ী অবশ্য বিজেপি এগিয়ে থাকতে পারে তৃণমূলের থেকে। তাঁদের মতে, লড়াই হয়েছে সেয়ানে সেয়ানে। তবে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সম্ভাবনা বেশি। রিপালবলিকের সমীক্ষা বলছে, বিজেপি পেতে পারে ৪২.৭৫ শতাংশ ভোট। তাদের সংখ্যা আসন সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ১৩৮ থেকে ১৪৮। তুলনায় তৃণমূল পেতে পারে ৪০.০৭ শতাংশ ভোট। তারা পেতে পারে ১২৮ থেকে ১৪৮টি আসন। আর ১৪.৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে সংযুক্ত মোর্চা পেতে পারে ১১ থেকে ২১টি আসন।

জন কি বাত-এর সমীক্ষা:
এদের সমীক্ষায় বলা হয়েছে বাংলায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে বিজেপি। তাদের মতে, বিজেপি পেতে পারে ৪৬.৪৮ শতাংশ ভোট। তার ফলে ১৬২ থেকে ১৮৫টি আসনে জিততে পারে বিজেপি। ৪৪.৪৫ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃণমূল জিততে পারে ১০৪ থেকে ১২১টি আসন। আর ৮.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে মাত্র ৩ থেকে ৯টি আসনে জিততে পারে সংযুক্ত মোর্চা।

ইন্ডিয়া টিভি-পিপলস পাল্স
ইন্ডিয়া টিভি যে সমীক্ষা দিয়েছে তা আবার চমকে দেওয়ার মতো। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী বিজেপি পেতে পারে ১৭৩ থেকে ১৯২টি আসন। তৃণমূল পেতে পারে ৬৪ থেকে ৮৮টি আসন। আর সংযুক্ত মোর্চা ৭ থেকে ১২টি আসনে জিততে পারে।

অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া
অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার বুথ ফেরত সমীক্ষারও বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে অনেকটাই। ২০১৫ সালে বিহার ভোটে তাদের বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকৃত ফলাফলের সঙ্গে প্রায় মিলে গিয়েছিল। তা ছাড়া উনিশ সালে লোকসভা ভোটেও তাদের সমীক্ষা সঠিক প্রমাণিত হয়েছিল। অ্যাক্সিসের সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলায় লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপি বাংলায় জিততে পারে ১৩৪ থেকে ১৬০টি আসন। আর তৃণমূল পেতে পারে ৪৪ শতাংশ ভোট। ১৩০ থেকে ১৫৬টি আসনে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে জোড়াফুলের। তাদের হিসাবে ভোটে পুরো মেরুকরণ হয়েছে। ফলে বাম কংগ্রেসের ভোট কমে দাঁড়াতে পারে ১০ শতাংশ। তারা জিততে পারে মাত্র ২টি আসনে।

টিভি 9ন এর সমীক্ষা;
টিভি নাইনের বুথ ফেরত সমীক্ষা আবার এগিয়ে রেখেছে তৃণমূলকে। তাদের সমীক্ষার পূর্বানুমান হল, তৃণমূল পেতে পারে ১৪২ থেকে ১৫২টি আসন। বিজেপি পেতে পারে ১২৫ থেকে ১৩৫টি আসন। আর সংযুক্ত মোর্চা পেতে পারে ১৬ থেকে ২৬টি আসন।

একদিকে, হ্যাটট্রিক করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের ‘অভূতপূর্ব সাফল্যে’র ধারা বজায় রেখে ‘সোনার বাংলা’ গড়তে মরিয়া বিজেপি। এবারের নির্বাচনে তৃণমূল বনাম বিজেপি লড়াই হলেও নজর রয়েছে বাম-কংগ্রেস ও আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট ( আইএসএফ) জোটের দিকে।

রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২৯২টি আসনে ভোট হয়েছে। সমশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরে করোনা সংক্রমিত হয়ে দুই প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ওই দুই আসনে ভোট ১৬ মে।

এবিপি এবং সি-ভোটারের বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, ১৫২ থেকে ১৬৪টি আসন পেতে পারে তৃণমূল। যার অর্থ ফের ক্ষমতায় ফিরতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংস্থাটির মত, বিজেপি পেতে পারে ১০৯ থেকে ১২১টি আসন। বাম, কংগ্রেস এবং আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর জোট সংযুক্ত মোর্চা পেতে পারে ১৪ থেকে ২৫টি আসন।


এবিপি এবং সিএনএক্স-র মিলিত সমীক্ষা বলছে রাজ্যে জোড়াফুল শিবির পেতে পারে ১৫৭ থেকে ১৮৫টি আসন। ৯৬ থেকে ১২৫টির মধ্যে আসন পাওয়ার সম্ভাবনা বিজেপি-র। এ ছাড়া সংযুক্ত মোর্চা পেতে পারে ৮ থেকে ১৬টি আসন।

এ ছাড়া পি মার্কসের সমীক্ষা বলছে রাজ্যে তৃণমূল পেতে পারে ১৫২ থেকে ১৭২টি আসন। বিজেপি পেতে পারে ১১২ থেকে ১৩২টি আসন। এ ছাড়া রাজ্যে ভোট যুদ্ধের অন্যতম শরিক সংযুক্ত মোর্চা পেতে পারে ১০ থেকে ২০টি আসন।


সিএনএন এবং নিউজ ১৮-এর সমীক্ষা বলছে, রাজ্যে তৃণমূল পেতে পারে ১৬২টি আসন। বিজেপি পেতে পারে ১১৫ট আসন এবং সংযুক্ত মোর্চা পেতে পারে ১৫টি আসন।


কিছুটা ব্যতিক্রমী সমীক্ষা ইন্ডিয়া টু ডে-র। তাদের দাবি, তৃণমূল ১৩০ থেকে ১৫৬ আসন পেতে পারে। বিজেপি পেতে পারে ১৩৪ থেকে ১৬০টি আসন। অন্য দিকে সংযুক্ত মোর্চা পেতে পারে সর্বোচ্চ ২টি আসন।

ঐতিহাসিক ভাবে এই ধরনের সমীক্ষার ফলাফল যে সবসময়ে মেলে, তা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই সমীক্ষার ফলাফল একেবারে উল্টো হয়েছে, এমন দৃষ্টান্তও প্রচুর রয়েছে। সাধারণত এমন সমীক্ষা থেকে ফলাফলের আগাম একটা ইঙ্গিত পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে তা ইঙ্গিতই মাত্র।

বুথফেরত সমীক্ষায় বাংলা ছাড়া বাকি যে রাজ্যগুলির ফলাফল সম্পর্কে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তা অবশ্য প্রত্যাশিত। কেরলে বামজোট, তামিলনাড়ুতে বিজেপি জোট এবং অসমে বিজেপি-র জয়ের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তা ঠিক হয় কিনা, সময়ই বলবে। তবে আরও একটি ইঙ্গিত আছে সমীক্ষায়— সব রাজ্যেই কংগ্রেসের অবস্থা সঙ্গীন।

অধিকাংশ মূলস্রোতের সমীক্ষাতেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তাতে শাসক তৃণমূলকে সামান্য এগিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কোনও পক্ষই ২৯৪ আসনের বিধানসভায় দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার কাছে পৌঁছতে পারেনি। ফলে ফলাফল জানতে আগামী রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত মিললে সেখানেও প্রচুর সাসপেন্স থাকার অবকাশ রয়েছে।


আট দফা ভোটের শেষে বুথফেরত সমীক্ষায় বাংলার ফলাফল নিয়ে কোনও স্পষ্ট দিশা পাওয়া গেল না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here