দশেরার দিন পাঞ্জাবের অমৃতসরে ঘটে গেল ভয়াবহ দুর্ঘটনা৷ দ্রুত গতির ট্রেন পিষে দিল শতাধিক মানুষকে৷ এখনও পর্যন্ত পঞ্চাশেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে৷ দুর্ঘটনা নিয়ে পাঞ্জাব পুলিসের বক্তব্য, ‘ঘটনায় ৬০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ আমরা উদ্ধারকার্য চালাচ্ছি৷ আহতদের ইতিমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে৷

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী রেল লাইনের পাশে দশেরার রাবণের কুশপুতুল পোড়ানো হচ্ছিল। সন্ধ্যা সাতটা টা নাগাদ পঞ্জাবের অমৃতসর এবং মানাওয়ালা স্টেশনের মাঝখানে ২৭ নম্বর রেলগেট লাগোয়া মাঠে তখন সবে শুরু হয়েছে দশেরার অনুষ্ঠান। একটু আগেই প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক নভজ্যোৎ কৌর। ক্রিকেটার তথা কংগ্রেস নেতা নভজ্যোৎ সিংহ সিধুর স্ত্রী। ভিড়টাও তাই হয়েছিল ভালই। মাঠ উপচে প্রায় ৫০০- ৬০০শ’দর্শক জড়ো হয়েছিলেন রেললাইনে। সেখান থেকেই চলছিল মোবাইলে ছবি তোলা। কেউ কেউ ভিডিয়ো-কলও করছিলেন।
রেললাইনের পাশে সেই রাবণ পোড়ানো দেখতে দাঁড়িয়ে ছিলেন বহু মানুষ। রাবণ পোড়ানোর সময়ে বাজির আগুন ছিটকে আসতে থাকে। দর্শকদের একাংশ সরে লাইনের উপর উঠে আসেন। আর সেই সময়তেই ওই লাইন ধরে চলে আসে দ্রুত গতির একটি ট্রেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আপ এবং ডাউন দুই লাইনেই এক সঙ্গে ট্রেন চলে আসে। তাই কোনও দিকেই সরতে পারেননি দর্শকরা। ট্রেনের চাকার তলায় পিষে যায় একের পর এক মানুষের দেহ প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বাজির আওয়াজে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল ট্রেনের আওয়াজ। তাই কেউ শুনতে পাননি। তাঁদের অভিযোগ, রাবণ দাহ যারা করছিলেন সেই আয়োজকরা অন্তত মানুষকে সতর্ক করতে পারতেন।পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং সকালেই ঘটনাস্থলে গিয়েছেন৷তিমধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্যসচিব এবং এডিজিপি (আইনশৃঙ্খলা)-কে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলেমর্মান্তিক এই ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে সরকারের তরফ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানান৷ পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসা সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হবে৷ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও এই পরিস্থিতিতে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷ ঘটনা প্রসঙ্গে টুইট করে শোকপ্রকাশও করেছেন তিনি৷ এদিকে, আর ঘটনার কথা জানতে পেরে গোটা দেশে নেমে এসেছে শোকের ছায়া৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী প্রত্যেকেই টুইটে শোকপ্রকাশ করেছেন৷

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ: পাঞ্জাবের অমৃতসরে ঘটা দুর্ঘটনায় আমি বাকরুদ্ধ৷ আশা করি রেল কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয়রা মিলে দ্রুত উদ্ধারকার্য শেষ করবেন৷মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রইল৷

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: অমৃতসরের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখিত৷ খুবই হৃদয়-বিদারক ঘটনা৷ মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রইল৷ আশা করব দুর্ঘটনায় আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন৷ যেকোনও সাহায্যের জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছি৷

রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল: অমৃতসরের ঘটনার কথা জানতে পেরে আমি বাকরুদ্ধ৷ খুবই দুঃখজনক ঘটনা৷ মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রইল৷ আশা করব দুর্ঘটনায় আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন৷ উদ্ধারকার্য দ্রুত শেষ করতে রেলের তরফ থেকে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: দশেরার মধ্যে অমৃতসরের দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরে খুবই কষ্ট পেয়েছি৷ শোকপ্রকাশ করার ভাষা নেই৷ দুর্ঘটনা? মৃতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা রইল৷ আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি৷

রাহুল গান্ধী: অমৃতসরে রেলওয়ে ট্র্যাকে ঘটনা দুর্ঘটনার খবরে আমি মর্মাহত। খবর পেয়েছি স্থানীয় প্রশাসন ও ভারতীয় রেল যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। হতাহতের পরিবারের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং: পাঞ্জাবে দশেরার দিনে যে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটল, তাতে শোকপ্রকাশ করার বার্তা আমার কাছে নেই৷ মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে৷ আশা করি আহতরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করবে৷

অরবিন্দ কেজরিওয়াল: দশেরার দিনে অমৃতসরে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ খুবই খারাপ খবর৷ সবার কাছে প্রার্থনা তাঁরা যেন এই বিপদের দিনে একে-অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উদ্ধারকার্যে সাহায্য করবে৷

অরুণ জেটলি: অমৃতসরে দশেরা পালনের সময় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় এত মানুষের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক৷ খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা৷ ভগবান এই দুঃসময়ে সবাইকে শক্তি দিক৷ দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রইল৷

সীতারাম ইয়েচুরি: খুবই দুঃখজনক ঘটনা৷ দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রইল৷ দুর্ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করাই এখন প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত৷ তবে কাদের গাফিলতিতে এই দুর্ঘটনা জানতে পরবর্তীকালে গোটা ঘটনাটির তদন্ত হওয়া উচিত৷

প্রশ্ন উঠেছে এবং শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক তরজাও। রেললাইনের এত কাছে কেন রাবণপোড়ার অনুমতি দেওয়া হল, প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছেন একাংশ। সেই সূত্রে বিতর্কে নাম জড়াল সিধু-পত্নীর। অমৃতসরে চৌরাবাজারের জোড়া ফটকের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনিই। এত মানুষের প্রাণহানির জন্য সরাসরি রেলকেই দুষছেন কৌর। তবে রেলের দাবি, তাদের কাছে এই অনুষ্ঠানের জন্য কেউ অনুমতি নেননি। একাংশের অভিযোগ, দুর্ঘটনার খবর পেয়েই এলাকা ছে়ড়ে পালান নভজ্যোৎ কৌর সিধু। পরে কৌর যদিও সাংবাদিকদের জানান, অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ভাবে মিটিয়ে বাড়ি ফেরার মিনিট পনেরো পরে তিনি ওই দুর্ঘটনার খবর পান এবং তড়িঘড়ি হাসপাতালে পৌঁছন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি বছরই তো ওখানে দশেরা হয়। প্রশাসন তৈরিই থাকে। এ বারেও ছিল। কিন্তু ট্রেন কেন এমন একটা সময়ে গতি কমাবে না! এত বড় একটা ট্র্যাজেডির দিনেও লোকে রাজনীতি করছে।’’ রক্তের দাগ এখনও মোছেনি উৎসবের দিনে রক্তগঙ্গা বয়ে যাওয়া পাঞ্জাবে শোকের চাইতে রাজনিতির চাপানউতড় কেন এত বেশি ,তাই নিয়েই সাধারন মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন৷ – দেশের সময়:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here