দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সরকারি ভাবে রাজ্যেও ‘ফণী’ নিয়ে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হল। আবহাওয়া মন্ত্রক থেকে জারি হওযা বুলেটিনে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছে রাজ্যের উপকূলীয় জেলাগুলিকে। দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলাতেই শুক্র ও শনিবার মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

ঝড়ের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ১১৯ কিমি থেকে ২২১ কিমি হয় তাহলেই তাকে সুপার সাইক্লোন নামে অভিহিত করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের জনমানসে ঘুর্ণি ঝড়ের সাম্প্রতিক স্মৃতি ‘আয়লা’র চূড়ান্ত গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিমি। পূর্বাভাস অনুযায়ী ‘ফণী’র গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ২০৫ কিমি। অর্থাৎ আয়লা’র গতিবেগের প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে সরকারি ভাবে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে আবহাওয়া মন্ত্রকের বুলেটিনে। জানানো হয়েছে সমুদ্র তীরবর্তী ঝুপড়ি সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে কাঁচা মাটির বাড়ি। প্রচুর গাছপালা সহ বিদ্যুতের পোস্ট উপড়ে যেতে পারে বা ঝড়ের ধাক্কায় বেঁকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জলের তোড়ে কাঁচা এবং পাকা দু’ধরনের রাস্তারই ব্যাপক ক্ষতি হবে। পুরী থেকে পর্যটকদের চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও সমুদ্র তীরবর্তী পর্যটকস্থলে নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। কোনও পর্যটক যাতে সমুদ্রে স্নান করতে না নামে সেটি নিশ্চিত করার জন্য শুরু হয়েছে কড়া নজরদারি।

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাষ

০৩/০৪/১৯ (শুক্রবার): হাল্কা থেকে মাঝারি এবং কিছু ক্ষেত্রে ভারী বৃষ্টি (৭–১১ সেমি) হবে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায়।

০৪/০৪/১৯ (শনিবার): ওই একই জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত (৭–২০ সেমি) এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ সহ উত্তরবঙ্গের কয়েক জায়গায় অতি ভারী (২০ সেমি’র বেশি) বৃষ্টি হবে।

১৭৩৭ সালের সাইক্লোনের সংবাদই পূর্ব উপকূলের ভয়ঙ্করতম সাইক্লোনের মধ্যে প্রথম নথিবদ্ধ প্রাপ্ত তথ্য যার আঘাত এসে পড়েছিল কলকাতাতেও। ঝড়ের গতিবেগ না জানা গেলেও সেই ঘূর্ণি ঝড়ে সমুদ্রের ঢেউ ১২ মিটার উচ্চতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল উপকূল অঞ্চলে। তার সঙ্গে ছিল ভূমিকম্প। গোটা বদ্বীপ অঞ্চলে তিন লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর পূর্ব উপকূলে আঘাত হানা যে কটি সাইক্লোনে ঝড়ের গতি ছিল ঘণ্টায় ২০০ কিমি’র বেশি সেগুলি হল, ১৯৪২সালে মেদিনীপুরে (২২৫ কিমি), ১৯৭৭ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে (২৫০ কিমি, মৃত্যু ১০ হাজার), ১৯৯০সালে মছলিপত্নম (২৩০ কিমি, মৃত্যু ৯৬৭), ১৯৯৯সালে ওড়িশা (২৬০ কিমি, মৃত্যু ৯ হাজার ৮৮৭)।

আজ ভারতীয় সময় ২:৩০ মিনিটে (রাত) ‘ফণী’র অবস্থান ছিল পুরী’র ৭১০ কিমি দক্ষিণ–পশ্চিমে এবং বিশাখাপত্তনমের ৪১০ কিমি দক্ষিণ–পূর্বে। ঝড়ের গতি কমে দাঁড়িয়েছে ঘণ্টায় ৭ কিমি। পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ দুপুর পর্যন্ত ঘূর্ণি ঝড়টি আরও ঘণীভূত হবে এবং তারপরই বাঁক নিয়ে ঘুরে যাবে উত্তর–পূর্ব দিকে। আগামী ৩ মে বিকেলে ‘ফণী’ পৌঁছবে পুরীর দক্ষিণে গোপালপুর ও চাঁদবালির মধ্যবর্তী অঞ্চলে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে মনে করা হচ্ছে এই সময় ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৭৫–১৮৫ কিমি। এমনকী সেটা পৌঁছতে পারে ঘণ্টায় ২০৫ কিমি পর্যন্ত। আবহাওয়া মন্ত্রক থেকে জারি করা বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে ঘণ্টায় দু’শ কিলোমিটারের অশেপাশের গতি নিয়ে স্থলভূমিতে আছড়ে পড়বে ‘ফণী’।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here