সম্পাদকীয়ঃ–শেষ দফার ভোটের মাত্র দুদিন আগে নদীয়ার এক যুবক সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে গগনভেদী আর্তনাদ করতে করতে বলছিল তাঁর বাবাকে খুন করে দিয়েছে শাসক দলের গুন্ডারা,তাঁর বাবার অপরাধ তিনি শাসক দলের বিরুদ্ধে ভোটে প্রচার করেছিল।এর আগেও নাকি পঞ্চায়েতের সময় তার বাবা বিরোধী দলের হয়ে দাঁড়ানোয় তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল,এবার জীবন থেকেই সরিয়ে দেওয়া হল।একেবারে নিম্ন বিত্ত পরিবারের এই সব মানুষগুলো এভাবেই ভোট নামক যজ্ঞের বলি হতে থাকে।যেমন ভোটের বলি হয়েছিল মুর্শিদাবাদের এক ব্যক্তি,তিনি তাঁর ছেলে, যে কিনা এবার প্রথমবারের ভোটার তাকে সঙ্গে করে ভোট দিয়ে ফেরার সময় আচমকা দুষ্কৃতীদের আক্রমণে প্রাণ হারান সেই ব্যক্তি।বাবার মৃত দেহের পাশে বসে সদ্য তারুণ্য ছোঁয়া ছেলেটি তীব্র কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেছিল যে তারা মন্ত্রী হতে চায় না,তারা নেতা হতে চায় না,শুধু বেঁচে থাকতে চায়,তাদের বেঁচে থাকার অধিকারটুকু কেন বার বার ভোট যুদ্ধের নামে কেড়ে নেওয়া হবে?এ রাজ্যে যখন ভোট পর্বের শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে,তখন আমাদের কাছে খবর গোটা নির্বাচন এলাকা বারুদের স্তুপ হয়ে রয়েছে।রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ এতটাই চড়েছে যে যে কোন সময় রাক্তাক্ত কোন ঘটনা ঘটনা ঘটে যেতে পারে।আশঙ্কা আর প্রাণহানী হতে পারে।রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা উত্তেজনার বারুদ ছড়িয়ে দেবেন,আর সাধারণ মানুষ সেই বারুদের বলি হয়ে যাবে,এই ধারাবাহিকতা আর কতদিন চলবে?কতদিন আমরা মুখ বুজে ক্ষমতার রাজনীতির দাবার বোড়ে হয়ে যাবো?অভাব-অনটন তাড়িত বেকার যুবকের দল কতদিন কিছু পয়সা পাবার তাড়নায়,নেতা নেত্রীদের ভোট বৈতরণী পার করার জন্য অস্ত্র হাতে ভাড়াটে গুন্ডা হয়ে পরস্পর হানাহানি করবে?গণতন্ত্রের উত্সবের নামে আমরা তো আসলে হিংসার উতসবে মাতিয়ে দিতে চাইছি আমাদের প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের!! কোন সভ্যতা,কোন সংস্কৃতির দরজা খুলছি আমরা?যারা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে এত কথা বলছেন,প্রধানমন্ত্রী-আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন বাংলার সংস্কৃতি বাংলার ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে,কিন্তু ভেবে দেখুন তো মান্যবর প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী আপনারা সকলেই যে ভাষায় কথা বলেন তা কী উন্নত সংস্কৃতির ভাষা,তা কী মানুষকে শালীন ভদ্র-নম্র হতে শেখায়?আপনারা সবাই ক্ষমতা পেতে চান,আর সেই লক্ষ্যে সাধারণ মানুষকে লেলিয়ে দেন পারস্পরিক হিংসা-আর হানাহানির দিকে।বিদ্যাসগরের মূর্তিকে টিঁকিয়ে রেখে তাতে দুবেলা ফুল-চন্দন দিয়ে পুজো চড়ানোটা বড় কথা নয়,বড় কথা বিদ্যাসাগরের আদর্শ-মূল্যবোধকে সমাজ-জীবনে প্রতিফলিত করাটাই।সেটাই আমরা অনেকদিন ত্যাগ করেছি,সেটা ত্যাগ করে আমরা আমাদের নেতা নেত্রীদের মত নোংড়া ভাষায় কথা বলি,হিংসা আর হানাহানির সংস্কৃিতির ভজনা করতে করতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী যখন বিদ্যাসাগরের আদর্শ ও ঐতিহ্য নিয়ে বড়াই করেন তখন আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না এঁরা আসলে বিদ্যাসাগর মহাশয়কেও রাজনীতির সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছেন।এই নোংরা রাজনীতির আবহে একটা গোটা প্রজন্ম যখন তলিয়ে যেতে বসেছে,যখন উত্তপ্ত রাজনীতির গ্রাসে পড়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে অসংখ্য যুবক-যুবতী,তখন এদেশের ক্ষমতালোভি নেতা নেত্রীদের কাছে জানতে ইচ্ছে হয়-আর কত মানুষ মরলে তবে মানবে তুমি শেষে–বড্ড বেশী মানুষ গেছে বাণের জলে ভেসে……..