সমদূরত্ব মানে দু’পক্ষের সঙ্গে সমান দূরত্ব বজায় রাখা। এটা একটা সুবিধাবাদী অবস্থান যা সিপিএমের একটা পুরনো রাজনৈতিক লাইন। চরিত্রগতভাবে সুবিধাবাদী সিপিএম বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস কে নিয়ে এক মঞ্চে
বাঘ আর কুমীরের তত্ত্ব হাজির করে নিজেদের সেই সুবিধাবাদকেই আবার ফিরিয়ে আনলেন। এবার আপনাদের সঙ্গী ভারতবর্ষ থেকে বেলাইন হয়ে যাওয়া জাতীয় কংগ্রেস।

৬০ থেকে ৮০’র দশক অবধি সিপিএমের রাজনীতির সঙ্গে যারা পরিচিত ছিলেন তারা দলটির এই সুবিধাবাদী রাজনীতির কথা জানেন।
তখন সিপিএম রাশিয়া এবং চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সমান দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের দেশি লাইনে চলার কথা বলতেন।
আবার জরুরি অবস্থার সময়ে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে এই সমদূরত্বের যুক্তি দেখিয়েই জয়প্রকাশ নারায়ণের কংগ্রেস বিরোধী মোর্চায় সামিল হয়নি এনারা।
সেইসময় কংগ্রেস সরকারের জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গোটা দেশে সিপিএম কোন লড়াইয়ে নামেননি। তারা হাজির করেছিল জনতা পার্টি ও কংগ্রেসের সঙ্গে সমদূরত্ব বজায় রাখার তত্ত্ব।
দেশের সমস্ত বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক অন্য দলের নেতারা যখন জেলে তখন সিপিএমের রাজ্য নেতারা গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন একমাত্র কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতির্ময় বসু গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জরুরী অবস্থার কোনো বিরোধিতায় আপনাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। কমরেডরা সব ইঁদুরের গর্তে।

ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকেই CPM এই সুবিধাজনক অবস্থান নিয়েছেন। ইতিহাস বার বার তার সাক্ষী।এখন দেশজুড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিরোধী দলগুলি এক স্লোগান দিচ্ছেন। তখন আবার আপনারা গেলেন কংগ্রেস কে নিয়ে সেই সুবিধাবাদী অবস্থানে।

বাংলার ভোটে কংগ্রেস কে নিয়ে “‘বাঘের পিঠে চেপে কুমীরের সঙ্গে লড়াই নয়”’ জাতীয় উপমা দিয়ে সেই সমদূরত্বের রাজনীতি ফেরি করছেন। আসলে আপনারা বলতে চাইছেন তৃণমূল ও বিজেপি দুজনেই সমান শত্রু তাই দুপক্ষের সঙ্গেই সমান দূরত্ব বজায় রাখবো আমরা। হাস্যকর যুক্তি।

মুখোশের এই রাজনীতিতে আপনারা পেয়ে গেছেন রাজ্যে আরেক সুবিধাবাদী দোসর কংগ্রেসকে। আপনাদের এই সমদূরত্বের রাজনীতি সবসময় মূল লড়াইকে দুর্বল করে শত্রুদের সুবিধা করে দিয়েছে। রাজ্যে আপনাদের এই অবস্থান মানুষের বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনৈক্য আনবে, সুবিধা করে দেবে আগ্রাসী ধর্মান্ধ দলটির। অন্ধ তৃণমূল বিরোধিতার কারণে আপনারা স্পষ্ট করে বলছেন, বিজেপি নয়, রাজ্যে তৃণমূলই তাদের প্রধান শত্রু।

সুন্দরবনে বাঘ ও কুমীর দুটোই মানুষের শত্রু যুক্তি দেওয়া সিপিএম নেতারা ভুলে গেছেন এই তত্ত্ব মার্কসবাদ মানেনা। কারণ স্বয়ং মার্কসই বলে গেছেন কারা প্রধান শত্রু সেটাই যেকোন লড়াইয়ের প্রথম ও প্রধান গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কাজেই নির্দিষ্ট একটা শত্রুকে বেছে নিয়ে তার বিরুদ্ধে বাকি সবাইকে এক হতে হবে। জলে কুমীর ডাঙায় বাঘ মার্কা তত্ত্ব আমদানি করে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইটাই দুর্বল করে দিতে চাইছেন আপনারা।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা ভারতের সব বিরোধী দলগুলি বি জে পি কেই প্রধান শত্রু বলে মনে করেন।আর আপনারা টিএমসিকেই প্রধান শত্রু হিসেবে বলে ২০২১ এ লড়াই করবেন। ২০১৬ কি আপনারা ভুলে গেছেন।

মার্কসবাদের এই সরলসত্য একমাত্র ধরতে পেরেছে দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন সিপিআইএমএল লিবারেশন। তারাই একমাত্র বলছেন, বিজেপি প্রধান শত্রু। বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটা জোট গড়ে রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা। এতদিন সিপিএম এবং কংগ্রেস বলে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে বিজেপিকে নিয়ে এসেছেন। এবার সিপিএম ও কংগ্রেসের রাজনীতি প্রমাণ করেছে রাজ্যে কারা বিজেপির প্রকৃত বন্ধু। আপনারা মানুন না মানুন ভারতবর্ষের সমস্ত মানুষ জানেন আমাদের প্রিয় দিদি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে এক মাত্র বিরোধী মুখ।

আপনারা যুক্তি দিচ্ছেন আগে টিএমসিকে সরাও তারপর বিজেপিকে “”দেখে নেবো””। কিন্তু আপনারা এটা কিছুতেই মানতে চাইছেন না যে বিজেপি থাকলে আপনারা মোটেই ‘”দেখে নেবো’” অবস্থায় থাকবেন না।
অথচ কংগ্রেস সিপিএম সমেত দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলই কনক্লেভে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সব রাজ্যেই শক্তিশালী দলগুলি জোট গড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।

অন্ধ মমতা বিরোধিতা আবার কংগ্রেস সিপিএম জোট করে আপনারা ঐতিহাসিক ভুলের দিকে চলে গেলেন। এর ফল আপনাদের ভুগতেই হবে। সত্যি কথা আপনারা তৃণমূল বিরোধিতার চেয়ে কালীঘাটের খালের পাশে টালির বাড়ির মেয়েটিকে কিছুতেই মেনে নিতেন পারেননা। এটা আমার ৩৫ বছরের সাংবাদিক জীবনে আপনাদের পাশে থেকেই বুঝেছি..দেখেছি…শুনেছি ?
২০২১ এর পর পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস + সিপিএম সাইনবোর্ডে পরিণত হবেন। যদিও এখন ই আপনাদের দু দলের যা অবস্থান ?
ঈশ্বরবিশ্বাসী হলে বলতাম, “”” আপনাদের চৈতন্য হোক”””

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here