দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ এদিকে দরজা তাঁর জন্য খুলে রেখেছে বিজেপি।অন্যদিকে তাঁর থেকেও বেশি নিস্তব্ধ হাতাবাড়ির ‘শান্তিকুঞ্জ’। এখানেই থাকে অধিকারী পরিবার। শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, শুক্রবার রাতে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন তিনি। মা গায়ত্রীদেবীর অসুস্থতার কারণে শনিবার তিনি বাড়ি থেকে বেরোননি। তৃণমূল নেতা সৌগত রায়ও শুভেন্দুর মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন। তবে গতকালের মতো শনিবারও শান্তিকুঞ্জের মূল গেটের সামনে এক জন সশস্ত্র রক্ষীকে দেখা গিয়েছে। বাড়িতে কাউকে ঢুকতে বা বেরোতে তেমন ভাবে দেখা যায়নি। আবার তাঁর সঙ্গে আলোচনার দরজা বন্ধ করেনি তৃণমূলও। কিন্তু মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার পর ৩৬ ঘণ্টা কেটে গেলেও শুভেন্দু অধিকারী তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছু জানাননি। শনিবার দিনভর নিশ্চুপই ছিলেন তিনি। ফলে, শুভেন্দুকে ঘিরে জল্পনার অবসানও হয়নি। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর আজ, রবিবার মহিষাদলে একটি অরাজনৈতিক সভায় শুভেন্দুর বক্তৃতা দেওয়ার কথা। সেই সভায় তিনি কোনও বার্তা দেন কি না, সে দিকেই এখন সবার নজর।

মহিষাদলে তাঁর প্রথম সভা। সদ্যপ্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী রণজিৎ বয়ালের স্মরণসভায় বলবেন শুভেন্দু। প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর মন্ত্রী না-থাকা শুভেন্দুর এটাই প্রথম সভা। এই সভা নিয়ে নানা রাজনৈতিক জল্পনা তৈরি হয়েছে। তীক্ষ্ণ নজরও রয়েছে রাজ্য এবং দেশের রাজনৈতিক মহলের। তবে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের অনেকেরই মতে, এখান থেকে তাঁর রাজনৈতিক কথা বলার সম্ভাবনা যদিও কম।

আবার দলের তরফে শুভেন্দু যে সব জেলার দায়িত্বে, সেগুলোর অন্যতম, মালদা জেলার নেতাদের নিয়ে কলকাতায় এ দিন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করেন।দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনা তথা ‘বরফ গলানোর চেষ্টা’ কিছু দিন আগেই শুরু করেছিলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়। শুভেন্দু মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার পরেও অবশ্য হাল ছাড়েননি সৌগত। তিনি বার্তা দেন, মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও শুভেন্দু দল ছাড়েননি এবং আলোচনা তাই হতেই পারে। তবে এ দিন পর্যন্ত সেই বৈঠক হয়নি। সৌগত জানান, শুভেন্দুর মা অসুস্থ। শনি ও রবিবার শুভেন্দু কলকাতায় আসতে পারছেন না।

ফলে, আলোচনা হলেও সেটা আগামী সপ্তাহের আগে হচ্ছে না বলে সৌগত জানিয়েছেন। আবার এ দিনই মেদিনীপুরে দলের একটি সভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সি বলেন, ‘শুভেন্দু এখনও দল ছেড়ে যায়নি। আমাদের দলেই আছে। তাই, তার সম্পর্কে এখনই কোনও মন্তব্য করা ঠিক নয়।’শুভেন্দুকে ঘিরে শুক্রবার থেকেই জোর রাজনৈতিক তৎপরতা বিজেপির অন্দরে। গেরুয়া শিবিরের অনেকে কার্যত ধরেই নিয়েছেন, শুভেন্দু তাঁদের সঙ্গে হাত মেলাবেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ দিন বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারীর ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, তৃণমূল সরকার এবং তৃণমূল দল কোনওটাই ভালো ভাবে চলছে না।’ দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হুঁশিয়ারি, ‘একমাস পর তৃণমূল দলটা আর থাকবে না। তৃণমূলে ডিজাস্টার শুরু হয়েছে।

তাই, এখন প্রায়ই ওদের দলে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের বৈঠক হবে!’ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের মতে, শুভেন্দু একবার তাদের দলে চলে এলে তৃণমূল আর ভাঙন ঠেকাতে পারবে না। ফলে, বিজেপি আপাতত যেন বরণডালা সাজিয়ে দরজার সামনেই শুভেন্দুর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। আবার শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর দিন, শনিবারই তাঁর ছবি সম্বলিত ‘দাদার অনুগামী’দের ব্যানার ছিঁড়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে হুগলির কোন্নগরে অভিযোগ উঠেছে।

শুভেন্দুকে তৃণমূলে ধরে রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন দলের বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। কোনও রকম রাখঢাক না-করেই এ দিন তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, দলে মমতা-পরবর্তী প্রজন্মের সব চেয়ে বড় নেতা শুভেন্দু। তিনি যদি শেষ পর্যন্ত দল ছাড়েন, তা হলে সেটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য ক্ষতি।’ সৌগত বা প্রবীররা যখন শুভেন্দুর জন্য ‘দরজা খোলা’ রাখার বার্তা দিচ্ছেন, তখন আবারও চড়া সুর সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়।

এ দিন কল্যাণের বক্তব্য, ‘মমতাদি বলেছিলেন, ২৯৪টি আসনে আমিই প্রার্থী। এর মধ্যে শুভেন্দুর আসনটিও পড়ে। তখন কেন উনি সাহস করে বলতে পারেননি যে, দিদি, আমার আসনে আমিই প্রার্থী!’ তাঁর সাফ কথা, ‘বাংলায় তৃণমূলের যিনিই জিতেছেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেখিয়েই জিতেছেন।’ তবে দলের এক শীর্ষনেতার ব্যাখ্যা, ‘শুভেন্দুর জন্য দরজা খোলা রাখতেই তাঁর ছেড়ে যাওয়া দপ্তরগুলো মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে রেখেছেন, অন্য কাউকে দায়িত্ব দেননি। শুভেন্দু বিজেপিতে চলে যাক, এটা কিন্তু কেউই চাইছে না।’ শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রেখেও তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের ঐক্য ধরে রাখার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। শনিবার ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে দলের মালদা জেলার নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব। শুভেন্দুই দলের তরফে মালদা জেলার পর্যবেক্ষক। তবে এ দিনের ওই বৈঠকে গরহাজির ছিলেন আমন্ত্রিতদের মধ্যে বেশ কয়েক জন। দলীয় সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে ডাক পড়েছিল সাবিত্রী মিত্র, মানব বন্দ্যোপাধ্যায়, মৌসম বেনজির নূর, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী-সহ মোট ৮ জনের।

তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে দেখা যায়নি সাবিত্রী মিত্র, মৌসম ছাড়া আরও আরও দু’জনকে।বৈঠক থেকে বেরিয়ে তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার অবশ্য জানান, শুভেন্দুর মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের সঙ্গে এই বৈঠকের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের অভিমত, শুভেন্দু একান্তই দল ছেড়ে দিলে তাঁর ‘পর্যবেক্ষণ’-এ থাকা জেলাগুলোয় তৃণমূলের মধ্যে ভাঙন ধরার আদৌ কোনও আশঙ্কা আছে কি না, সেটা বুঝে নিতেই মালদা জেলার নেতাদের কলকাতায় ডাকা হয়েছিল৷

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here