দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: দেশজুড়ে আনলক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরেও কেন্দ্রের স্পষ্ট নির্দেশ আপাতত কোনও বড় সমাবেশ তো করাই যাবে না এমনকী শপিং মল থেকে ধর্মস্থান সর্বত্র প্রতিটি মানুষের মধ্যে ছ’ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পঞ্চম দফার লকডাউনে অনেক কিছুতে ছাড় থাকলেও জমায়েতে কোনও ছাড় নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই ‘দো গজ কি দুরি’ স্লোগান তুলেছেন। এই অবস্থায় বড় প্রশ্ন রাজনৈতিক সমাবেশ নিয়ে। আর কি কোনও দিন ব্রিগেড ভরানোর ডাক দেবে না কোনও রাজনৈতিক দল? হবে না ‘ধর্মতলা চলো’ অভিযান?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। তবে এই পরিস্থিতির মধ্যেই কীভাবে সমাবেশ করা যায় তার নজির দেখাতে চলেছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিজেপি। আর সেটা শুরু হচ্ছে এই রাজ্য থেকেই। আগামী ৯ জুন প্রথম ভার্চুয়াল জনসমাবেশ হবে বাংলায়। তাতে প্রধান বক্তা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষের দাবি, “করোনা মোকাবিলায় গোটা বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। আর এই নতুন সময়ে কীভাবে জনসমাবেশ করা যায় তা দেখাবে আমাদের দল।”
কীভাবে এই সমাবেশ হবে তা বুঝিয়ে বললেন রাজ্য বিজেপির সংগঠন সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, ‘ওয়েবেক্স মিট’ অ্যাপের মাধ্যমে হবে এই জনসভা। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় অফিসে থাকবে একটি মঞ্চ আর কলকাতায় রাজ্য সদরদফতরে থাকবে একটি মঞ্চ। দুই মঞ্চে থাকবেন দুই বক্তা অমিত শাহ এবং দিলীপ ঘোষ। এই অ্যাপের মাধ্যমে এক সঙ্গে এক হাজার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। রাজ্য বিজেপি ইতিমধ্যেই সেই হাজার জন নেতা কর্মী বেছে ফেলেছে। তাঁরা সরাসরি ওই সভায় যোগ দেবেন। একই সঙ্গে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হবে সমাবেশ। ফেসবুক, ইউটিউবের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ কর্মী, সমর্থক, সাধারণ মানুষ অংশ নিতে পারবেন এই সমাবেশ।
সুব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বর্তমান সময়ের কথা ভেবেই এই পথ। এটা একটা ঐতিহাসিক সমবাবেশ হবে। এটা শুরু। এর পরে এই ভাবেই আরও সমাবেশ হবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, এই সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য যে এক হাজার জনকে এই পর্যায়ে বাছা হয়েছে তাঁদের কাছে ৯ জুন বেলা ১১টায় সভা শুরুর ১৫ মিনিট আগে পৌঁছে যাবে একটি লিঙ্ক। আর তা ব্যবহার করেই সভায় যোগ দেওয়া যাবে। সরাসরি যোগ দেওয়া এক হাজার জনকে চাইলে দেখতেও পারবেন অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষ। ভার্চুয়াল এই জনসভার জন্য প্রচারও হচ্ছে সেই পথে। হোর্ডিং, পোস্টার নয়, সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্য দিয়েই সমাবেশে যোগ দেওয়ার আবেদন পাঠাচ্ছে রাজ্য বিজেপি।
রাজ্যে পুরসভা ভোট কবে হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যাথাও নেই রাজ্য বিজেপি নেতাদের। বরং, বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। আর তার জন্য এখন থেকেই ঘর গোছানো শুরু করেছে বিজেপি। রাজ্যের কোর কমিটি নতুন করে সাজানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ক’দিন আগেই এক সংবাদমাধ্যমকে অমিত শাহ বলেন, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধ পূর্ণ হবে। একুশের ভোটে বাংলায় সরকার গড়বে বিজেপি। মিলিয়ে নেবেন।” তবে এই প্রথম নয়, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি থাকার সময় থেকেই অমিত শাহ বলে আসছেন, “একুশ সালে বাংলায় দুই তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়বে বিজেপি।”
এবার সেই লক্ষ্যেই লকডাউনের মধ্যেই ভার্চুয়াল সমাবেশ শুরু করে দিচ্ছে বিজেপি। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম সমাবেশে অমিত শাহ থাকলেও এর পরে সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা একই পথে আরও একটি সমাবেশ করবেন খুব তাড়াতাড়ি। তবে এখনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই রকম সমাবেশ করবেন কিনা জানা যায়নি।
ক’দিন আগেই দ্বিতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ৯ জুনের সমাবেশে বিগত ছ’বছরে মোদী সরকারের সাফল্যই তুলে ধরবেন অমিত শাহ। একই সঙ্গে করোনা মোকাবিলা, আর্থিক প্যাকেজ ইত্যাদির কথা বলতে পারেন শাহ। এর পাশাপাশি উমফান বিপর্যয় মোকাবিলা থেকে পরিযায়ী শ্রমিক ফেরানো, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যর্থতার দিকগুলি তুলে ধরতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রথম ভার্চুয়াল জনসভা নিয়ে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা রাজ্য বিজেপিতে। গোটা বিষয়টিতে যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে সেটা ঠিক করতে একাধিক বার মহড়াও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।