সম্পাদকীয়- সম্প্রতি এ রাজ্যের কবি শ্রীজাত অসমে গিয়ে একদল হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন।হিন্দুবাদীদের অভিযোগ শ্রীজাত তাঁর কবিতায় হিন্দুধর্ম সম্পর্কে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করেছেন।অসমের শীলচরে একদল হিন্দুত্ববাদী তাই কবি শ্রীজাতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন।শ্রীজাতকে সেখানকার পুলিশি পাহাড়ায় বেরিয়ে আসতে হয়।এর পরেই গোটা দেশ ও রাজ্য জুড়ে এই ঘটনার সূত্রে সেই পুরনো বিতর্ক আবার সামনে চলে আসে,যে শিল্পী ও সাহিত্যিকরা তাঁদের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করার অধিকার পাবেন নাকি পাবেন না?কোন সন্দেহ নেই শিল্পী ও সাহিত্যিকদের স্বাধীন মতামত রাখতে দেওয়াটা খুবই জরুরি,তাঁদের চোখ দিয়েই সমাজের নানা সত্য সামনে আসতে পারে,তাঁরাই সমাজকে সত্য মিথ্যার ফারাক বোঝাতে পারেন।গণতান্ত্রিক দেশে শিল্পী-সাহিত্যিকদের স্বাধীনতা থাকাটা গণতন্ত্রের শর্তের মধ্যেই পড়ে।তাই শ্রীজাতের বিরুদ্ধে যারা আক্রমণ করেছে তারা এ দেশের গণতন্ত্রের ভিতকে দূর্বলই করতে চেয়েছেন।তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হওয়াটা জরুরি ছিল।এ রাজ্যের শিল্পী-সাহিত্যিকরা দলবদ্ধভাবে এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন,তারা শ্রীজাতের পাশে দাঁড়িয়ে,শিল্প ও সাহিত্যের স্বাধীনতা রক্ষায় সকলকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।এই ঘটনাকে চূড়ান্ত বর্বরোচিত বলে চিহ্নিত করেছেন।আমরা মনে করি এ রাজ্যের শিল্পী সাহিত্যিকরা সঠিক ভাবেই তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন।স্বাধীনতা শিল্পীর অধিকার কোন ভাবেই তাকে হরণ করা যেতে পারে না।আমরাও শ্রীজাতের উপর এই আক্রমণের প্রতিবাদ করছি,নিন্দা করছি বিরুদ্ধ মত শুনতে না পারার অধৈর্যপনাকে।আমরা সকলকে মনে করিয়ে দিতে চাইবো,কোন মত যদি কারোর পছন্দ না হয় তবে পাল্টা মত সামনে এনে তার প্রতিবাদ করা উচিত,কিন্তু গায়ের জোরে কবি,সাহিত্যিকদের উপর হামলা করে তাঁর লেখা বন্ধ করে কিংবা পুলিশ দিয়ে তাঁর অনুষ্ঠান বাতিল করার মধ্যে একধরণের ফ্যাসিবাদি চিন্তাধারা লুকিয়ে থাকে যা মুক্তচিন্তা ভাবনার পরিসরকে যেমন অবরুদ্ধ করে দেয় তেমনি আবার অন্যদিকে নিজেদের সৃজন ভাবনাকেও আটকে রাখে।শ্রীজাতের কবিতার মতামত মেনে নিতে না পারলে,অবশ্যই প্রতিবাদ করুন,কিন্তু সেই প্রতিবাদ হোক সেই ভাবনার বিরুদ্ধে একটা প্রবন্ধ লিখে বা একটা পাল্টা কবিতা লিখে।কখোনই মস্তানি করে নয়।শিল্পী-লেখকদের স্বাধীনতা দিতে হবে,দিতে হবে মুক্ত পরিসর,এটাই মুক্ত গণতন্ত্রের দাবি।শ্রীজাত ও তাঁর পক্ষে দাঁড়ানো কবি -সাহিত্যিকদের প্রতিবাদকে সমর্থন করেও আমরা তাই মুক্ত ভাবনার স্বার্থে তাঁদেরও কয়েকটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাইবো,মনে রাখবেন এ রাজ্যেও কিন্তু শিল্পী সাহিত্যিকদের অপমান করেছেন শাসক দলের কোন কোন নেতা,যেমন গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় যে ভাবে অনুব্রত মন্ডল শ্রদ্ধেয় কবি শঙ্খ ঘোষকে অপমান করেছিলেন তারও কিন্তু প্রতিবাদ হওয়া উচিত ছিল,যে ভাবে এ রাজ্যের সরকার বার বার লেখক তসলিমাকে এ রাজ্যে আসতে বাঁধা দিয়ে যাচ্ছে তাও লেখকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপেরই অন্য নাম।শ্রীজাতদের উচিত তারও প্রতিবাদ করা।অন্য কবির স্বাধীনতা নিয়ে নীরব থেকে শুধু নিজের স্বাধীনতার দাবি করলে তা একধরণের সুবিধাবাদী আচরণ বলেই প্রতিপন্ন হয়,মানুষ তা ভাল চোখে দেখে না, শ্রীজাতরা এটা মনে রাখলে ভাল করবেন।হিসেব কষা প্রতিবাদ শিল্পী-সাহিত্যিকদের শিল্প ভাবনার স্বাধীনতার রক্ষাকবজ হতে পারে না,তাই সব রঙের সব শাসকের অন্যায়েরই প্রতিবাদ হওয়া উচিত।শিল্প ও শিল্পীর স্বাধীনতার স্বার্থে শিল্পী সাহিত্যিকরা দোহাই, সব রকম সুবিধাবাদী হিসেব ছেড়ে,কোদালকে কোদাল বলার সাহস অর্জন করুন,তা না হলে শীলচরে শ্রীজাত আক্রান্ত হবেন,উত্তরপ্রদেশে নাসিরউদ্দিন,আর এ রাজ্যে শঙ্খ ঘোষ আর তসলিমারা।আক্রমণকারীদের রঙ আর পতাকা আলাদা হবে,অন্তরে তারা সবাই সমান।তাই শিল্পী সাহিত্যিকরা সব শাসক থেকে দুরে থাকুন,তৈরি করুন শাসক বিরোধী স্বর।একমাত্র সেই স্বরই পারে শিল্প ও শিল্পীর স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করতে।সেই স্বরকেই সম্মান করবে এ দেশের সকল সাধারাণ মানুষজন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here