দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ চিটফান্ড তদন্তের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে এই মুহুর্তে প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কুণাল ঘোষ রেহাই পেলেও, সোমবারও নিস্তার পেলেন না কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। তাঁকে মঙ্গলবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সোমবার সন্ধ্যায় নোটিস ধরানো হয়েছে। এ দিন সন্ধ্যায় শিলংয়ে সিবিআই দফতর থেকে বেরোনোর পর কুণাল ঘোষ বলেন, “শিলংয়ে যা হল তাতে আমার নৈতিক জয় হয়েছে।” প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ বলেন, “দেখুন তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে বাইরে কোনও মন্তব্য করব না। তদন্তে আমি সন্তুষ্ট কি সন্তুষ্ট নই তাও বলব না। কারণ, প্রভাবশালীদের হাত অনেক লম্বা। কখন তদন্ত কোন দিকে ঘুরে যাবে কে জানে! কিন্তু এই যে শেষ পর্যন্ত রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আমার মুখোমুখি বসানো হল, আমার বক্তব্য ওঁকে শুনতে হল, সেটাই আমার নৈতিক জয়।”চিটফান্ড কাণ্ডে কুণালকে গ্রেফতার করেছিল রাজ্য পুলিশ। সেই সময় তদন্তের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন তৎকালীন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার, গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ প্রমুখ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তখনও প্রকাশ হয়েছিল যে কুণালকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। অনেকে এও মনে করছেন, বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ কর্তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জেরার সময় কুণালই অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেই কারণেই তাঁকে রাজীব কুমারের মুখোমুখি বসানো হয়েছে। কুণালও এদিন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই বলেন, “শিলংয়ে এতোদিনে যা হল তা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল।” সেই সঙ্গে এও বলেন, “যখন প্রতিবাদের পর্যায় আসবে, তখন দরকারে নিশ্চয়ই তা করব। কিন্তু আপাতত প্রক্রিয়াটি দেখার পক্ষে। যখন আমি বারবার প্রতিবাদ করতাম, তখন যাঁরা বলতেন আইন আইনের পথে চলবে, আজ তাঁদের তরফে তদন্তে বাধা কাম্য নয়।”

সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ সিবিআই দফতরে ঢুকেছিলেন তাঁরা। কয়েক ঘণ্টা পরে মেলে লাঞ্চ ব্রেক। ঘণ্টা খানেক পরে ফের শুরু হয় দ্বিতীয় দফার জেরা। শেষমেশ সন্ধে সাতটার পরে সিবিআই দফতর থেকে বেরোন তাঁরা। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকাল দশটায় ফের জেরার জন্য হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজীব কুমারকে।আগামী কাল হলে, এই নিয়ে চার দিন হবে শিলংয়ের সিবিআই দফতরে রাজীব কুমারকে সারদা এবং রোজ় ভ্যালি কাণ্ডে জেরা পর্ব।পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার অবশ্য জেরার পরে সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।কেউ কেউ মনে করেছিলেন, মঙ্গলবার হয়তো কলকাতায় ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে। কারণ এই দিন শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষা চলাকালীন শহরে ও রাজ্যে সুষ্ঠু পরিস্থিতি বজায় রাখতে কমিশনারের উপস্থিতি জরুরি বলে মনে করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু সে সব বিচার না করে, মঙ্গলবারও শিলংয়েই জেরা চলবে বলে জানিয়ে দিল সিবিআই।দফায় দফায় আলাদা আলাদা করে রাজীব ও কুণালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী অফিসাররা। তার পরে আরও আড়াই ঘণ্টা তাঁদের দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে সিবিআই।এর পরে শুরু হয় দ্বিতীয় দফার জেরা। দফতরে উপস্থিত ছিলেন রোজ় ভ্যালি কাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার চোজম শেরপা। সূত্রের খবর, গত কালই জেরার সময়ে সারদার পাশাপাশি রোজ় ভ্যালি নিয়ে কুণাল ও রাজীবকে জেরা করা হয়েছিল। আজকের জেরার দ্বিতীয় দফাতেও ফের রোজ় ভ্যালি প্রসঙ্গ ওঠে বলে সূত্রের খবর।সোমবার উপস্থিত ছিলেন রোজ় ভ্যালি কান্ডের তদন্ত শুরুর প্রথম যে প্রধান তদন্তকারী অফিসার, সেই ব্রতীন ঘোষালও। এই ব্রতীন ঘোষালকেই কলকাতা পুলিশ নানা ভাবে হেনস্থা করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে এক সময়ে। তাঁর পরেই তদন্তকারী অফিসার হিসেবে এসেছিলেন চোজম শেরপা। আজকের জিজ্ঞাসাবাদে সেই দুই অফিসারই উপস্থিত রয়েছেন বলে সূত্রের খবর।প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার থেকে শিলংয়ে সিবিআই দফতরে চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্ত সূত্রে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। প্রথমে প্রায় সাড়ে আট ঘণ্টা সিবিআই দফতরে ছিলেন রাজীববাবু। রবিবার আবার রাজীববাবুর পাশাপাশি হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল কুণাল ঘোষকে। রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় রাজীববাবুর সঙ্গে কুণালকে মুখোমুখি বসিয়েছিল সিবিআই। রবিবার প্রায় ১১ ঘণ্টা সিবিআই দফতরে ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার।শিলং থেকে মঙ্গলবার সকালেই গুয়াহাটিতে নেমে আসবেন কুণাল। তবে মঙ্গলবারও কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে দিন ভর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন সিবিআই কর্তারা। বস্তুত সে দিক থেকে এও এক নজিরবিহীন ঘটনা। গুজরাত বা অন্য রাজ্যের শীর্ষ স্তরের আইপিএস কর্তাদের এর আগে সিবিআইয়ের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ মর্যাদার কোনও অফিসারকে স্মরণকালের মধ্যে টানা চার দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়নি। অবশেষে কি হয় জানার অপেক্ষায় রয়েছে গোটা দেশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here