দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে নন্দীগ্রামে জনসভায় বক্তব্য রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি মনে করেন আমি নাও দাঁড়াতে পারি। আর যদি আপনাদের মনে হয় তবেই আমি মনোনয়ন জমা করব।’ তিনি জানান, এবারে সিঙ্গুর অথবা নন্দীগ্রামের মধ্যে যে কোনও একটি কেন্দ্র থেকে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। একইসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে তিনি বলেন, ‘আমাকে কেউ কেউ বহিরাগত বলছেন। তুমি নন্দীগ্রামের লোক আর আমি বীরভূমের এটুকুই তফাৎ। বহিরাগত হলে আমি মুখ্যমন্ত্রী হলাম কীকরে?’
আচমকা কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। বরং সিঙ্গুর অথবা নন্দীগ্রামের মধ্যে থেকেই কোথাও দাঁড়াবেন বলে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। ভোটের প্রচারে নন্দীগ্রামে গিয়ে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের মাটি থেকে জমি আন্দোলনের সূত্রপাত, তাই সেখান থেকেই তিনি ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছেন মমতা। তা নিয়ে গেরুয়া শিবির থেকে লাগাতার কটাক্ষ উড়ে আসছে। কিন্তু মমতা জানিয়েছেন, নন্দীগ্রামের মানুষ চেয়েছেন বলেই সেখান থেকে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। নন্দীগ্রামের মানুষ না চাইলে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেবেন না বলেও জানান।
বুধবার হলদিয়ায় গিয়ে মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দেবেন মমতা। তবে এখনই কলকাতা ফিরবেন না। ১১ মার্চ শিব চতুর্দশীর পুজো দিয়েই কলকাতা থেকে ফিরবেন বেল জানিয়েছেন।
নন্দীগ্রামের তৃণমূলের কর্মিসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে মমতার এই সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আজ। এদিন তিনি যা বললেন তা এক নজরে:
কেউ কেউ ঘর ভাঙার কথা বলবেন, ৭০-৩০। মনে রাখবেন আমরাই ১০০।
আমারও টাইটেল বন্দ্যোপাধ্যায়, আমি কি বলব, আমি ব্রাহ্মণ বাড়ির মেয়ে আর বাগ একজন তফসিলি?
নন্দীগ্রাম, আপনারাই লড়াই শিখিয়েছেন, যখন আন্দোলন চলছিল কেউ দিয়েছিলেন আজান, কেউ বাজিয়েছিলেন শাঁখ।
আমি নন্দীগ্রামের মানুষকে নিয়ে সর্বত্র গেছি। নন্দীগ্রামকে সারা পৃথিবী চিনেছে।
আমি কেন নন্দীগ্রামে দাঁড়ালাম? আমার তো ঘরের কেন্দ্র ছিল ভবানীপুর। যেদিন আমি শেষ এসেছিলাম নন্দীগ্রামে, তখন বিধায়ক কেউ ছিলেন না, সিটটা তখন খালি ছিল। তখন আমি বলেছিলাম, “নন্দীগ্রামে আমি দাঁড়ালে কেমন হবে?” আপনারা বললেন খুব ভাল হবে। আপনাদের উদ্দীপনা, উৎসাহ, উত্তেজনা দেখে গিয়েছিলাম আমি। এটাই আমার নন্দীগ্রামকে দেখা।
ভুলতে পারি নিজের নাম, ভুলব নাকো নন্দীগ্রাম।
আমি সিঙ্গুরে আন্দোলন করেছি চাষজমি নিয়ে। তার পরে নন্দীগ্রামে শুরু হয়। সিঙ্গুর না হলে নন্দীগ্রামে তুফান আসত না। আমি কৃষি আন্দোলনে এই দুইকে যুক্ত করেছিলাম।
শহর আমাদের সব দিয়েছে। কিন্তু আমি গ্রামের মেয়ে। গ্রামের জন্য আমার ভালবাসা আছে। আমি ছোটবেলায় আলে আলে ঘুরে বেড়াতাম, ফসল পুঁততাম।
মনে করিয়ে দিই কিছু ঘটনা। নন্দীগ্রামে আন্দোলন চলছে, আমার বাড়িতে কালীপুজো। আমি বাড়ি গেলাম না। একবার সুফিয়ান ফোন করছে, একবার তাহের। গুলির শব্দ। মানুষকে রক্ষা করতে বেরিয়ে এসেছিলাম।
১৪ মার্চ গুলি চলেছিল। তখন আমার গলব্লাডার অপারেশন হয়েছিল। ডাক্তারের কথা না শুনে আমি চলে এসেছিলাম। আমার গাড়ির ওপর হামলা করেছিল। কীভাবে অত্যাচার করেছে, কল্পনা করতে পারবেন না।
সেদিন কেউ ছিল না, আমি রাস্তায় বসে ছিলাম।
সে সময়ে রাজ্যপাল গোপাল গান্ধী আমায় ফোন করলেন রাত দুটোয়। আমায় বললেন, আপনি রাতটা সরে যান। আপনাকে পেট্রোল বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে পারে।
এখানকার কর্মীরা, আপনারা দলের সম্পদ। আপনারা বললে আমি কালকে নমিনেশন ক্যানসেল করলাম।
অনেকে আমায় বলছে, আমি বাইরের লোক। আমি বাংলার লোক, আমি বাইরের হয়ে গেলাম। আর তুমি হয়ে গেলে বাংলার লোক!
তাহলে তো আমার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া উচিত ছিল না। বহিরাগত মুখ্যমন্ত্রী হতে পারে?
আমিও হিন্দুঘরের মেয়ে। আমার সঙ্গে হিন্দুকার্ড খেলতে যাবেন না। হিন্দু ধর্মের আদর্শ মানুষকে ভালবাসা। হিন্দুধর্ম মানে চামুন্ডা, সিংহবাহিনী, দুর্গা, সরস্বতী, সন্তোষী কত মা। তেমনি সংখ্যালঘুদেরও মসজিদ আছে, দরগা আছে। সবার বৈচিত্র আছে।
আমি সকালে চণ্ডীপাঠ করে বাড়ি থেকে বেরোই, মনে রাখবেন। একটু শুনিয়ে দিই? আমার সঙ্গে হিন্দু ধর্ম নিয়ে কমপিটিশন করতে বলবেন।
(চণ্ডীপাঠ করলেন।)
আমি নন্দীগ্রামের মঙ্গলকামনা করলাম। হিন্দু ধর্ম আমায় শেখাচ্ছেন?
ধর্ম নিয়ে খেলছেন? খেলা হবে? সব রকম দেবতার পাঠ খেলবেন? কবে খেলবেন? মুখস্থ করা বুলি আর পা টেনে হেঁটে মিথ্যা কথা বলবেন না। সত্যি বলুন।
এখানে মাল্টিস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল আমি করেছি। স্বর্ণময়ী কলেজ আমি করেছি। শহিদ বেদি, কর্মতীর্থ, কিষাণ মান্ডি আমি করেছি।
হলদিয়ার সঙ্গে আমি নন্দীগ্রামকে জুড়ে দেব ব্রিজ তৈরি করে।
আমার ভবানীপুরটা গিয়ে দেখে আসবেন, সুলভ শৌচালয়, বসার জায়গা সব আছে।
আগামী দিনে নন্দীগ্রামকে মডেল নন্দীগ্রাম করতে চাই। কেউ বেকার থাকবে না, শিক্ষায় পিছিয়ে থাকবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথাও ইস্তেহারে রাখছি।
আমি ছোটবেলায় বইয়ে পড়েছিলাম, নন্দীগ্রামের দুই মাস্টারমশাই তর্ক করছিলেন, কে ভাল ইংরেজি জানেন আর কে কম। যিনি কম জানেন, তিনি একটু চালাক। তো জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আই ডোন্ট নো মানে কী? যিনি জানেন, তিনি বলেছেন আমি জানি না। অন্য জন তাকে ব্যঙ্গ করে চলে গেল।
আমি নন্দীগ্রামে দুটো বাড়ি নিয়েছি। তিন মাস ছাড়া ছাড়া আসব। পরে এখানে একটা কুঁড়েঘর বানিয়ে নেব। আমি কথা দিলে কথা রাখি। আমি ভাঁওতা দিয়ে, পকেটে টাকা দিয়ে রাজনীতি করি না। আমি রাজনীতি করি মন দিয়ে শুভেচ্ছা দিয়ে।
এখানে ভোট আছে পয়লা এপ্রিল তাই তো? ওদের এপ্রিল ফুল করে দেবেন।
পয়লা এপ্রিল খেলা হবে? চমকালে ভোট দেবেন? ঠিক বলছেন তো?
তাহলে, পয়লা এপ্রিল খেলা হবে, দেখা হবে, জেতা হবে। তৃণমূল জিতবে।
কেউ কেউ বাড়াবাড়ি করছে, চমকাচ্ছে। এই জোর ২ মে ভোট কাউন্টিংয়ের পরে কোথায় থাকে দেখব।
আমি চাই আপনাদের ভাল হোক। আপনারা সব খান। কিন্তু এমন কিছু বলবেন না জিভ দিয়ে, যা কটু বাক্য হয়ে যায়।
পুরনো অত্যাচারী অনেক সিপিএম এসে গেছে। বিজেপি নিয়ে এসেছে। লক্ষ্মণ শেঠের সঙ্গে যারা অত্যাচার করেছিল, তাদের নিয়ে নানারকম অত্যাচার করার প্ল্যান করছে আবার।
সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি কাউকে ঢুকতে দেবেন না। ওরা ভয় দেখাবে। কেস করবে বলবে। ভয় পাবেন না। বলবেন যা পারে করে নাও। যারা ফেস করতে পারে না তারা কেসের কথা বলে।
আপনাদের সকলকে শিব চতুর্দশীর শুভেচ্ছা। আগামীকাল নমিনেশন জমা দিতে যাব। জমা দিয়ে আবার নন্দীগ্রামে আসব। পুজো দিয়ে এখান থেকে কলকাতা রওনা দেব।
আমি দাঁড়াব তো? ভোট দেবেন তো? সারা পৃথিবীতে নন্দীগ্রামের নাম থাকবে। মা-বোনেরা সেদিন না থাকলে আন্দোলন সফল হতো না। স্যালুট জানাই। আমি সকলকে সম্মান জানাই।
ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। একতাই শক্তি। পাশে খেজুরি আছে, আমাদের প্রার্থী পার্থ ঘোষ, ভাল ছেলে, ওঁকে আপনারা ভোট দেবেন। সোহম আছে চণ্ডীপুরে। আপনারা সাপোর্ট দেবেন। আমি সবাইকে নিয়ে জিততে চাই।
জয় হিন্দ! জয় বাংলা! জয় তৃণমূল! জয় নন্দীগ্রাম!
আজ মাইকটা খারাপ ছিল, এতে ভাষণ দেওয়া সম্ভব নয়। যেই করেছেন, এটা ঠিক করেননি। দিস ইজ নট ফেয়ার।
বুথে বুথে সকলে তৈরি হয়ে যান। সব ক্লাব, সংগঠন, মন্দিরের সমর্থন চাইছি।