দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: বাংলায় আলু চাষের সর্বোৎকৃষ্ট মাটি,সিঙ্গুর এবং আরামবাগ। তার মাঝে যে তারকেশ্বরের বাবা তারকনাথের ধামের পাশাপাশি সেও আলুর জন্যই বিখ্যাত! এবং ওখানেই শুক্রবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরামর্শ দিলেন, আরও বেশি বেশি করে আলু খেতে। ভাতে আলু, ঝোলে আলু, দমে আলু..।
এ দিন তারকেশ্বরের বালিগোড়িতে গিয়েছিলেন মমতা। একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করেন সেখান থেকে। হুগলি জেলা বরাবরই আলু চাষের ক্ষেত্রে অগ্রণী। এ বার আলুর ফলনও হয়েছে প্রচুর। আর বেশি ফলন মানেই চিন্তাও বেশি। চাষিরা দাম পাবেন তো! সব আলু বিক্রি হবে তো! মরশুমের ওই ফলন দিয়েই কত কত চাষির সারাবছর সংসার চলে।
দিদি-র তাই পরামর্শ, বেশি করে আলু খান। তাহলে কৃষকদের ফলানো আলু ভাল বিক্রি হবে। মমতা বলেন, “আলু সেদ্ধ, আলু ভাজা, আলু পাপড়ি, আলুরদম খান। আলু দিয়ে মাছের ঝোল খেতেও তো ভাল লাগে। এ বার আলু বেশি হয়েছে। বেশি করে আলু খেলে, বেশি আলু বিক্রি হবে।” তবে একই সঙ্গে কৃষকদের উদ্দেশে মমতা বলেন, সামনের বার থেকে অন্য ফসলও ফলানোর চেষ্টা করুন।
যে কোনও ফসলই বেশি হলে কৃষকদের মাথায় চিন্তা থাকে দাম পাওয়া নিয়ে। যেমন পেঁয়াজের ক্ষেত্রে নাসিকে হয়। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী তথা মারাঠা স্ট্রং ম্যান শরদ পওয়ার বলতেন, অতি ফলন ও দাম না পাওয়ার চক্রটা কিছুটা চাষীদের কারণেও বারবার ফিরে আসে। কোনও বছর খুব ফলন হয়। তখন ওঁরা দাম পান না। পরের বছর কম চাষ করে। তখন আবার চাহিদার তুলনায় যোগান কম হওয়ায় বেশি দাম পান। তাতে উৎসাহী হয়ে পরের বার বেশি করে চাষ করেন। এবং সেই এক ঘটনা। দাম না পেয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাই চাষিদের উচিত চাষাবাদে বৈচিত্র আনা।
বাংলায় আলুর ক্ষেত্রেও এই সমস্যা হামেশাই দেখা যায়। অতীতে এমন হয়েছে, বাংলার আলু বাইরে যাতে যেতে না পারে তার ব্যবস্থা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বার গোটা দেশেই আলুর ফলন কম হয়েছিল। তাই বাংলার হেঁসেলে যাতে আলুর সংকট না হয়, তাই ওরকম নির্দেশ দিয়েছিলেন দিদি। আবার এর উল্টোটাও হয়েছে গত বছর। আলুর দাম না পেয়ে এই হুগলিরই সিঙ্গুরের রতনপুর, আরামবাগের মায়াপুর, গোঘাটের মদিনা-সহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার উপর আলু ফেলে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন কৃষকরা। অনেকের মতে, এ বছর ভোট রয়েছে। তাই হয়তো আলুর বেশি ফলন দেখেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন মমতা। বিক্ষোভের আঁচ যাতে না পড়ে সে ব্যাপারে সতর্ক মুখ্যমন্ত্রী। কৃষকদের অভয় দিয়ে দিদি এ দিন বলেন, “আপনারা চিন্তা করবেন না। সরকার ১০ লক্ষ মেট্রিকটন আলু কিনবে।” এর জন্য সরকারের সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত তারকেশ্বরের সভা হওয়ার কথা ছিল গত ৫ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সিবিআই –রাজীব কুমার ইস্যুতে তখন দিদি ছিলেন ধর্মতলায় ধর্ণামঞ্চে। তাই এই কর্মসূচি বাতিল হয়েছিল। পরে ঠিক হয় ২২ তারিখ হবে মমতার তারকেশ্বর সফর। এ দিন তারকেশ্বরে সভা করতে এসে সিঙ্গুরের স্মৃতি চারণাও করেন মমতা। বলেন, “আপনাদের মনে আছে আমি সিঙ্গুরে ১৪ দিন ধর্ণা আর কলকাতায় ২৬ দিন অনশন করেছিলাম? আমার সেই কথা খুব মনে পড়ে। আমি ধর্ণায় যখন বসেছিলাম তখন গ্রামের মায়েরা আমায় মুড়ি, শসা, ছোলা ভাজা দিয়ে যেতেন।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন “সিঙ্গুরে কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি গর্বিত।”
তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যের অন্যান্য অংশের মতো হুগলিতেও উন্নয়নের জোয়ার বয়েছে বলে এ দিনের অনুষ্ঠান থেকে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারকেশ্বরের মন্দির, জয়রামবাটি, কামারপুকুর, রামমোহন রায়ের বসত ভিটের সংস্কারের কথা উল্লেখ করে বলেন, আগামী দিনে আরও কাজ হবে। এ দিন তারকেশ্বরের অনুষ্ঠান থেকে চন্দননগরের ‘আলো হাবের’ও উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বলেন, “এত দিন কারও টনক নড়েনি। চন্দননগর থেকে সারা পৃথিবীর আলো জ্বলে। কিন্তু সেটাকে নিয়ে যে কিছু করা যায় কেউ ভাবেনি। কেউ না।”