

লোকমুখে শোনা যায় এই মা-ও খুব জাগ্রত, মন থেকে কিছু চাইলে ভক্তদের মনের আশা পূর্ণ করেন মা।
৭৯ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য বহন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে বনগাঁর হিন্দুমহাসভার (Bangaon Hindu Mahasava Khali Puja) সাড়ে ১২হাতের কালী। এ বছর ৭৯ বছরে পড়ল এই পুজো।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁর বড়মার পুজোর পাশাপাশি বনগাঁর এই প্রতিমা দীপাবলির আলোর উৎসবকে করে তোলে আরও বর্ণময়। লোকমুখে শোনা যায় এই মা-ও খুব জাগ্রত, মন থেকে কিছু চাইলে ভক্তদের মনের আশা পূর্ণ করেন মা।
বিগত কয়েক বছর ধরে শিল্পী প্রদীপ ভট্টাচার্যের হাতে সেজে উঠছেন মা। যদিও মায়ের আদল বরাবর সাবেকিয়ানা। পুজো হয় পুরোনো রীতি রেওয়াজ মেনেই।
কালীপুজোয় হিন্দুমহাসভায় নামে মানুষের ঢল। পুজোর দিনগুলোয় গোটা বনগাঁ যেন একটাই দিক, ‘হিন্দুমহাসভা’।

সোনার গহনায় সাজে ‘বড় মা’ বিশাল প্রতিমা, মায়ের রূপ, ঝাড়বাতি আর প্রচলিত ১০৮ টি ঢাকের আওয়াজ যেন জাঁকজমক আর থিমের চাকচিক্যকেও হার মানায়। প্রতি বছর ভক্তি ও বিশ্বাসের টানে ভক্তরা ছুটে আসেন মায়ের কাছে। দেখুন ভিডিও
এ বছরও তার অন্যথা হয়নি, সোমবার ছিল পুজোর উদবোধন । এদিন সন্ধ্যা থেকেই গুটি গুটি পায়ে ভিড় জমিয়েছেন ভক্তরা। মাকে দর্শন করে কেউ করছেন প্রার্থনা আবার কেউ তুলছেন ছবি।
পুজোর উদ্যোক্তারা জানান, স্বাধীনতার আগে থেকেই হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী এই কালীপুজো I এখন বনগাঁর আপামর ব্যবসায়ীরদের হাত ধরে বনগাঁবাসীর পুজো হয়ে উঠেছে এটি।

জাঁকজমক নেই। সাবেকিয়ানা ও নিষ্ঠাই এই পুজোর মূল বিষয়, বললেন এবারের পুজো কমিটির সদস্য সুভাষ হালদার I তাঁর কথায় বনগাঁবাসীর কাছে হিন্দু মহাসভার কালীই তাঁদের ‘বড়মা’।
বনগাঁ শহরের হীরালাল মূর্তির পাশেই অস্থায়ী পুজো মণ্ডপে প্রতিবারের মতো এবারও ট্রলির উপর বানানো হয়েছে প্রতিমা। এখানে বরাবরের মতো এবারও মায়ের সঙ্গে থাকছে ডাকিনী যোগিনী।
সুভাষবাবু আরও বলেন, চারদিন মাকে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভক্তদের দানে ৫০ ভরি সোনার ও দেড়শো ভরিরও বেশি রুপোর গয়নায় সাজানো হয়েছে মা’কে। পুলিশ প্রহাড়া ছাড়াও সিসিটিভির নজরদারিতে মোড়া রয়েছে গোটা মণ্ডপ চত্বর।

পুজোর ক’দিন ঢালাও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। রয়েছে বাউল গানের আসর। শহর পরিক্রমা করে ইছামতী নদীতে বিসর্জন দেওয়া হবে বড় মাকে ৷ ট্রলি করেই নিয়ে যাওয়া হবে মাকে। হিন্দু মহাসভার কালী প্রতিমা দেখতে বিসর্জনের দিন রাস্তার দু’ধারে ভিড় জমে যায়। এবারও মানুষের মধ্যে সেই উন্মাদনার কোনও ঘাটতি হবে না বলেই মনে করেন পুজো উদ্যোক্তারা।
কালীপুজো। শক্তির আরাধনা। দিকে দিকে সাড়ম্বরে পূজিতা হবেন মা। দেবী বন্দনায় মেতে উঠবে সমগ্র বাংলা। জগতে কল্যাণ এবং শান্তি স্থাপনের জন্য ভক্তরা দেবীর আরাধনা করেন।
তিনি অসুখ বিনাশিনী। মহা শক্তিধর শুম্ভ-নিশুম্ভের হাত থেকে ত্রিলোককে রক্ষা করতেই দেবীর সৃষ্টি। নরমুণ্ডই দেবীর অলঙ্কার।

যুদ্ধে পরাজিত সেনাপতিদের মুণ্ডের মালা মা কালীর কণ্ঠের শোভা। বলা হয়, পঞ্চাশটি মুণ্ডের এই মালা আসলে জ্ঞানের প্রতীক।
যে সেনাপতি তাঁর চুল ধরে অপমান করেছিল, তাঁর মুণ্ড দেবী হাতে ধরে থাকেন। মৃত সেনাপতিদের হাতের পাতা দেবী কোমরে ধারণ করেন। শাস্ত্রমতে এই করতলও জ্ঞানের প্রতীক। ভুল করে স্বামী মহাদেবের গায়ে পা তুলে ফেলায় লজ্জিতা রণে উন্মত্ত দেবী।



