দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শেষ দফার ভোটে সকাল থেকেই উত্তপ্ত বীরভূমের ইলামবাজার এলাকা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়লেন বোলপুর বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। অভিযোগ, প্রচুর তৃণমূল কর্মী লাঠি, বাঁশ নিয়ে তাড়া করেন তাঁকে। তাঁর গাড়িও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। বিজেপি-র দাবি, কোনও মতে সেখান থেকে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন দলীয় প্রার্থী। তৃণমূল যদিও এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ইলামবাজার থানার ধরমপুর অঞ্চলের ডোমনপুর গ্রামে অনির্বাণের উপর হামলা হয়েছে বলে বিজেপি-র অভিযোগ। তাদের অভিযোগ, সেখানে পৌঁছতেই তাঁর গাড়ির উপর চড়াও হয় প্রচুর তৃনমূলকর্মী। বিজেপি কর্মীরা বাধা দিতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এই ঘটনার জেরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে ওই গ্রামে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রচুর পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে ইলামবাজারের ঘুড়িশা গ্রামে গিয়েও আক্রমণের মুখে পড়েন অনির্বাণ।

বৃহস্পতিবার সকালে ইলামবাজারের বারুইপুর এলাকার ১১৫ নম্বর বুথের তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনীরা বুথের পাশে ব্যাপক সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিজেপি। সেখানে বিজেপি কর্মীদেরও উপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনায় বিজেপি-র বেশ কয়েকজন কর্মীর মাথা ফেটেছে বলে অভিযোগ।

জেলা তৃণমূল যদিও অনির্বাণের উপর এই হামলায় তাদের যোগ থাকা অস্বীকার করেছে

অষ্টম দফার ভোটের শুরু থেকেই উত্তপ্ত বীরভূম। রাতভর বোমাবাজি চলেছে নানুরে। বোলপুরে বুথে বুথে হামলার অভিযোগ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। পাল্টা দোষ চাপিয়েছে শাসক দলও। নানুর বিধানসভার প্রার্থী তারকেশ্বর সাহার গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। অন্যদিকে, ইলামবাজারের বুথে বিজেপি কর্মীদের বেধড়ক মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

শেষ দফায় বীরভূমের ১১টি আসনে ভোট হচ্ছে–সিউড়ি, সাঁইথিয়া, দুবরাজপুর, বোলপুর, নানুর, লাভপুর, রামপুরহাট, ময়ূরেশ্বর, মুরারই, নলহাটি ও হাসন।  এর মধ্যে নানুর, লাভপুর, বোলপুর, ময়ূরেশ্বরে গতকাল রাত থেকেই অশান্তি চলছে। নানুর বিধানসভার বেলুটি গ্রামে সারা রাতা বোমাবাজি হয়েছে। বিজেপি কর্মীদের বন্দুকের বাঁট দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদিন সকালে নানুরের বিজেপি প্রার্থী তারকেশ্বর সাহার গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ।

বিজেপি প্রার্থীর দাবি, সকালে যখন তিনি বুথে যাচ্ছিলেন, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে। লাঠি দিয়ে মেরে গাড়ির জানলার কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। অল্পের জন্য রেহাই পেয়েছেন তিনি। তারকেশ্বরবাবুর অভিযোগ, বুথে বুথে সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী। গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে।


নানুরের সুন্দরপুর গ্রামে ভোটারদের ভয় দেখিয়ে ভোটার কার্ড কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। প্রায় আড়াইশো জন ভোটারের কার্ড কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

অন্যদিকে, বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ইলামবাজারের বারুইপুরে ১১৫ নম্বর বুথ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, বুথ ঘিরে বড় জমায়েত করে রেখেছে দুষ্কৃতীরা। ভোটদানে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, তৃণমূলের শতাধিক দুষ্কৃতী সন্ত্রাস চালাচ্ছে বুথে। বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। গুরুতর জখম কয়েকজন।

বোলপুর বিধানসভারই ধরমপুরে বিজেপি প্রার্থীকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে বলে খবর। বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রার্থী দাবি করেছেন, তাঁকে দেখেই গো ব্যাক স্লোগান দেয় তৃণমূল কর্মীরা। লাঠি, বাঁশ নিয়ে তাড়া করে। তাঁর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। অর্নিবাণবাবুর অভিযোগ, “পুলিশের সামনেই হামলা হয়েছে। এই হামলার নেপথ্যে আছে পিসি-ভাইপোর গুন্ডারা।”

ইলামবাজারেরই খয়েরবুনি ও তুলামোড়া গ্রামে ভোটারদের আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। গ্রামবাসীদের দাবি, গত চারটি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেননি তাঁরা। হুমকি দিয়ে ভোটারদের আটকে রাখা হয়েছিল। এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী আশ্বাস দিলেও আতঙ্ক কাটিয়ে ফঠতে পারছেন না তাঁরা।

উত্তেজনা ছড়িয়েছে ময়ুরেশ্বরেও। বীরনগরী গ্রামে ১৮৯ ও ১৯০ নম্বর বুথে দুষ্কৃতীদের হামলায় গুরুতর জখম বিজেপি কর্মী বিশ্বজিৎ মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের গুন্ডারা লাঠি দিয়ে মেরেছে তাঁকে।


এদিকে দুবরাজ বিধানসভার অন্তর্গত কাঁকরতলা থানা এলাকায় তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। কদমডাঙা গ্রামে তৃণমূল নেতার বাড়ির কাছ থেকে ৪৫টি সকেট বোমা ও ৪ কিলোগ্রাম গান পাউডার উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। পৌঁছেছে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here