দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত অসম সহ উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্য। গত মঙ্গলবার থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে অসমে। বন্যা এবং ধসের ফলে ইতিমধ্যেই ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে অসমে। এ ছাড়াও অরুণাচল প্রদেশ এবং মিজোরামে মারা গিয়েছেন ৪ জন। ক্রমশ খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসম। রাজ্যের ৩৩টি জেলার মধ্যে ২১টি জেলাই তলিয়ে গিয়েছে ব্রহ্মপুত্রের জলে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ। অনুমান, প্রায় ৭০০ ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসমের লখিমপুর, ধেমাজি, বিশ্বনাথ, সেনাতপুর, ডারনিং, বরপেটা, চিরাং, নলবাড়ি, বঙ্গাইগাঁও, গোয়ালপাড়া, মোরিগাঁও, হোজাই—-এইসব জেলাগুলির।
টানা বৃষ্টির ফলে জলের পরিমাণ বেড়েছে ব্রহ্মপুত্রে। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে অসমের প্রধান নদী। ব্রহ্মপুত্র ছাড়াও বিপদসীমা অতিক্রম করেছে আরও ন’টি নদী। তলিয়ে গিয়েছে, ২৭ হাজার হেক্টর কৃষিজমি। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির কোনও লক্ষণ এখনই নেই বলেই জানিয়েছে অসম প্রশাসন। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে অসমের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ব্যাহত হয়েছে রেল পরিষেবাও। ধস নেমে ভেঙে গিয়েছে রাস্তা। ফলে অসমের বহু জায়গায় আটকে রয়েছেন পর্যটকরা।
ইতিমধ্যেই উদ্ধারকার্যে নেমেছে সেনাবাহিনী এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলাকী সংস্থার বিশেষ দল। ৫৩টি ত্রাণ শিবিরে প্রায় ২০০০ লোককে উদ্ধার করে এনে রাখা হয়েছে। তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার এবং পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। জলের তলায় থাকা অসমের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বাকি বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী এবং এনডিআরএফ-এর বিশেষ দল। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ।
লাগাতার ভারী বৃষ্টি এবং তার জেরে ধস নেমে বিপর্যস্ত উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, অসম, বিহার। শনিবার থেকে আগামী পাঁচদিন উত্তর এবং পূর্ব উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, ঝাড়খণ্ড, দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, কোঙ্কন উপকূল, হিমাচল প্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ, পুডুচেরি, মধ্য মহারাষ্ট্র, গোয়া, উপকূলবর্তী কর্নাটক এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন। দক্ষিণপশ্চিম এবং পশ্চিমমধ্য আরব সাগর উত্তাল থাকতে পারে। ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইতে পারে। তাই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যেতে পরামর্শ দিয়েছে মৌসম ভবন।
গত মঙ্গলবার থেকে ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় উত্তর প্রদেশের ১৪টি জেলায় এপর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা গিয়েছে ২৩টি গবাদি পশু এবং ভেঙে পড়েছে ১৩৩টি বাড়িঘর। যে ১৪টি জেলা প্লাবিত সেগুলি হল উন্নাও, অম্বেদকরনগর, প্রয়াগরাজ, খিরি, হরদোই, কানপুরনগর, পিলিভিট, গোরখপুর, বারবাঁকি, সোনভদ্র, চান্ডোলি, ফিরোজাবাদ, মউ এবং সুলতানপুর।
উত্তরাখন্ডের ঋষিকেশে গঙ্গা বইছে বিপদসীমার ৩৩৮.৫ মিটার উপর দিয়ে। শুধু গঙ্গাই নয়, উত্তরাখন্ড এবং উত্তর প্রদেশের একাধিক নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। শুক্রবার লামবাগাড় অঞ্চলে ধস নেমে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বদ্রীনাথ সড়ক। ফলে স্থগিত হয়ে যায় বদ্রীনাথ যাত্রা। আটকে পড়েন কমপক্ষে একহাজার তীর্থযাত্রী। রাস্তা সাফাইয়ের কাজ অবিরাম বৃষ্টিতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ইতিমধ্যে শনিবার দুপুরে চামোলি জেলার পিপলকোটিতে একটি যাত্রীবাহী বাস কাদাভরা রাস্তায় আটকে গিয়েছে।
এখনও পর্যন্ত অসমের ৩৩টি জেলার মধ্যে ২১টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অসম বিপর্যয় মোকাবিলা দল বা এএসডিএমএ–এর তথ্য অনুযায়ী, এপর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৫৫৬টি গ্রাম প্লাবিত। ক্ষতিগ্রস্ত ৮.৬৯ লক্ষ মানুষ। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ব্রহ্মপুত্র নদ সহ অসমের পাঁচটি নদী বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলি হল ধেমাজি, লখিমপুর, বঙ্গাইগাঁও এবং বরাপেটা।
শুধু বরাপেটাতেই ক্ষতিগ্রস্ত ৮৫০০০ মানুষ। বিশ্বখ্যাত অসম চায়ের জন্য প্রসিদ্ধ ধেমাজি এবং লখিমপুরে বহু চা বাগানে জল ঢুকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে চা গাছ। নষ্ট হয়েছে ২৭৮৬৪ হেক্টর জমির ফসলও। ৬৮টি ত্রাণশিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন ৭৬০০–এরও বেশি মানুষ।
বিহারে টানা বৃষ্টিতে চম্পারণ জেলার গন্ডক নদীর ব্যারাজে জল বিপদসীমা পেরিয়ে গিয়েছে। জলমগ্ন ট্রেনট্র্যাক। ফলে ব্যাহত হচ্ছে রেল পরিষেবা। চম্পারম স্টেশনের ক্লোকরুম জলে ডুবে গিয়েছে। মৌসম ভবন আগামী পাঁচদিন আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়ায় রীতিমতো শঙ্কিত প্রশাসন।
পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং–এও সেটিঝোরার কাছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে শুক্রবার রাতে লাগাতার বৃষ্টিতে ফের ধস নামায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে যান চলাচল। বৃহস্পতিবার ধস নামার পর শুক্রবার দুপুর থেকে রাস্তা মেরামত করেছিল সেনাবাহিনী এবং পূর্ত দপ্তর। কিন্তু রাতে ফের ধস নামায় আটকে গিয়েছে সেনার গাড়িও।
ফেল শিলিগুড়ির সঙ্গে সিকিমের সড়ক যোগাযোগ আবারও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাগডোগরায় নদীর তোড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে কংক্রিটের সেতু। ভূটান পাহাড়ে বৃষ্টির ফলে ডুয়ার্সের একাধিক চা বাগান জলমগ্ন। কোচবিহারের তুফানগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত। তিস্তা সহ একাধিক নদীতে বাড়ছে জলস্তর। জারি হলুদ সতর্কতা।
নেপালেও ভারী বৃষ্টির ফলে বন্যা এবং ধসে বিপর্যস্ত জনজীবন। পুলিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায়, শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২১ জন। এখনও নিখোঁজ ১০ জন। জখম আরও ১০ জন। বিভিন্ন প্লাবিত অঞ্চল থেকে এপর্যন্ত ৫০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। নেপাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টির ফলে দেশের ৭৭টি জেলার ২০টি প্লাবিত। ভেঙে পড়েছে একাধিক বাড়িঘর। আগামী ৪৮ ঘণ্টা আরও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে নেপালের আবহাওয়া দপ্তর।