দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃঘরে থাকুন। ভয় নেই সরকার পাশে আছে।’
মঙ্গলবার শহরের পথে নেমে মানুষকে এ কথা বলে ভরসা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন দুপুরে নগরপাল অনুজ শর্মাকে নিয়ে কলকাতার বহু জায়গায় তিনি ঘোরেন। সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখেন।
নবান্ন থেকে বেরিয়ে এজেসি বোস রোড, উড়ালপুল ধরে পার্ক সার্কাস, রাজাবাজার, তপসিয়া, নারকেলডাঙা, মানিকতলা, মল্লিকবাজার হয়ে মাঠপুকুর, ধাপা ক্রসিং–সহ বেশ কিছু জায়গায় যান। মানু্ষকে আস্বস্ত করেন। সাহস জোগান। ঘরে থাকার পরামর্শ দেন।
মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িতে ছিল মাইক। তিনি বলেন, ‘ভয়ের কোনও কারণ নেই। আপনাদের সব রকম সাহায্য করবে পুলিশ। সুস্থ থাকুন, ঘরে থাকুন। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করুন। আমি আপনাদের কাছে এসেছি। এই পরিস্থিতিতে বাংলার মানুষের খুব অসুবিধে হচ্ছে। ভারতে এর আগে কখনও লকডাউন হয়নি। আপনারা ভাল ভাবে থাকবেন। কোনও প্রয়োজনে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আপনাদের যে–কোনও প্রয়োজনে রাজ্য সরকার পাশে আছে।’
এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী পথে নেমেছেন। কখনও হাসপাতাল, কখনও রেশন দোকান, কখনও বাজার পরিদর্শন করেছেন।
এদিন নবান্নে মুখ্য সচিব রাজীব সিন্হা সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রত্যেক দিনই পরিস্থিতির কিছু–না–কিছু বদল হচ্ছে। আমাদের তরফেও লাগাতার প্রস্তুতি চলছে। যে–সমস্ত জায়গায় সংক্রমণের খবর পেয়েছি, যেমন কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনার কিছু অংশ, হাওড়ার মতো জায়গায় নজরদারি চলছে। যে–সব জায়গায় স্বাভাবিক লকডাউন চলছে, সেখানে মানুষকে বাড়িতে থাকতে বলা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘২৩ জেলার মধ্যে ৯টিতে কোনও সংক্রমণের খবর নেই। ১০টি জেলায় অল্প সংখ্যক জায়গায় সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। উত্তরবঙ্গে গত ১৫ দিনে নতুন কোনও খবর নেই। পূর্ব মেদিনীপুরে ১১ এপ্রিল সংক্রমণের শেষ খবর এসেছিল। ১৯ এপ্রিল আবার সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। অরেঞ্জ থেকে রেড জোনে গেছে সেই জায়গা।
আমরা আইসিএমআর–এর নির্দেশিকা এবং ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের নিয়ম মেনেই কাজ করছি। সোমবার পর্যন্ত ২৪৫ জন আক্রান্তের খবর ছিল। নতুন করে আজ ২৯টি পজিটিভ কেসের খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৭৪। এদিন কাউকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়নি।
মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃত্যু–সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫। এখনও পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়েছে ৭৩ জনকে। নতুন যে ২৯ জন আক্রান্তের খবর আমরা পেয়েছি, সেগুলি এসেছে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, পশ্চিম বর্ধমান ও হুগলি থেকে। এদিন পর্যন্ত মোট ৬,১৮২ জনের পরীক্ষা হয়েছে।
বুধবার থেকে নতুন দুটি পরীক্ষাগারে কাজ শুরু হবে। এগুলি হল আরজিকর এবং রাজারহাট। মালদায় পুরোদমে কাজ চলছে। সেখানে ৭৪ জনের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়েছে। সব রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে। র্যাপিড টেস্টিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। কলকাতা, হাওড়া মিলিয়ে ২২০ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। সরকারি কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে এই মুহূর্তে রয়েছেন ৩৭৩ জন। হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ১,৬৪১ জনকে মুক্ত করা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টিনে গোটা রাজ্যে রয়েছেন ৩৫ হাজার ৩৬৫ জন। বিভিন্ন কলকারখানা খোলার জন্য ২,২২৭টি আবেদন জমা পড়েছিল সরকারের কাছে। তা থেকে ৭১৩ জনকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ৪১৩টি বাতিল হয়েছে। কারণ যে–সব জায়গায় সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে অনুমতি দেওয়া যাবে না। এ ছাড়াও ১,১০২টি আবেদন বিবেচনা স্তরে রয়েছে।’
মুখ্য সচিব আরও বলেন, ‘গ্লোবাল অ্যাডভাইসরি বোর্ডের দুটি বৈঠক হয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে কীভাবে যুক্ত করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার আবার বৈঠক হবে।’ এদিন এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ্য সচিব বলেন, ‘কলকাতা ও সারা রাজ্যে কীভাবে কাজ হচ্ছে তা আপনারা জানেন। সর্বত্র লকডাউন প্রোটোকল মেনেই কাজ হচ্ছে। কলকাতা–সহ সমস্ত জেলায় ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হচ্ছে। লকডাউন বিধি ভাঙার জন্য এখনও পর্যন্ত গোটা রাজ্যে ২৪ হাজার মানুষকে ধরা হয়েছে। নির্দিষ্ট ধারায় ৩,১০০ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। ৩ হাজার গাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। রাজ্য সমস্ত কাজই করছে নিয়ম মেনে।
এই মুহূর্তে ১০টি জেলা অরেঞ্জ এবং ৯টি গ্রিন স্তরে রয়েছে।’ টেস্টিং কিট নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘কিছু নিম্ন মানের কিট এসেছিল। প্রয়োগের সময় তা বোঝা যায়। আমরা নাইসেড থেকে কিট এনেছিলাম। সেই কিট পুরনো ছিল। ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি থেকে ১০ হাজার কিট দেওয়া হবে।’
এদিকে বাঙ্গুর হাসপাতাল নিয়ে সোমবার বাবুল সুপ্রিয় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন। এ ব্যাপারে মুখ্য সচিব প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি আমি না দেখে কিছু বলতে পারব না। তিনি একজন সাংসদ। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যখন, আমরা বিষয়টা দেখব। কোনও ঘাটতি থাকলে তা দেখা হবে।’