দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কুড়ি সালের ১৫ জুন। গালওয়ান নদী উপত্যকায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভারতের বাহিনী ও চিনের লাল ফৌজ। দু’পক্ষ মিলিয়ে সেনার সংখ্যা প্রায় শতাধিক। চিনের সেনাদের হাতে কাঁটা লাগানো লাঠি, বর্ম। দুই তরফের বাহিনী মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শুরু হল বচসা। হাতাহাতি। গালওয়ান সংঘর্ষের সেই ভিডিও সামনে এনেছে চিনের একটি মিডিয়া।
দুটি ভিডিও টুইট করেছে চিনের মিডিয়া। একটিতে চিনা সাংবাদিক শেন শিওয়েইকে বলতে শোনা গেছে, ভারতীয় বাহিনীই নাকি চিনের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিল। তাতেই রুখে দাঁড়িয়েছিল লাল ফৌজ। অন্য ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, ভারতীয় সেনার ওপর প্রবল আক্রোশে হামলা করার চেষ্টা করছে চিনের বাহিনী।
গালওয়ান উপত্যকার হাড়হিম ঠান্ডায় নদী পেরোতে দেখা গেছে দুই দেশের সেনাবাহিনীকে। দুই দেশের সেনাকেই বলতে শোনা গেছে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, গালওয়ানের এই উপত্যকা ঘিরে রয়েছে পাহাড়ের সারি। পাথুরে খাঁজে ভর্তি দুর্গম এলাকায় সারা রাত মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভারত ও চিনের সেনা।
এপ্রিলে লাদাখ-সংঘর্ষের পর জুনে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। ১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে শহিদ হন ভারতের এক উচ্চপদস্থ সেনা আধিকারিক সহ ২০ জন। ভারতীয় সেনা সূত্রে দাবি করা হয়, চিনের বাহিনীর অন্তত ৩০ জনের প্রাণ গিয়েছিল ওই সংঘর্ষে। তবে চিন তা মানতে চায়নি। তাদের দাবি ছিল, কয়েকজন সেনার প্রাণ গিয়েছিল সংঘর্ষে। আজ শুক্রবার, চিন স্বীকার করেছে তাদের পাঁচ জন সেনা নিহত হয়েছিল। তাদের নামও সামনে এনেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি।
Honoring our fallen heroes in Galwan Valley skirmish on 15 June 2020:
— Eva 郑 عائشة (@evazhengll) February 19, 2021
1. Qi Fabao, Regimental Commander, seriously injured;
2. Chen Hongjun, Battalion Commander, martyred;
3. Chen Xiangrong, Soldier, martyred;
4. Xiao Siyuan, Soldier, martyred;
5. Wang Zhuoran, Soldier, martyred. pic.twitter.com/6ThBZOhtdh
শান্তিপূর্ণভাবে সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে দুই দেশই। আপাতত প্যাঙ্গং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ এলাকা খালি করা হয়েছে বলে খবর। ভারতীয় সেনা সূত্রই বলেছে, প্যাঙ্গং হ্রদের দুই তীর থেকেই তাঁবু তুলে ফেলেছে লাল সেনা। সামরিক কাঠামো, জেটি, হেলিপ্যাড খুলে ফেলেছে। যুদ্ধট্যাঙ্কও সরিয়ে নিয়ে গেছে তারা। পিছিয়ে এসেছে ভারতীয় বাহিনীও। ডিসএনগেজমেন্টের প্রক্রিয়া নিয়ে আগামীকাল বৈঠক হওয়ার কথাও আছে। তার মধ্যেই ফের এই ভিডিও সামনে এনে চিন নতুন করে উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলেই দাবি পর্যবেক্ষকদের। চিন দেখানোর চেষ্টা করছে তারা নয়, আদতে ভারতীয় সেনাই অনধিকার অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল।
China finally released footage frm border clash w India in Galwan Valley on 15 Jun 2020 last yr.
— Carl Zha (@CarlZha) February 19, 2021
PLA officially stated 3 casualties frm fighting 1 frm drowning. Interestingly Chinese domestic media don’t name India just “foreign troops” pic.twitter.com/ygULK8cQF6
চিন-ভারত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে ঝামেলা শুরু হয় সেই মে মাস থেকেই। গত ৫ মে লাদাখের প্যাঙ্গং লেকের কাছে প্রায় আড়াইশ জন ভারতীয় ও চিনের সেনা জওয়ান রীতিমতো লাঠিসোটা, লোহার রড নিয়ে লড়াই করে। একে অপরের দিকে আধলা পাথরও ছোড়ে। তাতে আহত দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন। এরপরে ৯ মে সিকিম-চিন সীমান্তে নাকু লা-তে দু’দেশের প্রায় দেড়শ সেনা মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তাতে দু’পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। ১৫ জুন হট স্প্রিং লাগোয়া ১৫ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্টে ফের চিনের বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘাত হয় ভারতীয় সেনা জওয়ানদের। ইন্দো-তিব্বত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা বলেছিলেন, সারা রাত ধরে লড়াই চলেছিল চিনের সেনার সঙ্গে। জবরদস্তি তারা ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছিল। ১৭ থেকে ২০ ঘণ্টা বীর বিক্রমে লড়েছিলেন ভারতীয় জওয়ানরা। তাতেই পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল চিনের ফৌজ।