দেশের সময় ওয়েবডেস্ক:আগামী লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তী বাজেটে দেদার সুযোগ–সুবিধা–ছাড় ঘোষণা করলেন ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। শুক্রবার তিনি ভাড়াবাড়িতে বসবাসকারীদের জন্য টিডিএসে ছাড়ের বড় প্রস্তাব রেখেছেন। বাড়িভাড়া হিসাবে ব্যয় টাকার ওপর মিলবে এই ছাড়। এতদিন ভাড়াটিয়াদের জন্য টিডিএস ছাড়ের সীমা ছিল ১.৮ লক্ষ, সেই সীমা বাড়িয়ে ২.৪ লক্ষ টাকা করার প্রস্তার রেখেছেন গোয়েল।
একইভাবে দ্বিতীয়–দখলীকৃত বাড়ির ধারণামূলক ভাড়ার ওপর থেকেও কর ছাড়ের প্রস্তাব এদিন তিনি তুলে ধরেন। পাশাপাশি অবিক্রিত ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রেও প্রথম দু’বছরের জন্য কর ছাড়ের প্রস্তাব রয়েছে তাঁর বাজেট বক্তব্যে। অথচ এই ভাড়াটিয়াদের কেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নিয়ে আসা হবে না তা নিয়ে বাজেটে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। ফলে ছাড় দিয়ে মন জয়ের চেষ্টা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। গত চারবছরের মতো এবারও সাধারণ বাজেটের সঙ্গেই রেল বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। আর রেল বাজেট পেশের সময়ই চলতি বছরকে রেলের জন্য ‘‌সবচেয়ে নিরাপদ বছর’ আখ্যা দিলেন তিনি। রেলবাজেটে ২০১৯–২০ আর্থিক বছরের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৬৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে থেকে রেলের পরিকাঠামো উন্নয়নে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এর সঙ্গেই তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি দেশের শেষ রক্ষীহীন রেলগেটটিও রক্ষী পেয়েছে। ফলে শুক্রবার থেকে দেশে ব্রডগেজ লাইনে আর কোনো প্রহরীবিহীন রেলগেট থাকল না। এছাড়াও দেশের রেলস্টেশনগুলিকে বিমানবন্দরের রূপ দিতে চাইছে কেন্দ্র। এর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে স্টেশন ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনকে (আইআরএসডিসি)। মধ্যপ্রদেশের হাবিবগঞ্জ এবং গুজরাতের গান্ধীনগর রেলস্টেশনকে আপাতত সে রকম ভাবে সাজিয়ে তোলা হবে। এর পাশাপাশি বাজেট ভাষণে রেলমন্ত্রকের সাফল্যের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি। পীযূষ গোয়েল বলেন, ভারতে শীঘ্রই বিশ্বের উন্নত দেশগুলির মতো আধা–উচ্চগতির ট্রেন চালানো হবে। যার নাম দেওয়া হয়েছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। ভারতের প্রযুক্তিবিদরাই ‘‌মেক–ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে‌ এই ট্রেনটি তৈরি করেছেন। রেলমন্ত্রী আশাবাদী ভারতীয় রেল আগামীদিনে তাদের অপারেটিং রেশিও উন্নত করবে।

শুক্রবার ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল গ্র্যাচুইটির সর্বোচ্চ সীমা বাড়িয়ে ৩০ লক্ষ টাকা করার প্রস্তাব দিলেন। গ্র্যাচুইটির সীমা ১০ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াল ৩০ লক্ষ টাকা। সংসদে ২০১৯–২০ সালের বাজেট পেশ করার সময় এই কথা জানান পীযূষ গোয়েল। গ্র্যাচুইটির পরিমাণ বাড়ার ফলে সবথেকে সুবিধা হল তাঁদের, যাঁরা কোনও সংস্থায় পাঁচ বছরের বেশি চাকরি করেছেন। তার ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর সংস্থা অনেক বেশি করমুক্ত গ্র্যাচুইটি দিতে সক্ষম হবেন তাঁকে।

গত বছরের মার্চ মাসে বেসরকারি ক্ষেত্রে করমুক্ত গ্র্যাচুইটির সীমা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। ১৯৭২ সালের গ্র্যাচুইটির বেতন আইন অনুসারে, ১০ বা তার বেশি সদস্যের সংস্থায় কোনও কর্মী যদি পাঁচ বছরের বেশিদিন চাকরি করেন, তবেই তিনি গ্র‌্যাচুইটির আওতায় পড়বেন।

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে ৩ লক্ষ কোটি টাকা। এদিকে, বাজেট বাজেট পেশের ঠিক আগের দিন বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ৬টি উচ্চমানের আধুনিক সাবমেরিন তৈরি করার জন্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি বাড়ানোর জন্যে স্ট্রাটেজিক পার্টনারশিপ মডেলের অধীনে এই পদক্ষেপ। ৬টি নতুন সাবমেরিন তৈরি হলে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে বর্তমান পরিকাঠামো। পালে হাওয়া লাগবে মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগেও। দেশেই গড়ে উঠবে প্রোডাকশন ফেসিলিটি।

বিদেশি মূল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থার থেকে সরাসরি যন্ত্রপাতি কিনে দেশেই তৈরি হবে এই সব সাবমেরিন। বেশকিছু বিদেশি সংস্থা এই সাবমেরিন তৈরির বরাত পেতে ইতিমধ্যেই উত্‍সাহ প্রকাশ করেছে। তালিকায় রয়েছে রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি এবং সুইডেনের সংস্থার নাম। এর পাশাপাশি ফ্রান্স থেকে ৫০০০টি অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল কেনার ব্যাপারেও সম্মতি জানানো হয়েছে প্রতিরক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে। স্ট্রাটেজিক পার্টনারশিপ মডেলের অন্তর্গত এই নিয়ে দ্বিতীয় প্রজেক্টে সম্মতি দিল ডিফেন্স অ্যাক্যুইজিশন কাউন্সিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের নেতৃত্বে ডিএসি ১১১টি নেভাল ইউটিলিটি হেলিকপ্টার তৈরি করার অনুমতি দিয়েছিল ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে। এর জন্যে বরাদ্দ হয়েছিল ২১,৭৩৮ কোটি টাকা। আর এবার তৈরি করা হবে ৬টি সাবমেরিন। শুধুমাত্র আধুনিক চপার অথবা সাবমেরিনই নয়, আগামীদিনে যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে খবর প্রতিরক্ষা দপ্তর সূত্রে। ‌‌

লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের কৃষকদের মন জয়ের চেষ্টা করলেন নরেন্দ্র মোদি। অন্তর্বর্তী বাজেটে প্রতিবছর কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা পাঠানোর ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। পীযূষ গোয়েল ঘোষণা করেন, ‘‌প্রধানমন্ত্রী কৃষি সম্মান নিধি যোজনায় দু’‌হেক্টরের কম জমি রয়েছে এমন কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রতিবছর ৬ হাজার টাকা করে দেবে সরকার। তিনটি কিস্তিতে এই টাকা পাঠানো হবে।’‌ কিন্তু ফসলের ক্ষতি হলে কতটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে তা এদিন বলা হয়নি বাজেটে। এমনকী প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় বরাদ্দ বাড়বে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেল।

পীযূষ গোয়েলের দাবি, ‘‌সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে উপকৃত হবেন ১২ কোটি ছোট এবং প্রান্তিক কৃষক। এজন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। আর খরা, বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের শস্য ঋণ পুনর্গঠিত করার পরিবর্তে ২ শতাংশ ছাড় পাবেন। আর নির্ধারিত সময়ে ঋণ শোধ করলে আরও ৩ শতাংশ ছাড় পাবেন কৃষকরা।’‌ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে ক্ষতিপূরণ বাড়ল কোথায়?‌ লোকসভা ভোটের আগে কৃষি ঋণ মকুবের দাবিতে সুর চড়িয়েছেন রাহুল গান্ধী। কৃষি ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনটি রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। লোকসভা ভোটের প্রচারেও কৃষি ঋণকে হাতিয়ার করতে চলেছেন কংগ্রেস সভাপতি। তবে সরাসরি কৃষি ঋণ মকুবের পথে হাঁটলেন না পীযূষ গোয়েল। ফলে কতটা কৃষকদের মন জয় করতে পারলেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেল মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

গো বলয়ের ভোট নিশ্চিত করাই লক্ষ্য। কৃষক, মধ্যবিত্ত আর চাকরিজীবীদের সঙ্গে সঙ্গে গরু রক্ষা করতেও বড়সড় বাজেট বরাদ্দ করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ‘রাষ্ট্রীয় গোকুল যোজনা’ -তে বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হলো সাড়ে সাতশো কোটি টাকা।

বাজেট বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন রাজ্যে গো-হত্যাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। তাই গরুদের রক্ষা করার উপরে জোর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।এছাড়াও রাষ্ট্রীয় কামধেনু প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। গো-জাত সম্পদের মানোন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গরুর সংখ্যা বৃদ্ধিই এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হবে। এছাড়াও গরুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইনের সঠিক প্রয়োগ যাতে হয়, তাও নিশ্চিত করা হবে

তিনি ঘোষণা করেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রম যোগী বন্ধন প্রকল্পে প্রতি মাসে ১০০ টাকা জমা দেবেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা। ৬০ বছর পর প্রতিমাসে তাঁরা ৩ হাজার টাকা পেনশন পাবেন।
বাজেট পেশ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল জানালেন, আয়কর ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে। তিনি বলেন, ‘‌আগামী দু’‌বছরের মধ্যে আয়কর রিটার্নের কাজটি পুরোপুরি চালিত হবে বৈদ্যুতিন পদ্ধতির মাধ্যমে। সেখানে কোনওরকম ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ থাকবে না।’‌

২০১৯–২০ সালের অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করার সময় তিনি বলেন, ২০১৩–১৪ সালের ৬.৩৮ লক্ষ কোটি টাকা থেকে আয়কর সংগ্রহ বেড়ে এই মুহূর্তে অঙ্কটা দাঁড়িয়েছে ১২ লক্ষ কোটি টাকায়। এমনকী ৩ কোটি ৭৯ লক্ষ থেকে আয়করদাতাদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৮৫ লক্ষতে। অরুণ জেটলির অনুপস্থিতিতে এই মুহূর্তে দায়িত্বে থাকা অর্থমন্ত্রী তিনিই।

লোকসভায় অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করলেন পীযূষ গয়াল। তিনি যা বললেন—

• আমরা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতি। সবথেকে দ্রুত গতিতে এগনো অর্থনীতির মধ্যে আমরা অন্যতম।

অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য নতুন পেনশন যোজনা। এর ফলে ষাট বছর বয়সের পরে এই কর্মীরা মাসে তিন হাজার টাকা করে নিশ্চিতভাবে পেনশন পাবেন।

• এই প্রকল্পে দশ কোটি শ্রমিক উপকৃত হবেন।

• পেনশনে পেতে গেলে ৫৫ টাকা মাসে মাসে জমা দিতে হবে ইচ্ছুকদের।

• এই প্রকল্পে খরচ হবে বছরে পাঁচশো কোটি টাকা। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ বাড়ানো হবে।

• শ্রমিকদের মৃত্যু হলে দ্বিগুণ পিএফ পাওয়া যাবে।

• গ্র্যাচুইটির সীমা দশ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে করা হলো তিরিশ লক্ষ টাকা। ৬০ বছরের পর অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা পাবেন মাসে ৩ হাজার টাকা পেনশন। শুক্রবার অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করতে গিয়ে এই সিদ্ধান্তই ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য পেনশন প্রকল্পের আওতায় নিয়ে এসে লোকসভা নির্বাচনে বৈতরণী পার করতে চাইছে সরকার বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here