সম্পাদকীয়–সদ্য সমাপ্ত বেশ কয়েকটি বিধান সভার ভোটের ফলাফল দেখিয়ে দিল এ দেশে কৃষকের প্রতিবাদের ভাষা শাসকের ক্ষমতার চেয়ারকে উল্টে দিতে পারে।বিষয়টা নিছক রাজনৈতিক জয়-পরাজয়ের বিষয় নয়,এর এক অন্য মাত্রা আছে।আর সেই মাত্রাটা হল এই যে,এ দেশে এখনও কৃষকদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু করতে চাইলে শাসকের কপালে অশেষ দুর্ভোগ অপেক্ষা করে থাকবে।রাজস্থান,ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে যে কৃষকদের ক্ষোভ ক্রমে বাড়ছিল তা ভোটের আগেই টের পাওয়া গেছিল।মধ্যপ্রদেশ জুড়ে যে কৃষকদের লংমার্চ তা তো গোটা দেশের কাছে এক বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছিল ষে কৃষক সম্প্রদায় আর মুখ বুজে অন্যায় মেনে নেবে না।এ দেশে কৃষকরাই সবার অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করে আসছে বছরের পর বছর,অথচ তাদেরই জীবনের কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেনি,এ দেশের কোন সরকার।স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর থেকে এদেশের কৃষকদের ভাগ্য শুধু অনিশ্চয়তায় মোড়া বললে ভুল হবে,অর্দ্ধাহার-অনাহার তাদের বার বার আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।মাত্র কয়েক বছর আগেকার সরকারি তথ্যই বলছে যে এ দেশে প্রতি ঘন্টায় একজন করে কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।গত এক বছরেও মধ্যপ্রদেশে লাগাতার কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।মাত্র এক বছর আগেই মধ্য প্রদেশে কৃষক বিক্ষোভ দমন করতে সরকার গুলি চালিয়েছে আর সেই গুলিতে প্রাণ গেছে দারিদ্র ও অভাব ক্লিষ্ট কৃষকের।এই ঘটনা শুধু দুঃখজনকই নয়,এ আমাদের দেশের জাতীয় লজ্জা যে, কৃষক সবার মুখে অন্ন যোগানোর ব্যবস্থা করে তাদের আমরা বেঁচে থাকার আশ্বাসটুকুও দিতে পারিনি।এ দেশের ব্যঙ্ক থেকে কোটি কোটি টাকা লুটে মৌজ আর ফূর্তি করেছে বিজয় মাল্য আর নীরব মোদীদের মত অসভ্য-ইতরের দল,আর যে কৃষক দিনে রাতে পরিশ্রম করে দিগন্ত বিস্তারিত মাঠ জুড়ে সোনার ফসল ফলিয়েছে তারা থেকে গেছে অভুক্ত অনাহারে।ব্যঙ্কের ঋণ শোধ করতে কৃষকরা নিজেদের ঘটি বাটি বেচে দিয়ে নিঃস্ব-রিক্ত হয়েছে,আর তাদেরই সুদের টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে সুখ আর সমৃদ্ধিতে দিন কাটাচ্ছে মেহুল চোপসি,নীরব মোদী,বিজয় মাল্যরা।এত বড় দুরাচার,এতবড় অন্যায় মুখ বুজে মেনে নেওয়ার বান্দা যে এ দেশের কৃষকরা নন এবারের একাধিক রাজ্যের ভোটের মধ্য দিযে কৃষকরা তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।কৃষকদের অবহেলা করলে যে শাসকের কপালে দুঃখ আছে তা বুঝে,কংগ্রেস সভাপতি যে রাজ্যে ক্ষমতায় কংগ্রেস এসেছে তড়িঘড়ি সেখানে কৃষিঋণ মকুব করার কথা ষোষণা করে দিয়েছেন।সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে আমরা শুধু এটুকু বলবো,কৃষকদের দুর্দশা ঘোচানোর জন্য দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি হোক।কৃষকদের না বাঁচাতে পারলে দেশ বাঁচবে না তাই কোন গিমিক নয় তাই সত্যিকারের কৃষক দরদী সরকার।এরই মধ্যে কোন কোন মোহল থেকে কৃষিঋণ মকুব করাকে খয়রাতি বলে বিদ্রুপ করা শুরু হয়েছে,এই সব স্বঘোষিত পন্ডিতদের আমরা মনে করিয়ে দিতে চাইবো,এদেশের ব্যঙ্ক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা শোধ করে না বড় বড় শিল্পপতিরা,টাটা থেকে আম্বানি সবাই সরকারি পয়সায় পোদ্দারি করে তখন মনে হয় না খয়রাতি,শুধু কৃষকদের বেলাতেই খয়রাতি হয় বুঝি।যে দেশে কৃষকরা ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করে,সে দেশে কোটি কোটি টাকা ব্যঙ্ক ঋণ রেখেও মুকেশ আম্বানি যখন শুধু তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে ৯০০ কোটি টাকা খরচ করে বিলাসী অনুষ্ঠান করেন,তখন তাকে অসভ্যতা ছাড়া আর কী বলা যায়?আমরা কৃষকদের প্রতিবাদের ভাষাকে সমর্থন করি,সব শাসকের বিরুদ্ধেই ধ্বণিত হোক এই প্রতিবাদের ভাষা,আমরা সেই কামনাই করি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here