দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এসএসসি উত্তীর্ণদের অনশন মঞ্চে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ২৮ দিনে পড়েছে এই অনশন। এ দিন অনশন মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী অনশনকারীদের বলেন, “এখন নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি জারি হয়ে গিয়েছে। তাই কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে না।”

কিন্তু আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গোটা ব্যাপারটি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। ওখানে দাঁড়িয়েই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বলেন, “জুন মাসের মধ্যে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”

এ দিন বিকেলে কালীঘাটের বাড়িতে তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ ছিল। সেখান থেকেই প্রেস ক্লাবের সামনে যান মমতা। শিক্ষামন্ত্রীকে পাশে দাঁড় করিয়ে অনশনকারীদের বলেন, “এত ঝড়, জল বৃষ্টির মধ্যে আপনারা এত কষ্ট করেছেন। আমি তাই ছুটে এসেছি। আমি মনে করি একটা না একটা ব্যবস্থা হবে। আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন।” টানা ২৮ দিন অনশন করার জন্য এসএসসি উত্তীর্ণদের অভিনন্দনও জানান মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত এক দশক আগে এই ধর্মতলা চত্বরেই সিঙ্গুর ইস্যুতে টানা ২৬ দিন অনশন করেছিলেন।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস পাওয়ার পর অনশন এক্ষুণি উঠছে কি না সে ব্যাপারে বুধবার সন্ধে পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেননি এসএসসি উত্তীর্ণরা। তাঁরা জানিয়েছেন রাতে কোর কমিটির বৈঠক করেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। তবে অনশনকারীরা মুখ্যমন্ত্রীর আসাকে তাঁদের আন্দোলনের নৈতিক জয় হিসেবেই দেখছেন।

যদিও ইস্তেহার প্রকাশের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে দাঁড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, “আমার কিছু করার ন্দেই ওঁদের কাছে আবেদন করা ছাড়া।” পার্থবাবু এও বলেন, “এ ভাবে হয় নাকি! যদি সিরিয়াল অনুযায়ী না আসে তাহলে তো বাকিরা কোর্টে চলে যাবে।” তখনও সম্ভবত শিক্ষামন্ত্রীর জানা ছিল না যে মুখ্যমন্ত্রী যাবেন অনশন মঞ্চে। তাঁর ঠিক পরেই পার্থকে নিয়ে সেখানে পৌঁছন মমতা।

৪০০ জন নিয়ে শুরু হয়েছিল অনশন। এর মধ্যেই প্রায় আড়াইশজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ হাসপাতালে, কেউ বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। এক সন্তানসম্ভাবা তরুণীর গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটে যায় এখানে। দিন কয়েক আগে সেখানে গিয়েছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এক এসএসসি উত্তীর্ণ তরুণী। অনশনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কবি শঙ্খ ঘোষ, অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো মানুষও। মাঝে পুলিশি ‘হুমকি’র মুখেও পড়তে হয় তাঁদের। কিন্তু আন্দোলনের জেদ দিয়েই সেটা রুখে দেন অনশনকারীরা। মাথার ছাউনিও খুলে দেওয়া হয়। শেষ কটা দিন একেবারে খোলা আকাশের নীচেই অনশন চালাচ্ছিলেন প্রায় দুশো জন।

শঙ্খ ঘোষ থেকে বিভাস চট্টাপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেন, বাদশা মৈত্রের মতো ব্যক্তিত্বরা বিভিন্ন সময়ে সমর্থন জানাতে ছুটে এসেছেন চাকরির দাবিতে এই অনশনকারীদের কাছে। পাশে দাঁড়ান বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও। তিনিও চিঠি লিখে তিনি স্কুল সার্ভিস কমিশনের অনশনরত চাকরি প্রার্থীদের পাশে দাঁড়ান। তিনি লিখেছিলেন, তিনি লিখেছেন, “এই অবস্থাতেও রাজ্য সরকার এই অনশনকারীদের দাবিদাওয়া মেটানোর ক্ষেত্রে কোনও সদর্থক ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এটা সহ্য করা যাচ্ছে না। সরকারের কাছে অনুরোধ, তারা যেন এই ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।”
২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসির শূন্যপদে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনে বসেছিলেন প্রায় সাড়ে চারশো পরীক্ষার্থী। তাঁদের দাবি, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর আপডেটেড প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে হবে। সব পরীক্ষার্থীদের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ওয়েটিং লিস্টে থাকা সব পরীক্ষার্থীদের চাকরি সুনিশ্চিত করতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পর অনশন ওঠে নাকি সেটা চলতেই থাকবে সে দিকেই নজর সকলের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here