বাঙালি তার প্রতিদিনকার যাবতীয় মালিন্য মুছে ফেলে,তার সারা বছরের বহু প্রতিক্ষিত মহা উত্সবকে বরণ করে নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।আমরাও আপমর বাঙালির এই আবেগ-বিহ্বলতাকে সম্মান জানিয়ে সবাইকে শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।দিনগুলো সবার কাছে সমান আদরের ও আনন্দের হয়ে উঠুক এই প্রার্থনা জানিয়ে,প্রসঙ্গক্রমে কয়েকটি জরুরি কথা সকলকে মনে করিয়ে দিতে চাইবো।উতসব মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন ঘটায়,মানুষকে একত্রিত করে,তৈরি করে ঐক্যের ভিত।তাই এই সব দিনে কোন সংকীর্ণতাকে প্রোশ্রয় দেওয়া কোন ভাবেই ঠিক কাজ নয়।দুর্গা পুজোকে আমরা নিছক কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করি না।আমরা বিশ্বাস করি এর মধ্যে নিহিত রয়েছে এক প্রতীকি বার্তা।আর তা হোল অশুভ অশুরকে বধ করে জগতে শুভ অধ্যায়ের সূচনা করা।আমাদের একান্ত অনুরোধ হৈ হুল্লোর আর উন্মাদনায় ভেসে গিয়ে দোহাই কেউ যেন এই সত্যকে ভুলে না যান।মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধনকে আর দৃঢ় করার অঙ্গীকার ঘোষিত হোক এই দিনগুলির মধ্য দিয়ে।আসুন না, আমারা হাতে হাত দিয়ে উতসব মুখরতার মধ্যদিয়েই তৈরি করি মানববন্ধনের ঐক্য-প্রাচীর।দুর্গা পুজোর আলোর রোশনাই যেন শুধু বাহ্যিক উপকরণ না হয়ে যায়,সেই আলো যেন আমাদের হৃদয়কে আলোকিত করে।আলোকিত হৃদয়ই তো একমাত্র পারে মুক্ত-উদার সমাজ তৈরির গ্যারান্টি হয়ে উঠতে।তাই শারদীয়ার এই আলো ঝলমল দিন গুলো শুধু হুল্লোরে মেতে ওঠবার দিন নয়,নিজেদের পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করে তোলার শপথ নেওয়ার দিনও।সেই জন্যই না এই আয়োজনকে ঘিরে দিকে দিকে এই কটা দিন দুঃখি মানুষের যন্ত্রনা ঘোচানোর প্রয়াস চোখে পড়ে।কোথাও অনাথ ছেলে মেয়েদের নতুন জামা কাপড় কিনে দেওয়ার আয়োজন,কোথাও আবার ফুটপাতবাসী মানুষজনকে এই কটা দিন পেট ভরে খেতে দেবার প্রস্তুতি,কোথাও সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বৃদ্ধাবাসে থাকা বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের বাসে করে ঠাকুর দেখতে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস,এসবই তো আসলে নিজেদের পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করে তোলার লক্ষ্যেই।এই পবিত্র ভাবনা আর বিস্তার লাভ করুক,ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র।এই উত্সব শুধু হিন্দুদের নয়,মুসলিম,খ্রিষ্টান,শিখ নির্বিশেষে সবার,কারণ সবাই চায় অশুভ শক্তির বিনাশ।তাই সম্প্রিতীর বার্তা ধ্বণিত হোক সর্বত্র,আলোর প্লাবনে ভেসে যাক চারপাশ,মুছে যাক সমাজের যত পাপ।আমাদের এই চাহিদা সার্থক হবে এই প্রত্যাশা রেখে আবারও সবাইকে শারদীয়ার অনেক অনেক শুভেচ্ছা……পুজো হোক সম্প্রীতির মিলনক্ষেত্র-