দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিকেলে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের পর মমতা যখন দশ জনপথের বাইরে এলেন তখন তাঁকে প্রশ্ন করলেন সাংবাদিকরা। জিজ্ঞেস করা হল, বিরোধী জোটের নেত্রী কি আপনিই? স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে মমতার জবাব, “আমি থোড়াই লিডার! আমি তো ক্যাডার। আমি রাস্তার লোক।”
বুধবার সকালে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে চা চক্রে মিলিত হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বিরোধী জোটের নেতৃত্বের ব্যাটন কার হাতে থাকবে? জবাবে দিদি বলেছিলেন, “আমি কি জ্যোতিষী নাকি?”
বিজেপি-কে হারাতে সবাইকে এক হতে হবে৷ সনিয়া এবং রাহুল গান্ধির সঙ্গে বৈঠক শেষ করে বেরিয়ে বিরোধী জোট নিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি জানিয়েছেন, বৈঠক সদর্থ হয়েছে৷ এর সুফল ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপিকে হারাতে সবাইকে এক হতে হবে৷ আমি একা কিছু করতে পারব না৷ আমি লিডার নই, আমি ক্যাডার৷ আমি রাস্তার মানুষ৷ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে৷’
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেও একই কথা বলেছিলেন দিদি। কার্যত সেদিন থেকেই, চব্বিশের অভিমুখে চলা শুরু করে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
অনেকের মতে, নিজেকে ক্যাডার এবং রাস্তার লোক উল্লেখ করে আসলে নরেন্দ্র মোদী সরকার ও তামাম বিরোধী শিবিরকে বার্তা দিতে চেয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতা সমগ্র বিরোধীদের বোঝাতে চাইলেন, তিনি ক্যাডার হয়েই বিজেপি বিরোধী লড়াই লড়তে চান। আসল উদ্দেশ্য, বিজেপিকে গদিচ্যুত করা। তাতে আসল ব্যাপার হল সবার এক হওয়া। কার হাতে নেতৃত্ব থাকল তা নিয়ে ‘ইগো’র সময় এটা নয়। সেই সঙ্গে নিজেকে রাস্তার লোক বলে আসলে কেন্দ্রের উদ্দেশে মমতা বার্তা দিয়ে রাখলেন, হতে পারেন তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু রাস্তায় আন্দোলনের বিষয়টি তাঁর লোহিত কণায় মিশে রয়েছে। আজ থেকে ১২-১৫ বছর আগেও বাংলা-সহ গোটা দেশ তাঁকে যে ভূমিকায় দেখতে অভ্যস্ত ছিল। মমতা হয়তো বোঝাতে চাইলেন, ফের তিনি সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে প্রস্তুত।
এদিন ১০ জনপথে সনিয়া ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের পর মমতা জানিয়েছেন, পেগাসাস থেকে কোভিড—বিভিন্ন ইস্যুতে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। পেগাসাস নিয়ে সংসদে সরকার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর কথায়, “পেগাসাস নিয়ে সংসদে আলোচনা হচ্ছে না কেন? কীসের ভয়? এই আলোচনা তো লোকসভা, রাজ্যসভাতেই হবে। চায়ের দোকানে তো আর হবে না!”
সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে কোন কোন দলগুলিকে বিরোধী জোটে সামিল করা যায়, তা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে মমতা, রাহুল এবং সনিয়ার মধ্যে৷ প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট তিন জনের মধ্যে কথা হয়৷ মমতা বার বারই বোঝাতে চেয়েছেন, বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিলেও নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে ভাবিত নন৷
তবে কংগ্রেস যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে বিজেপি বিরোধী জোটে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে, তা এ দিনের বৈঠকে সনিয়া গান্ধির পাশাপাশি রাহুল গান্ধির উপস্থিতিতেই তা আরও স্পষ্ট হল৷ মমতা দিল্লিতে পৌঁছনোর পর গতকালই তাঁর সঙ্গে দেখা করেন কমল নাথ, আনন্দ শর্মা এবং অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মতো তিন শীর্ষ কংগ্রেস নেতা৷
মুখ্যমন্ত্রী এ দিনও সনিয়া গান্ধির সঙ্গে বৈঠকের আগে জানিয়েছিলেন, আপাতত বিরোধী দলগুলির মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে নেওয়ার পক্ষে তিনি৷ করোনা পরিস্থিতি আরও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে বিরোধী দলগুলি একসঙ্গে বৈঠক করে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঠিক করতে পারে বলেও প্রস্তাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এমন কি উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনেও বিরোধী জোট গঠন করে লড়াইয়ের পক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আজ সন্ধ্যাতেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করার কথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর৷