লকডাউন নয় বনগাঁয়,কন্টেনমেন্টে আপাতত ৭ দিন কঠোর নজরদারি,আজ বিকেল ৫টা থেকে বিধি চালু

0
3514

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ‘‌লকডাউন নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। মানুষকে ভয় পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। কন্টেনমেন্ট জোনগুলিতে কোনও লকডাউন করা হয়নি।‌ আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল৫টা থেকে এই জোনগুলিতে আগামী ৭দিন বিশেষ নজরদারি চালানো হবে। এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিছু বিধি–‌নিষেধ তো থাকবেই। ৭ দিন পর পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আক্রান্তের সংখ্যা না বাড়লে নজরদারি কমিয়ে দেওয়া হবে।’‌

বুধবার নবান্নে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এমনই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কন্টেনমেন্ট জোনের তালিকা দেওয়া হয়। ছিলেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা ও স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার তালিকা দেখে মুখ্যমন্ত্রী অসন্তুষ্ট হন। কন্টেনমেন্ট জোনের জায়গাগুলি ঠিকমতো দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে উত্তর২৪পরগনার বাস্তব ছবিটা কিন্তু অন্য রকম, মাস্ক এবং দূরত্ববিধি যেন ভিনগ্রহের গল্প কথা। লকডাউনের শুরুতে যেভাবে পুলিশকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল, মাস্কহীনদের বিরুদ্ধে কিন্তু সেই সক্রিয়তা উধাও। ত্রাণ দেওয়া তো ছিলই, গত ১৫ দিনে যেভাবে বনগাঁ-ব্যারাকপুর মহকুমায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে তাতে আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া লকডাউন মেনে চলা মানুষদের আর কোও উপায় ছিল না। তাঁদের আশঙ্কাকে সত্যি করে করোনার বাড়বাড়ন্ত হয়েছে অনেকটাই। গত এক সপ্তাহে উত্তর ২৪ পরগনায় গড়ে অন্তত ১৫০-২০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন প্রতিদিন। রোজই মৃত্যু হয়েছে করোনা-আক্রান্তের।   

পরিযায়ী শ্রমিকেরা ঘরে ফিরতেই বনগাঁ মহকুমায় বাড়তে শুরু করেছিল করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা। আনলক পর্বেও পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়। বুধবার পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯৬ জন। পাশাপাশি হাবড়া-অশোকনগর-গোবরডাঙা এলাকাতেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই তিন এলাকার প্রায় ১০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

আক্রান্তদের বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক। বাকি আক্রান্তের ক্ষেত্রে মিলেছে কলকাতা-যোগ। তার পরেও এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে কোনও সচেতনতার বালাই নেই। আমপানের পর বিদ্যুৎ-ত্রাণ-ক্ষতিপূরণ  দূর্নীতিতে জমায়েত করে বিক্ষোভ-অবরোধ হয়েছে। গত দু’সপ্তাহে কখনও বিজেপি, কখনও তৃণমূল মঞ্চ বেঁধে দলবদলের কর্মসূচি করেছে। তাতে হাজির থেকেছেন অনেক নেতারাও৷ এত কিছুর মধ্যেও বনগাঁ মহকুমায় নতুন করে লকডাউন না হওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন ব্যবসায়ী মহল সহ সাধারণ মানুষ৷ তবে বিধি মেনে চলতে হবে সকল কেই।

বুধবার নবান্নে উত্তর কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনার কন্টেনমেন্ট জোনের তালিকা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাঁদের ওপর এই তালিকা তৈরির ভার ছিল, তাঁরা খেটেখুটে ঠিকমতো তালিকা তৈরি করেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বৈঠকে জানতে চান, বারুইপুর থেকে কতজন করোনা রোগী বেরিয়েছে?‌ তিনি বলেন, ‘‌আমি কিন্তু এই সব জায়গা ভালভাবে চিনি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার তালিকার সঙ্গে আমি একমত নই। ভেরি আনফেয়ার। কেস স্টাডি না করে এই তালিকা করা হয়েছে। হাওড়ার তালিকাও ঠিক আছে। শহর ও শহরাঞ্চলে জনসংখ্যা বেশি, ঘনবসতি। আবাসনে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। বস্তিতে কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। আমি একবার হাওড়ার বস্তিতে ঢুকেছিলাম। ওটা কলকাতা বন্দরের অধীনে, তাই খুব একটা উন্নতি হয়নি। 

কলকাতার বস্তিতে অনেক উন্নতি হয়েছে। চেহারা পাল্টে গেছে। নতুন বাথরুম হয়েছে।’‌ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কন্টেনমেন্ট জোনগুলিতে সরকারের সুফল বাংলা যাবে। অনেক জিনিস ওখান থেকে কেনা যায়। ছোট অফিস, দোকানগুলোতে নিশ্চয় বিধি–‌নিষেধ থাকবে। বাড়ি থেকে কাজ করতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে, কোন কোন রাস্তা কন্টেনমেন্ট জোনের মধ্যে পড়েছে, কলকাতায় ১০টি পকেট রয়েছে, যেখানে কোভিড সংক্রমণ হয়েছে।’‌

ভাইরাস রুখতে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অনেকেই মাস্ক পরছেন না। উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোনো যাবে না। বলেন,আমি ২ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারতাম। এই সময়ে সেটা কেউ দিতে পারবেন?‌ সমস্যার সমাধান হবে?‌  তিনি পুলিশকে নির্দেশ দেন, মাস্ক না পরে বাইরে দেখলেই বাড়ি পাঠিয়ে দেবেন।

হাজরায় সকালে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভের অনুষ্ঠানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌করোনাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। টেস্টের সংখ্যা বাড়ছে। তাই সংক্রমণ ধরা পড়ছে। দূরত্ব মেনে চলুন। নিজেকে সুস্থ রাখুন। ভাল করে খাওয়া দাওয়া করুন। হাত ধোবেন। আক্রান্তদের জন্য ১০ লক্ষ টাকা বিমাও করা হয়েছে। ঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে যাবেন। রোগ লুকিয়ে রাখবেন না। আপনাদের যদি মনে হয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হবেন, তাহলে যাবেন। সরকারি হাসপাতালগুলোও রয়েছে। সেখানেও আসতে পারেন।’‌

মুখ্যমন্ত্রী এদিন পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পুলিশ পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‌সমস্ত কিছু ভুলে পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। আমি তাঁদের স্যালুট জানাই।’‌

Previous articleগ্যাংস্টার বিকাশ দুবে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর একটি মন্দির থেকে গ্রেফতার
Next articleমাস্ক পড়তে উৎসাহ বাড়াতে মাস্কের ডিজাইনে পরোটা বিক্রি রেস্তোরাঁয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here