দেশের সময় বনগাঁ: কালীপুজোর রাতে যখন গোটা দেশ আলোকময়, তখন খাস কলকাতায় নেমে এসেছিল গাঢ় শোকের ছায়া। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যাযয়ের প্রয়াণে ‘আলোর দিনে অন্ধকার নেমে এসেছে’ বলেই মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধার মৃত্যুর পর নিজের বাড়িতে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানও এবার বাতিল করেন মুখ্যমন্ত্রী। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এবছর ভাইফোঁটা নেননি ববি হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বুকে স্টেন্ট বসানো হয়েছিল। একে একে সকলেই তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিল। অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর কালীপুজোর পরেরদিন ছুটি পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু কালীপুজোর সন্ধে থেকেই আচমকা অবস্থার অবনতি হয়। রাত ৯টা ২২ মিনিটে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেন তিনি। মন্ত্রীর আচমকা প্রয়াণ এখনও অবিশ্বাস্য তৃণমূলের তাবড় নেতৃত্বদের।
তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে রাজ্যের পাশাপাশি আজ সোমবার বনগাঁ শহরে মৌন মিছিল হল। এদিন সকালে বনগাঁ পৌরসভার পক্ষ থেকে এই মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। বনগাঁ পৌরসভার সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে স্কুলরোড হয়ে যশোর ধরে মতিগঞ্জ ঘুরে বনগাঁ ত্রিকোণ পার্ক সংলগ্ন রবীন্দ্র মূর্তির পাদদেশে এসে সেই মিছিল শেষ হয়। বনগাঁ পৌর কর্মচারীসহ তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা বুকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রতীকী ব্যাচ লাগিয়ে মিছিলে পা মেলান৷
বনগাঁর পুরপ্রশাসক গোপাল শেঠ বলেন , এই তো সেদিন, এখনও হাত বাড়ালেই যেন ছোঁয়া যাবে। মহাষ্টমীর দুপুর। এভারগ্রিনের ক্লাবঘরে বসে আছেন তিনি। বাঙালি-অবাঙলি নানা মাপের, নানা বয়সের লোকজন আসছে যাচ্ছে। কেউ সপরিবার, কেউ একা। কেউ টেবিল-চেয়ারের ফাঁক গলে তাঁর পা খুঁজছেন, কেউ ঘাড়ের কাছে ঝুঁকে এমনকি গালের পাশে গাল রেখে সেল্ফি তুলছেন, কেউ উপকার পেয়ে পঞ্চমুখ।
আর যাঁকে ঘিরে এত কাণ্ড তিনি স্বভাবসিদ্ধ হাসি মুখে বসে সবারসঙ্গে আলাপে ব্যাস্ত ছিলেন ৷ কেবল তাঁর মাস্কটি উপস্থিত জনের অনুরোধে নাকের উপরে মাঝে মধ্যেই উঠছে নামছে। কে বলবে, আগের দিনই তাঁর স্টেরয়েড ইঞ্জেকশনের কোর্স শেষ হয়েছে, শরীর যথেষ্ট দুর্বল এবং ইনফেকসান প্রবণ। হঠাৎই তিনি আমাদেরকে ছেড়েচলে গেলেন।
তাঁর সঙ্গে আমার কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। সৌভাগ্য শব্দটি স্রেফ কথার কথা হিসাবে বলছি না। সৌভাগ্য বলছি এই কারণে, যে কাজের জায়গায় আমরা সকলে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা করে থাকি সেটা হল, পলিটিক্যাল বস হবেন এমন মানুষ যিনি রাজনৈতিক কারণে কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না এবং সিদ্ধান্ত রূপায়নে স্বাধীনতা দেবেন। ভালো কাজের উদ্যোগ, প্রস্তাবে সায় দেবেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে এর সব কিছুই পেয়ে এসেছি আমারা ।
জীবনে এক একটা সম্পর্ক তৈরি হয় যার কাছে এলে বয়স ভুলিয়ে দেয়। ভুলিয়ে দেয় সম্পর্কিতের সমাজ-রাজনৈতিক পরিচয় প্রভাব প্রতিপত্তি সব। সুব্রত মুখোপাধ্যায় সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেকটা তেমন। আজ তাঁর স্মৃতিচারণের উদ্যেশ্যে বনগাঁ শহরে আমার সহকর্মীদেরকে নিয়ে মৌন মিছিলের মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি তাঁর কাজকে অনুসরণ করে আগামীদিনে বনগাঁর মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার বদ্ধ হলাম৷