বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নোরেন্দ্র মোদীই এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে মোকাবিলা করবেন।যে ভঙ্গি ও ভাষায় এ রাজ্যের প্রথম নির্বাচনি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করলেন তাতে পরিষ্কার এ রাজ্যকে বিশেষ নজরে রেখেই এবার বিজেপি এগুতে চাইছে।শিলিগুড়িতে প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে উন্নয়নের গল্প শোনাচ্ছেন তাতে অনেক ফাঁকি আছে।
তাই যে উন্নয়নের অস্ত্র মমতা রাজ্যের সর্বত্র প্রচার করে বেড়ান প্রথম নির্বাচনি জনসভাতেই মোদীজী সেই উন্নয়নের দাবিকেই সপাটে আক্রমণ করে বসেন।শিলিগুড়িতে প্রধানমন্ত্রী বলেন,গোটা দেশ জুড়ে বিজেপি যে উন্নয়নের রথ চালাচ্ছে বাংলায় সেই উন্নয়নের গতিকে থামিয়ে দিতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কৃষকদের স্বার্থে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করেছে অথচ এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সুযোগ কৃষকদের নিতে দিচ্ছেন না,এমনকী কেন্রীয় সরকারের গরিবদের জন্য নানা প্রকল্প রাজ্য সরকার আটকে দিচ্ছে শুধু নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে।
প্রধানমন্ত্রী এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের উন্নয়নের স্পিডব্রেকার বলে কটাক্ষ করতেও ছাড়েন নি।প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন এ রাজ্যে সরকারের বদল ঘটিয়ে রজ্যকে তারা উন্নয়নের স্রোতে ভাসাতে চান।দেশের নিরাপত্তা ও বিদেশি শক্তিকে আক্রমণ করায় এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে প্রমাণ চাই বলে সরগোল তুলেছে তাতে মমতাকে পাকিস্থানের বন্ধু বলে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রীর হুশিযারি এ সব ভারতের জনগন দেখছেন তারা সময়মত জবাব দেবেন।পাল্টা দিতে ছাড়েন নি মমতাও।
প্রধানমন্ত্রী যখন ব্রিগেডে দাঁড়িয়ে এ রাজ্যে পিসি-ভাইপোর লুটের রাজনীতি শেষ করার আহ্বান জানাচ্ছেন,তখনই প্রধানমন্ত্রীকে এক্সপায়ারি প্রধানমন্ত্রী বলে কটাক্ষ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আমলে রাজ্যে কত কত উন্নয়ন হয়েছে তার ফিরিস্তি দিয়ে দিনহাটার সভা থেকে দিল্লি থেকে মোদীকে হাটানোর স্লোগান তুলে দেন।ব্রিগেডে প্রধানমন্ত্রী যখন এ রাজ্যে গুন্ডা রাজ তৈরি করার জন্য মমতাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন,এরপর সরকারে এসে তারা মমতার গুন্ডাদের শায়েস্তা করবে আইনি পথ ধরে তখন তার পাল্টা হিসেবে মমতাও দিনহাটার সভায় সিবিআইয়ের একটি চিঠি দেখিয়ে দাবি করেন বিজেপি যে নিশিথ প্রামানিককে দলে নিয়েছে সে একজন দাগি আসামি সেই উল্লেখ সিবিআইয়ের চিঠিতেই আছে।
বিজেপিই আসলে দুষ্কৃতীদের নিয়ে রাজনীতি করে বলে অভিযোগ করে মমতা দাবি করেন এবার ভোটে এই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেই মানুষ রায় দেবেন।প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন এ রাজ্য থেকে বিজেপি সাংসদরা নির্বাচিত হলে দেশের নিরাপত্তার জন্য সাচ্চা চৌকিদার তৈরি হবে,পান্টা মমতার দাবি বড় লোকের চৌকিদাররা গরিব মানুষের কোন কাজে আসে না,তাই নীরব মোদিদের চৌকিদারদের এবার বিদায় নিতে হবে।মোদী মমতার টক্করে এভাবেই সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে রাজ্য রাজনীতি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটা ভেবে শ্লাঘা বোধ করতে পারেন যে তাঁকে মোকাবিলা করতে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে এগিয়ে আসতে হচ্ছে।একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রীর এরকম দ্বৈরথ ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে আর কথনও হয়েছে বলে জানা নেই কারোর।সামনের দুমাস এই লড়াইয়ের ঝাঁঝ ও তেজ যে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য।অনেকেই মনে করছেন রাজ্য বিজেপির কোন মুখ না থাকায় খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই প্রচারের প্রধান মুখ করে তোলাটাও আসলে মুকুল রায়েরই মস্তিষ্ক প্রসূত।
একদিকে দল ভাঙানোর ভয়,অন্যদিকে খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়ে মমতাকে কিন্তু চাপেই রাখলেন তাঁর একসময়কার ছায়া সঙ্গী মুকুল রায়।