দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স কত হওয়া উচিত, তা শিগগিরই ঠিক করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, মেয়েদের বিয়ের বয়স কত হওয়া উচিত তা নিয়ে দেশজুড়েই সমীক্ষা চলছে। কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির সুপারিশ মেনে খুব দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় সরকার।
আজ বিশ্ব খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে ৭৫ টাকার কয়েন প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই অনুষ্ঠানেই বক্তব্য রাখার সময় মোদী বলেন, “আমাদের দেশের মেয়েদের বিয়ের বয়স নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আমাদের মেয়েরা জানতে চেয়েছে কমিটি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওরা চিঠি লিখে জিজ্ঞেস করেছে আমাকে। সরকার এই বিষয়ে কাজ করছে। খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে। ”
দেশে এখন মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। পুরুষদের ২১ বছর। এই দুয়ের ফারাক ঘোচানো যায় কিনা সে দাবি আগেও উঠেছিল। ‘সারদা আইন (১৯২৯)’ সংশোধন করে ভারতে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৫ থেকে বাড়িয়ে ১৮ বছর করা হয়েছিল। তবে প্রসূতি মৃত্যুর হার কমানো ও মহিলাদের পুষ্টি সরবরাহের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য এই বিষয়ে ফের পর্যালোচনা করার দাবি উঠেছিল দেশজুড়েই।
অনেকসময়েই মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ আছে দেশের অনেক জায়গাতেই। পরিণত হওয়ার আগেই মাতৃত্বের মতো গুরুদায়িত্বের বোঝাও চাপিয়ে দেওয়া হয় মেয়েদের উপরে। তাই এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পুনর্বিবেচনা করার চিন্তাভাবনা করছিল মোদী সরকারও।
মেয়েদের বিয়ের বয়স সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গত জুন মাসে রাজনীতিবিদ তথা সমাজকর্মী জয়া জেটলির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক। মেয়েদের বিয়ের বয়সের পরিবর্তন প্রয়োজন আছে কি না, বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে তা নিয়ে রিপোর্ট দেওয়ার কথা এই কমিটির। দশ সদস্যের এই কমিটিতে নীতি আয়োগের সদস্য ভি কে পল ছাড়াও রয়েছেন স্কুলশিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশুকল্যাণ সচিবরা। মাতৃত্বের বয়স, মহিলাদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে খতিয়ে দেখা এবং প্রসূতির মৃত্যুর হার কমানো, ইত্যাদি না বিষয়ে নজর রেখে রিপোর্ট তৈরি করার কথা এই কমিটির।
দু’বছর আগে একই প্রস্তাব এসেছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তরফেও। মেয়েদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স কত হওয়া দরকার নে নিয়ে কোনও সুপারিশ না করলেও, মানবাধিকার কমিশনের তরফে জানানো হয়েছিল পুরুষ ও নারীর বিয়ের বয়স অভিন্ন হওয়া দরকার। এখন শিক্ষা, চাকরি বা গবেষণা, সব ব্যাপারে পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছেন মহিলারা।
অথচ দেশের অনেক জায়গাতেই এখনও খুব কম বয়সেই মেয়েদের বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেওয়ার জন্য জোরজবরদস্তি করা হয়। তাই এই বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকেই।
স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে নারীশক্তির কথা তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সামাজিক ট্যাবু ভেঙে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর মুখে খুব সহজেই চলে এসেছিল স্যানিটারি প্যাডের কথা। মহিলাদের ঋতুস্রাব নিয়ে এখনও যে দেশে নানা ছুঁৎমার্গ আছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রশংসা কুড়িয়েছিল নানা মহলেই।
মোদী বলেছিলেন, দেশের মা-বোনদের স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার। তাই সরকারি উদ্যোগেই দেশের ছ’হাজার জনৌষধি কেন্দ্র থেকে এক টাকায় স্যানিটারি ন্যাপকিনের সুবিধা পেয়েছেন পাঁচ কোটি মহিলা। আগামী দিনে মা-বোনদের কথা ভেবে আরও বড় পরিকল্পনা নেওয়া হতে পারে। এবার সে পথেই নতুন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।