দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অনুমানই সত্য হলো। শেষমেষ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কলম ধরেই ফেললেন প্রয়াত সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা বিশ্বাস।
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’য় কলম ধরেছেন প্রয়াত সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাসের মেয়ে ডঃ অজন্তা বিশ্বাস। তিনি বর্তমানে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক। ‘জাগো বাংলা’য় যে কলম তিনি লিখছেন তাঁর শেষ পর্বে নেত্রীদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সেরার সেরা বললেন অজন্তা।
তৃণমূলের মুখপত্রে সিপিএম নেতার মেয়ের নিবন্ধ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই চর্চা চলছিল তিনি কী লেখেন মমতা বন্দ্যোাধ্যায় সম্পর্কে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘জননেত্রী’ বলে উল্লেখ করেছেন সিপিএম নেতার মেয়ে।
শনিবার প্রকাশিত ‘জাগো বাংলা’য় তাঁর লেখা রয়েছে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবী থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত বাম এবং দক্ষিণপন্থী বিভিন্ন দলের মহিলা নেত্রীদের সম্পর্কে লিখেছেন অনিল-কন্যা। শেষ কিস্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অজন্তা লিখেছেন, একজন রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমগ্র বিশ্বের সম্মুখে নজির গড়েছেন। রাজনৈতিক ইতিহাসে বাঙালি নারী হিসেবে নিজেকে অন্যতম সেরা প্রমাণিত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশস্ত করেছেন নারীদের জয়যাত্রা।
অজন্তা এই নিবন্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন বর্ণনা করেছেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সেখান থেকে যাদবপুরের সাংসদ হওয়া, পরবর্তীতে কেন্দ্র সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া এবং ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল গঠন, সবটাই বিস্তারিত লিখেছেন অনিল-কন্যা। কেন কংগ্রেসের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরত্ব তৈরি হল, বর্ণনা আছে তারও।
অজন্তা লিখেছেন এক বাঙালি নারী হিসেবে একটি নতুন সর্বভারতীয় দলের প্রতিষ্ঠা করে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে এই নিবন্ধে রেলমন্ত্রী হিসেবে তাঁর বিশেষ অবদানের কথা আছে। রেলমন্ত্রী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে নিজেকে তিনি নিয়োজিত করেছিলেন। রেলযাত্রী মহিলাদের বিশেষ সুবিধার্থে লেডিস স্পেশাল চালু করার উল্লেখও করেছেন অজন্তা।
সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের প্রসঙ্গও কলমে এসেছে। অজন্তা লিখেছেন ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটা কারখানা স্থাপনের বিষয়ে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। তার নেতৃত্ব দান করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনিচ্ছুক কৃষকদের সংগঠিত করে গণ আন্দোলনের রূপ দান করেন জননেত্রী। এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক থাকলেও নির্বাচনের রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষেই যায়। পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ক্ষমতায় আসার আগে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০০৯-এ মমতার দ্বিতীয় বার রেলমন্ত্রী হওয়া এই সমস্ত পর্বের বর্ণনা রয়েছে অজন্তার লেখনিতে।
সংসদেও মমতার ভূমিকার প্রশংসা রয়েছে এই নিবন্ধে। যেমন মহিলা সংরক্ষণ বিলকে তিনি যেভাবে সমর্থন করেছিলেন তার উল্লেখ রয়েছে।
বলা হয়েছে ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের প্রথম বাঙালি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং পুনরায় ইতিহাস রচনা করেন। সমস্ত বাধা পেরিয়ে সাফল্যের লক্ষ্যে এগিয়েছেন মমতা বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচির রূপায়নের মাধ্যমে। এই মন্তব্যের মাধ্যমে অজন্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রকল্প গুলির প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, এখন করোনা পরিস্থিতিও দৃঢ় প্রত্যয়ে মোকাবিলা করছেন জননেত্রী। রাজ্যের সমস্ত নারীদের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে কন্যাশ্রী রূপশ্রী স্বাস্থ্যসাথী প্রভৃতি কল্যাণমূলক প্রকল্পের সূচনা করেছেন। বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সাহসের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছেন মমতা।
অজন্তা লিখেছেন, রাজনৈতিক ইতিহাসে বাঙালি নারী হিসেবে নিজেকে অন্যতম সেরা প্রমাণিত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের দীর্ঘদিনের সাংসদ কৃষ্ণা বসু, কংগ্রেস নেত্রী পূরবী মুখোপাধ্যায়, ফরোয়ার্ড ব্লকের অপরাজিতা, কংগ্রেসের আভা মাইতি, সিপিএমের গীতা মুখোপাধ্যায় প্রমুখের নাম। তাঁদের অবদানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এই নিবন্ধে।
বঙ্গ রাজনীততে নারীশক্তি -এই নামে জাগো বাংলায় একটি তিন কিস্তির নিবন্ধ লিখেছেন অজন্তা বিশ্বাস। প্রাক্ -স্বাধীনতা যুগ থেকেই সমাজ-রাজনীতিতে বাঙালি মহিলাদের অবদান উঠে এসেছে অজন্তার লেখায়, এসেছেন মমতাও। অজন্তার বাবা ছিলেন সিপিএম দলের স্তম্ভ, সিপিএম মুখপাত্র গণশক্তির রমরমা সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের হাত ধরেই। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর কন্যা লেখনীর জন্য কেন জাগো বাংলা পত্রিকা বেছে নিলেন, কেন মমতাকে নিয়ে তিনি আপ্লুত এই প্রশ্নে হইহই বঙ্গ রাজনীতিতে। শোনা যাচ্ছে সিপিএমের অন্দরেও এই নিয়ে যথেষ্ট চর্চা রয়েছে, রয়েছে উষ্মা। একদল দু পা এগিয়ে বলে ফেলছেন আলিমুদ্দিন হয়তো জবাব চাইতে পারে অনিল কন্যার থেকে।
আর অনিল কন্যার ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর কোভিড পরিস্থিতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অনিল কন্যা দৃষ্টিভঙ্গি হুবহু বদলে দিয়েছে। আর পাঁচজনের মতো তাঁর ক্ষেত্রেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই যোগাযোগ করেছিলেন, খোঁজ নিয়েছিলেন। তাই বৃত্তটা সম্পূর্ণ করার সময়ে বস্তুনিষ্ঠ ভাবেই তিনি তাঁর নামোল্লেখ করতে ভোলেননি।