সম্পাদকীয়ঃ-শিক্ষকদের যেভাবে রাতের অন্ধকারে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ থেকে তুলে দেবার ব্যবস্থা করল রাজ্যের প্রশাসন,তাতে বলতেই হচ্ছে যে রাজ্য প্রশাসন তাদের দক্ষতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে।
শিক্ষকদের শুধু মারাই নয়,মহিলা শিক্ষকদেরও নির্বিচার অত্যাচারের মুখে পড়তে হয়েছে।অভিযোগ মহিলা শিক্ষকদের ব্লাউজ শাড়ি ধরেও টান দিয়েছে পুলিশ।পুলিশ যখন রাস্তার লুম্পেন গুন্ডাদের মত মহিলাদের সম্মানহানী করতে উদ্যত হয় সাধারণ মানুষের কাছে তখন খারাপ বার্তা যায়।
মানুষ বুঝে যায় প্রশাসন আর নিজের মত করে কাজ করছে না,তাকে শাসক দল যা করতে বলছে সে তাই করছে।এতে শেষপর্যন্ত শাসক দলের ক্ষতিই হয়।মানুষ বিরূপ হয়ে বিরুদ্ধে ভোট দিতে শুরু করে।এবার লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যের শাসক দল যে খারাপ ফল করেছে তার পিছনে এটা কাজ করেছে বলে অনেকের মত।
প্রশাসন যখন তার দক্ষতা হারায় তখন সে শুধু শাসক দলের নির্দেশ মেনে কাজ করতে বাধ্য হয়,আর তা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত শাসক দলের বিপদই তারা ডেকে আনে।লোকসভা নির্বাচনের পর এ রাজ্যে শাসক দলের নতুন কর্পোরেট নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর বার বার মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দলকে মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য নানা কৌশল নিতে পরামর্শ দিয়ে চলেছেন।
সেই কৌশলের একটা দিক হল প্রশাসন কোন দলের নয়,প্রশাসন সরকারের,প্রসাসন প্রাশাসনিক নীতি দ্বারা চলবে এটা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা।এ রাজ্যের মানুষ পুলিশ প্রশাসনের নানা চেহারা দেখেছে,তারা দেখেছে পুলিশ কীভাবে দুষ্কৃতীদের আক্রমণের ভয়ে থানার ভেতর টেবিলের নীচে লুকিয়ে পড়ে,দেখেছে পুলিশ গুন্ডাদের ভয়ে কীভাবে থানায় বসে হাউ হাউ করে কাঁদছে,মাত্র কিছুদিন আগে টালিগঞ্জে কীভাবে স্থানীয় গুন্ডারা পুলিশকে পেটাচ্ছে তাও দেখেছে মানুষ,সেই পুলিশই যখন আবার একেবারে অসহায় শিক্ষক,যারা তাঁদের গণতান্ত্রিক দাবি নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন তাদের যখন মারে ও মহিলা শিক্ষকদের ব্লাউজ শাড়ি ধরে টানতে থাকেন তখন সাধারণ মানুষ মনে করেন পুলিশ স্রেফ শাসক দলের আজ্ঞাবাহক দাস।
এই প্রশাসনের উপর মানুষ আস্থা হারায়,মুখ ফিরিয়ে নেয়।কারণ মানুষ বুঝতে পারে প্রশাসন দক্ষতা হারিয়েছে।তাই যে ভাবে পুলিশ শিক্ষকদের পিটিয়েছে তা সরকারকে তথা শাসক দলকে বিপদেই ফেলবে।মানুষ বিরূপ হয়ে বেশী করে বিজেপির দিকেই চলে যাবে।
অদক্ষ প্রশাসন সরকারের বোঝা।প্রশান্ত কিশোর মমতাকে এই পরামর্শ যততাড়াতাড়ি দেয় ততই মঙ্গল।এ রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন এতটা দক্ষতা হারিয়েছে যে মানুষ সরকার ও প্রশাসনকে এক ভেবে তাদের ভোট দিয়ে দিতে পারে।মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি মাথায় রাখলে ভাল করবেন,তবে বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ হয় বলে বাংলায় একটা প্রবাদ আছে তো সেটা এ রাজ্যের শাসকদের ক্ষেত্রেও হয়তো সত্যি।