দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ : তৃতীয় দফার ভোটের সকালেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে টুইটে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ করেছিলেন, উর্দি পরে তৃণমূলের কর্মীদের ভয় দেখানো চলছে। কমিশন নীরব দর্শক।
দুপুরে কোচবিহারের মাথাভাঙার সভা থেকে বিজেপি, কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দিলেন তৃণমূলনেত্রী। সরাসরি দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিলেন, “বিজেপি মেরেছে, সিআরপি মেরেছে—এসব কোনও ন্যাকা কান্না আমি শুনতে চাই না। সিআরপি মারছে তো আপনি কী করছেন? ঘিরে ধরুন। প্রতিবাদ করুন। আমি তো মারামারি করতে বলছি না!”
এদিন মমতা কেন্দ্রীয় বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, “আমি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সম্মান করি। কিন্তু তারা সিপিএম আর বিজেপির হার্মাদদের নিয়ে ভোটা করাচ্ছে! বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও? তুমি আমার মহিলা এসসি প্রার্থী সুজাতাকে মেরেছো, তার সিকিউরিটির মাথা ফাটিয়ে দিয়েছো, তুমি গোঘাটে মানসকে ঢুকতে দাওনি, শওকত মোল্লাকে ঢুকতে দাওনি! এই ভাবে বাংলা দখল করা যাবে না।”
মমতাকে জবাব দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি সেই কোচবিহারে দাঁড়িয়েই বলেছেন, “যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি দিদি করতেন, আজ তাদের উপর রাগ করছেন, তাঁদের বদনাম করছেন, যড়যন্ত্র করছেন—এর মানে হলে দিদি ভোটে হেরে গেছেন”।
তবে মোদীর সে সব কথায় কর্ণপাত অবশ্য দিদি করছেন বলে মনে করা হচ্ছে না। তৃতীয় দফার ভোটে একাধিক জায়গায় দেখা গিয়েছে তৃণমূলের পোলিং এজেন্ট নেই। এ ব্যাপারে শাসকদল অভিযোগ করেছে, কোথাও বিজেপি, কোথাও আইএসএফ জবরদস্তি তাদের এজেন্টকে তুলে দিয়েছে। বুথে ঢুকতেই দেয়নি। এ ব্যাপারে মমতা বলেন, “এমন এজেন্ট করবেন না যে পালিয়ে যাবে। আজকেও পাঁচ-ছ’জায়াগায় পালিয়ে গেছে।”
এখানেই থামেননি দিদি। কাদের এজেন্ট করতে হবে তারও পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, “যদি এজেন্ট খুঁজে না পান তাহলে যাঁদের ১৮ বছর বয়স হয়ে গেছে সেই কন্যাশ্রীর মেয়েদের এজেন্ট করুন, ঐক্যশ্রীর ছেলেদের এজেন্ট করুন।” সতর্ক করে দিয়ে মমতা এও বলেন, কোচবিহারের ভোটেও কেন্দ্রীয় বাহিনী ভয় দেখাবে। সীমান্ত এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে বলবে ভোট দেবেন না। আপনারা শুনে নিয়ে উল্টোদিকে ভোট দিয়ে দেবেন।”
তবে মমতার এদিনের বক্তৃতা শুনে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, তাহলে কি সত্যিই নিচু তলায় তৃণমূলের পোলিং এজেন্ট হওয়ার মতো লোক নেই? এত দিন যে অভিযোগ বিরোধীরা করত এদিন দেখা যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে হুগলি এবং গ্রামীণ হাওড়ায় ডজন ডজন সেই অভিযোগ করছে তৃণমূল। কোথাও সাত সকালে দোর্দণ্ডপ্রতাপম শওকত মোল্লাকে অবস্থানে বসতে হয়েছে কোথায় তাড়া খেয়ে ছুটতে হয়েছে নির্মল মাজিকে। মাথাভাঙার সভায় মমতা এও বলেন, “সকাল থেকে ১০০টা অন্তত অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনে। কিন্তু একটার ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা হয়নি।”
এদিন ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘মিথ্যেবাদী’ বলে কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচারে কোচবিহারের কালচিনিতে সভা করেন তিনি। এদিনের সভা থেকে মোদীকে নিশানা করে মমতার দাবি, ‘মোদী মিথ্যেবাদী। সব মিটিংয়ে আমাকে কটাক্ষ করেন আর মিথ্যে কথা বলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারায়ণী সেনা তৈরির মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। বাংলা পুলিশে ইতিমধ্যেই নারায়ণী সেনা তৈরি করা হয়েছে।’ টার্গেট একুশের নির্বাচন। কোচবিহারে রাজবংশীদের মন পেতে মরিয়া তৃণমূল- বিজেপি দুই রাজনৈতিক দলই। এদিনের সভা থেকে কেন্দ্র সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘গ্যাস নেহি চাহিয়ে। কোল বেচ দিয়া। রেল বেচ দিয়া। সব বিক্রি করে দিচ্ছে। ক্যায়সে দেশ চলেগা! আমরা বাংলায় কিছু বেচতে দিচ্ছি না।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এলে বিনামূল্য মানুষের বাড়ির দরজায় রেশন পৌঁছে দেওয়া হবে। গ্যাস, পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও এদিন কেন্দ্রকে তোপ দাগেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি বলেন, ‘ আপনারা আমাকে জেতান। আমি আপনাদের জেতাব। এটা দিল্লির লাড্ডু নয়। বাংলার ভোট।’
প্রসঙ্গত, এদিন কোচবিহারের সভা থেকে রাজ্য সরকারকে পালটা তোপ দাগেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিদি বলছেন বিজেপি ভগবান নাকি, প্রথম দুটি দফায় বড় জয় পেতে চলেছে বলে আগে থেকেই বুঝে যাচ্ছে? আমি ভগবান নই, আমি মানুষ। ভগবানের আশীর্বাদে দেশের সেবায় নিয়োজিত।’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘ময়দান ছেড়ে দিয়েছেন মমতা। যে ইভিএম বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। সেই ইভিএম-কে দোষারোপ করছেন। নির্বাচন কমিশনে এত নালিশ করছেন। এর থেকেই প্রমানিত দিদি আপনি হেরে গিয়েছেন।’
উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। এবার বাংলায় আট দফায় ভোট। একুশের লড়াইয়ে বাংলার কুর্সি কার হাতে থাকবে? এর উত্তর মিলবে আগামী ২ মে। ওই দিনই ভোটের ফল ঘোষণা।