নাম করে আক্রমণ,শুভেন্দুকে আইনি নোটিস অভিষেকের

0
956

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ১৯ ডিসেম্বর দুপুর। মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠ। অমিত শাহের মঞ্চে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। গেরুয়া পতাকার নীচে প্রথম বক্তৃতায় তাঁর আগ্রাসনের কী ভোল্টেজ ছিল সে সবাই দেখেছেন।সেদিন প্রথম তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল, তোলাবাজ ভাইপো হঠাও স্লোগান। তারপর পূর্বস্থলী, খড়দহ, দুর্গাপুর একের পর এক মিটিংয়ে শুভেন্দু বলেছেন, তোলাবাজ ভাইপো হঠাও।

তোলাবাজ ভাইপো’- বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নতুন জন্ম নেওয়া এই শব্দবন্ধনীতেই আবর্তিত হচ্ছে রাজ্য রাজনীতি। বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘ভাইপো’ আসলে কে, তা সবাই জানে। তৃণমূলের কটাক্ষ বুকের পাটা থাকলে নাম বলুন বিজেপি নেতারা। যাঁকে নিয়ে আলোড়ন, সেই তৃণমূল সাংসদ তথা যুব সভাপতি  অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘আমি প্রকাশ্যে বলছি, দিলীপ ঘোষ গুণ্ডা, কৈলাস বিজয়বর্গীয় বহিরাগত। ক্ষমতা থাকলে আমার নাম নিয়ে কথা বলুন।’ এরপরই সরাসরি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তোলাবাজ বলে সরাসরি আক্রমণ শানান বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। এরপরই বাবুলকে আইনি নোটিশ পাঠান অভিষেক। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল শুভেন্দু অধিকারীর নামও।

যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাতগাছিয়া থেকে গঙ্গারামপুরের সভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, বুকের পাটা নেই বলে নাম বলছে না। ভাইপো বললে তো আর মামলা করা যায় না!
দুদিন আগে খেজুরির হেঁড়িয়ার সভা থেকে প্রথমবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে তোলাবাজ বলে তোপ দেগেছিলেন বিজেপি নেতা। গতকাল চন্দননগরেও যুব তৃণমূল সভাপতির নাম করেছিলেন শুভেন্দু। আজ কেশপুরের ভিড়ে ঠাসা সভায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, “তোলাবাজ ভাইপো বলেছি বলে খুব গায়ে লেগেছে। আবার বলছে নাম নিচ্ছে না! এখন তো আমি নাম করে বলছি, কত কেস করবি কর!”

তারপরেই জানা গেল অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয় বসু শুভেন্দুকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। তাতে উল্লেখ রয়েছে খেজুরির সভা এবং একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলে সাক্ষাত্‍কারের কথা! আইনি নোটিসে লেখা রয়েছে, তাঁর মক্কেলের নাম গরু, কয়লা, বালি পাচারের সঙ্গে জুড়ে শুভেন্দু জনমানসে কালিমালিপ্ত করতে চাইছেন।


কয়েক সপ্তাহ আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কেও আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলেন অভিষেকের আইনজীবী। এবার শুভেন্দুকে।
গত কয়েকদিন ধরে শুভেন্দু যে সুতীক্ষ্ণ বাক্যবন্ধ ব্যবহার করছেন তা নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন। লালা, এনামুল, বিনয় মিশ্র, অঙ্কুশ অরোরা বিভিন্ন নাম করে হাটের মাঝে হাঁড়ি ভাঙতে চাইছেন প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী।
অনেকের মতে, নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার পরেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে শুভেন্দুকে নিয়ে কতটা ভাবছে তৃণমূল। এদিন আবার তাঁর সঙ্গে আইনি যুদ্ধ শুরু করলেন অভিষেক।

শুভেন্দুকে পাঠানো আইনি নোটিসে অভিষেকের আইনজীবী সারদা কাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেনের একটি চিঠির (বন্দির আবেদন) প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। একই সঙ্গে নারদ মামলারও প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেছেন, অভিযোগ আসলে আপনার বিরুদ্ধে রয়েছে। সেই কারণে তা ঢাকা দিতেই তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছেন।


নারদ প্রসঙ্গে শুভেন্দু অবশ্য সম্প্রতি জনসভাতেই বলেছেন, কোনটা নির্বাচনী চাঁদা নেওয়া আর কোনটা তোলা নেওয়া তা তদন্তকারি অফিসাররাই বুঝতে পারছে। শুধু তা নয়, নারদ কাণ্ডে যে আসলে কেডি সিংহের সঙ্গে যোগসাজস করে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, সেই অভিযোগ তুলেছেন তিনি। আর সুদীপ্ত সেনের ওই বিতর্কিত পিটিশন প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই সিবিআইকে চিঠি দিয়ে শুভেন্দু অভিযোগ করেছেন, সেটির জন্য পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হয়। কারণ, তাঁর সন্দেহ সুদীপ্ত সেনকে দিয়ে ওই চিঠি লেখানো হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির পক্ষ থেকে ‘ভাইপো’ বলে আক্রমণ করা হচ্ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শুভেন্দু দলে যোগ দেওয়ার পর সেই স্লোগান পাল্টে হয়েছে ‘তোলাবাজ ভাইপো’। অভিষেকের চ্যালেঞ্জের পর বিজেপির কয়েক জন নেতা তাঁর নাম করেও বলেছেন। কিন্তু এই প্রথম ‘তোলাবাজ ভাইপো’ বলায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আইনি নোটিস পাঠালেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক।

Previous articleনির্বাচনের কাজে নিয়োগ করা যাবে না সিভিকভলান্টিয়ার ও গ্রিন পুলিশদেরকে, জানিয়েছে কমিশন
Next articleলোকাল ট্রেনে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে গন্তব্যে পৌঁছবেন যাত্রীরা, পরিকল্পনা নিল পূর্বরেল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here